Dhaka ০৯:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৮ ঘণ্টার পথ শেষ হচ্ছে না ১৮ ঘণ্টাতেও

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:০৫:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫
  • 33

‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গাবতলী থেকে গাড়িতে উঠলাম। আজ সকাল সাড়ে দশটায় এসে মডার্ন মোড়ে নামলাম। টানা ১৮ ঘণ্টা গাড়িতে দাঁড়িয়ে, বসে কষ্ট করে এলাম। পুরো সড়কে শুধু জ্যাম আর জ্যাম। সাভার, বাইপাইল, নবীনগর, চন্দ্রা, এলেঙ্গা, যমুনা সেতু- ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকেছি। সেতুর এ প্রান্তে সিরাজগঞ্জ মোড়, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও শঠিবাড়ি এলাকাতেও যানজট ছিল। গরম ও যানজটে অনেক কষ্ট হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারছি, এটাই আনন্দ।’

টানা ১৮ ঘণ্টার ঈদযাত্রা শেষে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় এলাকায় এসে ট্রাক থেকে নেমে কথাগুলো বলছিলেন আব্দুল মমিন নামে এক যুবক। রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাটে এই যুবকের বাড়ি।

তিনি জানান, গাবতলীতে দ্বিগুন দামে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন তদারকি নেই। যে যার কাছে যেমন পাচ্ছে তেমন ভাড়া নিচ্ছে। দুই হাজার টাকা বাসের টিকেট, এ কারণে ট্রাকে পাঁচশ টাকা দিয়ে কষ্ট করে ঢাকা থেকে রংপুরে এসেছেন। আগে যেখানে আট থেকে নয় ঘণ্টা সময় লাগতো, সেখানে ১৮ ঘণ্টা সময়েও পুরো পথ শেষ হয়নি তার। মডার্ন মোড় থেকে তিনি সিএনজি অথবা অন্য কোনো বাহনে করে তারাগঞ্জে যাবেন।

ঈদ উদযাপন করতে আব্দুল মমিনের মতো রংপুর বিভাগের আট জেলার হাজারো মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। তাদের চোখে-মুখে প্রশান্তির ছাপ থাকলেও শরীরগুলো ক্লান্ত। ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও যে যেভাবে পারছেন বাস-ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ মোটরসাইকেলযোগে গ্রামে ফিরছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি আসছেন তারা।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুরের প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে অনেককেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। যেন ঈদযাত্রার শেষ দিনেও ভোগান্তির শেষ নেই।

যাত্রীরা বলছেন, তীব্র রোদে খোলা গাড়িতে করে ঈদযাত্রা কিছুটা কষ্টকর মনে হলেও সড়কে বড় ধরনের কোনো হয়রানি বা দুর্ঘটনা নেই। তবে এবারও মহাসড়কে যানজট, টিকেট সিন্ডিকেট, পথে পথে ভোগান্তিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টের শিকার হয়েছেন বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রংপুর বিভাগের উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসগুলোতে যাত্রী ভরপুর। বাস তো বটেই ট্রাক ও পিকআপভ্যানে জায়গা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য। ঢাকা থেকে রংপুরমুখী প্রতিটি যানবাহনেই রয়েছে যাত্রীর ভিড়। ঘরমুখো মানুষের চাপে যানবাহনের ছোট জায়গাও যেন হয়ে উঠেছে মূল্যবান। যাত্রীদের বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক ও নিম্নআয়ের মানুষ।

রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায় সাথে কথা হয় প্রকৌশলী সেলিম মিয়া নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি যানজট এড়াতে গাজীপুরের শ্রীপুর জৈনা বাজার থেকে এলেঙ্গা মোড় পর্যন্ত সিএনজিতে করে এসে রাইসা পরিবহন বাসে উঠেন। সেই বাসে বগুড়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে এসে বাস পরিবর্তন করে আরেকটি বাসে উঠে রংপুরে আসেন। চার ঘণ্টার এই পথে যানজটের কবলে পড়ে তাকে সড়কে অতিরিক্ত কয়েক ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানান তিনি।

প্রতিবারের মতো এবারও গাড়িভাড়া বেশি নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই তরুণ প্রকৌশলী। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে যাত্রাপথে ধুলোবালির কারণে একটু কষ্ট হয়েছে। মহাসড়কে এলেঙ্গা মোড় থেকে সেতু টোল প্লাজা এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যানজটে আটকা পড়তে হয়।

