Dhaka ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৌদিতে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ালো ইসি সংস্কার না করে কোনো নির্বাচনেই ভালো ফল পাওয়া যাবে না : কমিশন প্রধান ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস, বাড়বে গরমের অনুভূতি জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় টেকসই কর্মসূচি বাড়ানো হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা রাজনৈতিক পর্যায়ে সার্কের অগ্রগতি হয়নি : নেপালের রাষ্ট্রদূত শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ১৯১ রানেই অলআউট টাইগাররা প্রধান উপদেষ্টা কাতার সফরে যাচ্ছেন সোমবার

স্ত্রীর গর্ভের সন্তান ছেলে কি-না, তা দেখতে চেয়েই স্বামী তার স্ত্রীর পেট কাটলো

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৪২:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • ৯৫ Time View

এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বামী কাস্তে দিয়ে তার স্ত্রীর পেট কেটে দেবার পর ওই নারী মৃত ছেলে সন্তান প্রসব করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে। নারীর পরিবার অভিযোগ করেছে, স্ত্রীর গর্ভের সন্তান ছেলে কি-না, তা দেখতে চেয়েই স্বামী তার স্ত্রীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

এই দম্পতির এরই মধ্যে পাঁচটি কন্যা সন্তান রয়েছে এবং পরিবার বলছে যে একটি পুত্র সন্তানের জন্য স্বামী ওই নারীর ওপর চাপ দিচ্ছিল। পুরুষটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি স্ত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার কথা অস্বীকার করে বলেছেন যে এটা ছিল একটি দুর্ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের বাদাউন জেলায়।

পুলিশে একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে ওই নারী রাজধানী দিল্লিতে হাসপাতালে রয়েছেন এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল। ওই নারীর বোন বলেন, তার বোন ও বোনের স্বামীর মধ্যে ছেলে সন্তান নিয়ে নিয়মিত ঝগড়া হতো।

তার ভাই জানাচ্ছেন, হামলার পর ওই নারীর অবস্থা খুবই আশংকাজনক হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে তাকে রোববার দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামী দাবি করছেন যে তিনি তার স্ত্রীর ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালাননি। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, তিনি কাস্তেটা তার স্ত্রীর দিকে ছুঁড়েছিলেন, কিন্তু বুঝতে পারেননি যে সেটি তার পেটে গিয়ে লাগবে এবং স্ত্রী গুরুতর আহত হবে।

”আমার পাঁচটা মেয়ে সন্তান আছে। একটা ছেলে মারা গেল। আমি জানি সন্তান ঈশ্বরের দান। এখন যা হবার সেটাই হবে।” পুলিশ এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে।

ভারতীয় দম্পতিদের মধ্যে ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষার ফলে দেশটিতে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। সংখ্যার অনুপাতে মেয়ের তুলনায় ছেলে বেশি ভারতে।জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বা ইউএনএফপিএ-র জুন মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে ভারতে প্রায় চার কোটি ৬০ লাখ মেয়ে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে।

প্রতি বছর দেশটিতে গর্ভপাত ঘটিয়ে ৪৬ লাখ কন্যা ভ্রূণ নষ্ট করে ফেলা হয় এবং জন্মের পর কন্যা শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করার কারণে জন্মের পর কন্যা শিশুমৃত্যুর হার খুবই বেশি।

ভারত সরকারের ২০১৮ সালে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলে সন্তান চেয়ে মেয়ে হয়েছে এমন ”অবাঞ্ছিত” মেয়ে শিশুর সংখ্যা দুই কোটি ১০ লাখ। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা ওই রিপোর্টে দেখা যায় যে বহু দম্পতি একটি ছেলে সন্তান না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চা নিতেই থাকে।

ভারতীয় নারী ও সমাজ বিষয়ক সম্পাদক গীতা পাণ্ডে বলছেন ভারতীয় সমাজে পুত্র সন্তানের প্রতি পক্ষপাত দীর্ঘদিনের একটা সংস্কৃতি।

তিনি বলেন, পরিবারগুলোর এখনও বিশ্বাস যে ছেলে সন্তান পরিবারকে আর্থিকভাবে দেখবে, বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মার দেখাশোনা করবে এবং বংশ পরিচয় বাঁচিয়ে রাখবে। অন্যদিকে, মেয়েরা বিয়ে করে পরের বাড়ি চলে যাবে এবং তার সাথে সাথে বাবা-মাকে মেয়ের বিয়ের সময় বিশাল যৌতুকের বোঝা বইতে হবে।