মডার্ন মোড়ে বাস থেকে নেমে গন্তব্যে যেতে রিকশায় চড়েন জহুরুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী। তিনি ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বাসে করে রংপুরে এসেছেন প্রায় ১৬ ঘণ্টায়। এজন্য তাকে ১৮০০ টাকা বাসভাড়া গুনতে হয়েছে।

জহুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবার ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে আয় রোজগার করছি। বছরে দুইবার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে আসি। গতবারের চেয়ে এবার কষ্টটা একটু বেশি মনে হলো। সড়কে সেনাবাহিনী-পুলিশ সবাই আছে, তারপরও তীব্র যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে।

সেলিম-জহুরুলের মতো অন্যদের কাছেও ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। সেই ঈদের আনন্দ পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ঈদ এলেই ছুটিতে বাড়ি যান তাদের মতো হাজারো কর্মমুখী মানুষ।

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকআপভ্যান ও ট্রাকে চড়ে রংপুর বিভাগের হাজারো নারী-পুরুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। শুধু ট্রাক বা পিকআপভ্যান নয় এ যাত্রায় বাহন হিসেবে রয়েছে বাস, মাইক্রোবাসসহ ছোট ছোট গণপরিবহনও।

এদিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে সাথে কথা হয় এসএম মনিরুজ্জামান নামে এক যাত্রীর। তিনি বলেন, গতকাল সকালে গাবতলী থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আজ ভোরে এসে পৌঁছলাম। দীর্ঘ যানজটে অনেকটা অসুস্থবোধ করছি। তিনি আরও বলেন, গাড়ি একবার থামলে যাওয়ার নাম গন্ধই নাই। ভাড়াও বেশি নেওয়া হয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবারো প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে বলেন অভিযোগ তার।

নাবিল পরিবহনের যাত্রী সুমন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে তিনি ঢাকার গাবতলী থেকে ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গীর উদ্দেশে রওনা দেন। যানজটের কারণে শুক্রবার বিকেল তিনটায় তিনি বাড়িতে পৌঁছান।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মুনসুর আলী স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে বাস না পেয়ে একটি খোলা পিকআপে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি বলেন, যানজটের কারণে ভোগান্তি দ্বিগুণ হয়েছে। একই কথা জানান রাজা। তিনি বলেন, ঈদের সময় তো বাড়ি আসতেই হবে। কিন্তু এভাবে খোলা গাড়িতে আসতে হবে এটা কল্পনাও করিনি।

গাইবান্ধায় যাত্রীদের ভোগান্তির খোঁজখবর নেয়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আসা যাত্রীরা তীব্র যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা পৌঁছতে কোথাও কোথাও সময় লাগছে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা।

রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার গাইবান্ধা। এ জেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে পলাশবাড়ী পর্যন্ত মাত্র ১৭ কিলোমিটার মহাসড়কে। এই অল্প পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা!

যাত্রীরা বলছেন, অতিরিক্ত যানবাহন, মহাসড়কের পাশে বসা পশুর হাট, বৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা এবং নির্মাণাধীন মহাসড়ক এই দুর্ভোগের মূল কারণ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা পুলিশ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও।

ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় ফেরা মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় গাবতলী থেকে রওনা দিয়েছিলাম। আজ (শুক্রবার) বেলা সাড়ে ১১টায় গাইবান্ধায় নেমেছি। সবমিলিয়ে সময় লেগেছে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। এখান থেকে আমার বাড়ি সুন্দরগঞ্জ যেতে আরও দুই ঘণ্টার বেশি লাগবে।

একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানান বাবুল শেখ নামের আরেক যাত্রী। তার ভাষায়, মহাখালী থেকে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাস ছাড়ে। সকাল ৭টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌঁছাই। এরপর গোবিন্দগঞ্জ থেকে পলাশবাড়ি পর্যন্ত মাত্র ১৭ কিলোমিটার পথে ৫ ঘণ্টা আটকে ছিলাম। স্ত্রী আর ছোট বাচ্চাকে নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়ার অভিযোগও এসেছে। ঢাকায় রাত ৯টায় বাসে উঠে গাইবান্ধা পৌঁছানো সুমন চন্দ্র বর্মন বলেন, ১৫ ঘণ্টা লেগেছে। ভাড়া দিয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণ।

কুড়িগ্রামের যাত্রীদেরও একই অভিযোগ। আজিমুল, রকি মিয়া ও শাহিন হোসেন নামে তিন পোশাক শ্রমিক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় রওনা দিয়েছি, শুক্রবার দুপুর ১২ টায় কুড়িগ্রামে পৌঁছেছি। টাঙ্গাইল বাইপাইল, সিরাজগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জে ভয়াবহ যানজট। এরকম যানজট গত ৭ বছরে দেখি নাই।

মর্জিনা বেগম বলেন, এবার রাস্তায় খুব যানজট। এতো গাড়ি আমার জীবনে দেখি নাই। প্রতি ঈদে বাড়িতে আসি ঈদের দুই দিন আগে। এবার তো যানজটে পড়ে শিক্ষা হয়ে গেল। টানা ১৬ ঘণ্টা বাসে বসে থেকে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

মডার্ন মোড়ে কথা হলে ট্রাকচালক মতিউর রহমান জানান, ঈদে তো এই ট্রিপ আমি নিতে চাই না। সবাই ধরলো। আর নিলে তো লাভ যদিও আসা লাগবে খালি। জনপ্রতি ৫শ থেকে ৮০০ টাকা করে নিচ্ছি। মালামাল থাকলে সেটা ফ্রি নিয়ে নেই।

এদিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর নগরীর মডার্ন মোড়ে দেখা যায়, বাস, ট্রাক ও পিকআপভ্যান থেকে ঘরমুখো মানুষ নামছেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসে মডার্ন মোড় নেমে অন্য বাসে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে যাচ্ছেন সেসব জেলার বাসিন্দারা।

ট্রাকে ঢাকা থেকে প্রায় ১৪ ঘণ্টা যাত্রা শেষে রংপুরে পৌঁছান জিকরুল ইসলাম। সঙ্গে তার এলাকার আরও কয়েকজন পোশাকশ্রমিক রয়েছে। জিকরুল বলেন, ঝুঁকি তো থাকেই। বাসের তুলনায় ট্রাকে ভাড়া কম কিন্তু কষ্ট বেশি। বাসের যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

সড়কে যানজট প্রসঙ্গে গাইবান্ধা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল আলম বাদশা বলেন, ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় ফিরতে এখন ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগছে। বিশেষ করে গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ি অংশে দুর্ভোগ বেশি। অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, অস্থায়ী পশুর হাট, বৃষ্টির কারণে ভেজা রাস্তা এবং নির্মাণাধীন সড়কে জমে থাকা পানিই এই যানজটের প্রধান কারণ।

গাইবান্ধা জেলা ট্রাফিক বিভাগের ইনস্পেক্টর (টিআই) জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ি। মহাসড়কে তিন লেনের যানবাহন দুই লেনে চলায় জট তৈরি হচ্ছে। যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।

এদিকে ঈদে ঘরে ফেরার দীর্ঘ যাত্রাপথে অসুস্থ হওয়া যাত্রীদের সেবা দিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। ঘরমুখো যাত্রীদের সমস্যা ও ভোগান্তি কমাতে মডার্ন মোড়ে অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র স্থাপন করার পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সও। এই সেবা ঈদের পরবর্তী সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে জেলা র‍্যাব ও পুলিশ।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষেরা অনেক সময় পথে বিপদগ্রস্ত হন। তাদের সাহায্য করার মতো কেউ থাকে না। তবে এখন র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। এ ছাড়া চিকিৎসা সহায়তার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে

তিনি আরও বলেন, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাতে না হয়, সে জন্য সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যানজট সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাইওয়ে পুলিশ রংপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর-দশমাইল-বাংলাবান্ধা ২৫০ কিলোমিটার মহাসড়কটি যানজট ও অপরাধমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গোবিন্দগঞ্জ, বড়দরগা এবং তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা এলাকায় ৮টি দুর্ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০-১২ জন।

এসপি তারিকুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে জরুরি প্রয়োজনে সেবা দিতে ‘হ্যালো এইচপি’ অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপে জরুরি সাহায্য বাটন চেপে মহাসড়কে যে কোনো পরিস্থিতিতে হাইওয়ে পুলিশের নিকটবর্তী টহল টিমের সাথে সয়ংক্রিয়ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। এছাড়া মহাসড়কে যানজট, বিকল্প রাস্তা, ভাড়ার তালিকা, টোলের হারসহ নানা তথ্য পাচ্ছেন অ্যাপ ব্যবহারকারীরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

৮ ঘণ্টার পথ শেষ হচ্ছে না ১৮ ঘণ্টাতেও

Update Time : ১২:০৫:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫

‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গাবতলী থেকে গাড়িতে উঠলাম। আজ সকাল সাড়ে দশটায় এসে মডার্ন মোড়ে নামলাম। টানা ১৮ ঘণ্টা গাড়িতে দাঁড়িয়ে, বসে কষ্ট করে এলাম। পুরো সড়কে শুধু জ্যাম আর জ্যাম। সাভার, বাইপাইল, নবীনগর, চন্দ্রা, এলেঙ্গা, যমুনা সেতু- ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকেছি। সেতুর এ প্রান্তে সিরাজগঞ্জ মোড়, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও শঠিবাড়ি এলাকাতেও যানজট ছিল। গরম ও যানজটে অনেক কষ্ট হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারছি, এটাই আনন্দ।’

টানা ১৮ ঘণ্টার ঈদযাত্রা শেষে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড় এলাকায় এসে ট্রাক থেকে নেমে কথাগুলো বলছিলেন আব্দুল মমিন নামে এক যুবক। রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাটে এই যুবকের বাড়ি।

তিনি জানান, গাবতলীতে দ্বিগুন দামে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন তদারকি নেই। যে যার কাছে যেমন পাচ্ছে তেমন ভাড়া নিচ্ছে। দুই হাজার টাকা বাসের টিকেট, এ কারণে ট্রাকে পাঁচশ টাকা দিয়ে কষ্ট করে ঢাকা থেকে রংপুরে এসেছেন। আগে যেখানে আট থেকে নয় ঘণ্টা সময় লাগতো, সেখানে ১৮ ঘণ্টা সময়েও পুরো পথ শেষ হয়নি তার। মডার্ন মোড় থেকে তিনি সিএনজি অথবা অন্য কোনো বাহনে করে তারাগঞ্জে যাবেন।

ঈদ উদযাপন করতে আব্দুল মমিনের মতো রংপুর বিভাগের আট জেলার হাজারো মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন। তাদের চোখে-মুখে প্রশান্তির ছাপ থাকলেও শরীরগুলো ক্লান্ত। ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও যে যেভাবে পারছেন বাস-ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ মোটরসাইকেলযোগে গ্রামে ফিরছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কিংবা বসে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি আসছেন তারা।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুরের প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে অনেককেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। যেন ঈদযাত্রার শেষ দিনেও ভোগান্তির শেষ নেই।

যাত্রীরা বলছেন, তীব্র রোদে খোলা গাড়িতে করে ঈদযাত্রা কিছুটা কষ্টকর মনে হলেও সড়কে বড় ধরনের কোনো হয়রানি বা দুর্ঘটনা নেই। তবে এবারও মহাসড়কে যানজট, টিকেট সিন্ডিকেট, পথে পথে ভোগান্তিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টের শিকার হয়েছেন বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রংপুর বিভাগের উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসগুলোতে যাত্রী ভরপুর। বাস তো বটেই ট্রাক ও পিকআপভ্যানে জায়গা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য। ঢাকা থেকে রংপুরমুখী প্রতিটি যানবাহনেই রয়েছে যাত্রীর ভিড়। ঘরমুখো মানুষের চাপে যানবাহনের ছোট জায়গাও যেন হয়ে উঠেছে মূল্যবান। যাত্রীদের বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক ও নিম্নআয়ের মানুষ।

রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায় সাথে কথা হয় প্রকৌশলী সেলিম মিয়া নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি যানজট এড়াতে গাজীপুরের শ্রীপুর জৈনা বাজার থেকে এলেঙ্গা মোড় পর্যন্ত সিএনজিতে করে এসে রাইসা পরিবহন বাসে উঠেন। সেই বাসে বগুড়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে এসে বাস পরিবর্তন করে আরেকটি বাসে উঠে রংপুরে আসেন। চার ঘণ্টার এই পথে যানজটের কবলে পড়ে তাকে সড়কে অতিরিক্ত কয়েক ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানান তিনি।

প্রতিবারের মতো এবারও গাড়িভাড়া বেশি নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই তরুণ প্রকৌশলী। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে যাত্রাপথে ধুলোবালির কারণে একটু কষ্ট হয়েছে। মহাসড়কে এলেঙ্গা মোড় থেকে সেতু টোল প্লাজা এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যানজটে আটকা পড়তে হয়।

মডার্ন মোড়ে বাস থেকে নেমে গন্তব্যে যেতে রিকশায় চড়েন জহুরুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী। তিনি ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বাসে করে রংপুরে এসেছেন প্রায় ১৬ ঘণ্টায়। এজন্য তাকে ১৮০০ টাকা বাসভাড়া গুনতে হয়েছে।

জহুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবার ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে আয় রোজগার করছি। বছরে দুইবার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে আসি। গতবারের চেয়ে এবার কষ্টটা একটু বেশি মনে হলো। সড়কে সেনাবাহিনী-পুলিশ সবাই আছে, তারপরও তীব্র যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে।

সেলিম-জহুরুলের মতো অন্যদের কাছেও ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। সেই ঈদের আনন্দ পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ঈদ এলেই ছুটিতে বাড়ি যান তাদের মতো হাজারো কর্মমুখী মানুষ।

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকআপভ্যান ও ট্রাকে চড়ে রংপুর বিভাগের হাজারো নারী-পুরুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। শুধু ট্রাক বা পিকআপভ্যান নয় এ যাত্রায় বাহন হিসেবে রয়েছে বাস, মাইক্রোবাসসহ ছোট ছোট গণপরিবহনও।

এদিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে সাথে কথা হয় এসএম মনিরুজ্জামান নামে এক যাত্রীর। তিনি বলেন, গতকাল সকালে গাবতলী থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আজ ভোরে এসে পৌঁছলাম। দীর্ঘ যানজটে অনেকটা অসুস্থবোধ করছি। তিনি আরও বলেন, গাড়ি একবার থামলে যাওয়ার নাম গন্ধই নাই। ভাড়াও বেশি নেওয়া হয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবারো প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে বলেন অভিযোগ তার।

নাবিল পরিবহনের যাত্রী সুমন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে তিনি ঢাকার গাবতলী থেকে ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গীর উদ্দেশে রওনা দেন। যানজটের কারণে শুক্রবার বিকেল তিনটায় তিনি বাড়িতে পৌঁছান।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মুনসুর আলী স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে বাস না পেয়ে একটি খোলা পিকআপে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি বলেন, যানজটের কারণে ভোগান্তি দ্বিগুণ হয়েছে। একই কথা জানান রাজা। তিনি বলেন, ঈদের সময় তো বাড়ি আসতেই হবে। কিন্তু এভাবে খোলা গাড়িতে আসতে হবে এটা কল্পনাও করিনি।

গাইবান্ধায় যাত্রীদের ভোগান্তির খোঁজখবর নেয়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আসা যাত্রীরা তীব্র যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা পৌঁছতে কোথাও কোথাও সময় লাগছে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা।

রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার গাইবান্ধা। এ জেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে পলাশবাড়ী পর্যন্ত মাত্র ১৭ কিলোমিটার মহাসড়কে। এই অল্প পথ পাড়ি দিতে যাত্রীদের সময় লাগছে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা!

যাত্রীরা বলছেন, অতিরিক্ত যানবাহন, মহাসড়কের পাশে বসা পশুর হাট, বৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা এবং নির্মাণাধীন মহাসড়ক এই দুর্ভোগের মূল কারণ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা পুলিশ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও।

ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় ফেরা মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় গাবতলী থেকে রওনা দিয়েছিলাম। আজ (শুক্রবার) বেলা সাড়ে ১১টায় গাইবান্ধায় নেমেছি। সবমিলিয়ে সময় লেগেছে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। এখান থেকে আমার বাড়ি সুন্দরগঞ্জ যেতে আরও দুই ঘণ্টার বেশি লাগবে।

একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানান বাবুল শেখ নামের আরেক যাত্রী। তার ভাষায়, মহাখালী থেকে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাস ছাড়ে। সকাল ৭টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌঁছাই। এরপর গোবিন্দগঞ্জ থেকে পলাশবাড়ি পর্যন্ত মাত্র ১৭ কিলোমিটার পথে ৫ ঘণ্টা আটকে ছিলাম। স্ত্রী আর ছোট বাচ্চাকে নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়ার অভিযোগও এসেছে। ঢাকায় রাত ৯টায় বাসে উঠে গাইবান্ধা পৌঁছানো সুমন চন্দ্র বর্মন বলেন, ১৫ ঘণ্টা লেগেছে। ভাড়া দিয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা, যা স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণ।

কুড়িগ্রামের যাত্রীদেরও একই অভিযোগ। আজিমুল, রকি মিয়া ও শাহিন হোসেন নামে তিন পোশাক শ্রমিক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় রওনা দিয়েছি, শুক্রবার দুপুর ১২ টায় কুড়িগ্রামে পৌঁছেছি। টাঙ্গাইল বাইপাইল, সিরাজগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জে ভয়াবহ যানজট। এরকম যানজট গত ৭ বছরে দেখি নাই।

মর্জিনা বেগম বলেন, এবার রাস্তায় খুব যানজট। এতো গাড়ি আমার জীবনে দেখি নাই। প্রতি ঈদে বাড়িতে আসি ঈদের দুই দিন আগে। এবার তো যানজটে পড়ে শিক্ষা হয়ে গেল। টানা ১৬ ঘণ্টা বাসে বসে থেকে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

মডার্ন মোড়ে কথা হলে ট্রাকচালক মতিউর রহমান জানান, ঈদে তো এই ট্রিপ আমি নিতে চাই না। সবাই ধরলো। আর নিলে তো লাভ যদিও আসা লাগবে খালি। জনপ্রতি ৫শ থেকে ৮০০ টাকা করে নিচ্ছি। মালামাল থাকলে সেটা ফ্রি নিয়ে নেই।

এদিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর নগরীর মডার্ন মোড়ে দেখা যায়, বাস, ট্রাক ও পিকআপভ্যান থেকে ঘরমুখো মানুষ নামছেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসে মডার্ন মোড় নেমে অন্য বাসে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে যাচ্ছেন সেসব জেলার বাসিন্দারা।

ট্রাকে ঢাকা থেকে প্রায় ১৪ ঘণ্টা যাত্রা শেষে রংপুরে পৌঁছান জিকরুল ইসলাম। সঙ্গে তার এলাকার আরও কয়েকজন পোশাকশ্রমিক রয়েছে। জিকরুল বলেন, ঝুঁকি তো থাকেই। বাসের তুলনায় ট্রাকে ভাড়া কম কিন্তু কষ্ট বেশি। বাসের যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

সড়কে যানজট প্রসঙ্গে গাইবান্ধা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল আলম বাদশা বলেন, ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় ফিরতে এখন ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগছে। বিশেষ করে গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ি অংশে দুর্ভোগ বেশি। অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, অস্থায়ী পশুর হাট, বৃষ্টির কারণে ভেজা রাস্তা এবং নির্মাণাধীন সড়কে জমে থাকা পানিই এই যানজটের প্রধান কারণ।

গাইবান্ধা জেলা ট্রাফিক বিভাগের ইনস্পেক্টর (টিআই) জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ি। মহাসড়কে তিন লেনের যানবাহন দুই লেনে চলায় জট তৈরি হচ্ছে। যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।

এদিকে ঈদে ঘরে ফেরার দীর্ঘ যাত্রাপথে অসুস্থ হওয়া যাত্রীদের সেবা দিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ দিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। ঘরমুখো যাত্রীদের সমস্যা ও ভোগান্তি কমাতে মডার্ন মোড়ে অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র স্থাপন করার পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সও। এই সেবা ঈদের পরবর্তী সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে জেলা র‍্যাব ও পুলিশ।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষেরা অনেক সময় পথে বিপদগ্রস্ত হন। তাদের সাহায্য করার মতো কেউ থাকে না। তবে এখন র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত। এ ছাড়া চিকিৎসা সহায়তার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে

তিনি আরও বলেন, রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাতে না হয়, সে জন্য সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যানজট সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাইওয়ে পুলিশ রংপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর-দশমাইল-বাংলাবান্ধা ২৫০ কিলোমিটার মহাসড়কটি যানজট ও অপরাধমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গোবিন্দগঞ্জ, বড়দরগা এবং তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা এলাকায় ৮টি দুর্ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০-১২ জন।

এসপি তারিকুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে জরুরি প্রয়োজনে সেবা দিতে ‘হ্যালো এইচপি’ অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপে জরুরি সাহায্য বাটন চেপে মহাসড়কে যে কোনো পরিস্থিতিতে হাইওয়ে পুলিশের নিকটবর্তী টহল টিমের সাথে সয়ংক্রিয়ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে। এছাড়া মহাসড়কে যানজট, বিকল্প রাস্তা, ভাড়ার তালিকা, টোলের হারসহ নানা তথ্য পাচ্ছেন অ্যাপ ব্যবহারকারীরা।