নারীর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় এবং ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষা সমাজে এত প্রবল হবার কারণে ভারতে গত কয়েক বছরে নারী-পুরুষ সংখ্যার অনুপাত ব্যাপকভাবে ওলট-পালট হয়ে গেছে। কয়েক কোটি কন্যাকে হত্যা করা হয়েছে – হয় গর্ভে থাকা অবস্থায় গর্ভপাত করে ভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে, নয়তো জন্মের পর মেয়েদের ইচ্ছা করে অবহেলা করে মেরে ফেলা হয়েছে।

গীতা পাণ্ডে বলছেন, ১৯৬১ সালে ভারতে সাত বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি ১০০০ ছেলে শিশুর বিপরীতে ছিল ৯৭৬টি মেয়ে শিশু। ২০১১ সালে চালানো সর্বশেষ আদম শুমারীতে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯১৪, অর্থাৎ মেয়ের সংখ্যা আরও কমেছে।

এ বিষয় নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তারা এটাকে “গণহত্যা” বলে থাকেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই কন্যা ভ্রূণ-হত্যা এবং শিশু-হত্যার সংস্কৃতিকে দেশের জন্য “জাতীয় লজ্জা” বলে বর্ণনা করেছিলেন এবং মেয়েদের বাঁচাতে একটা “জিহাদের” ডাক দিয়েছিলেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও “ছেলে চাই” এই মনোভাব বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন এবং “পুত্র সন্তানের আশায় কন্যা সন্তানকে হত্যা না করার” কথা বলেছেন। পাঁচ বছর আগে তিনি ”বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও” উদ্যোগও চালু করেছিলেন।

কিন্তু গীতা পাণ্ডে বলছেন, এসব কোন উদ্যোগই আসলে কাজ করেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ছেলে-মেয়ে- থেকে-বেশি-আকাঙ্ক্ষিত — সমাজের এই মনোভাব যতদিন না দূর হবে, যতদিন সমাজ মেয়ে সন্তানকে ছেলে সন্তানের মত একই দৃষ্টিতে দেখার মানসিকতা অর্জন না করবে, ততদিন ভারতীয় সমাজে মেয়েরা এভাবেই অবহেলা, বঞ্চনা ও মৃত্যুর শিকার হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

স্ত্রীর গর্ভের সন্তান ছেলে কি-না, তা দেখতে চেয়েই স্বামী তার স্ত্রীর পেট কাটলো

Update Time : ০৩:৪২:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বামী কাস্তে দিয়ে তার স্ত্রীর পেট কেটে দেবার পর ওই নারী মৃত ছেলে সন্তান প্রসব করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে। নারীর পরিবার অভিযোগ করেছে, স্ত্রীর গর্ভের সন্তান ছেলে কি-না, তা দেখতে চেয়েই স্বামী তার স্ত্রীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

এই দম্পতির এরই মধ্যে পাঁচটি কন্যা সন্তান রয়েছে এবং পরিবার বলছে যে একটি পুত্র সন্তানের জন্য স্বামী ওই নারীর ওপর চাপ দিচ্ছিল। পুরুষটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি স্ত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার কথা অস্বীকার করে বলেছেন যে এটা ছিল একটি দুর্ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের বাদাউন জেলায়।

পুলিশে একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে ওই নারী রাজধানী দিল্লিতে হাসপাতালে রয়েছেন এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল। ওই নারীর বোন বলেন, তার বোন ও বোনের স্বামীর মধ্যে ছেলে সন্তান নিয়ে নিয়মিত ঝগড়া হতো।

তার ভাই জানাচ্ছেন, হামলার পর ওই নারীর অবস্থা খুবই আশংকাজনক হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে তাকে রোববার দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামী দাবি করছেন যে তিনি তার স্ত্রীর ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে হামলা চালাননি। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, তিনি কাস্তেটা তার স্ত্রীর দিকে ছুঁড়েছিলেন, কিন্তু বুঝতে পারেননি যে সেটি তার পেটে গিয়ে লাগবে এবং স্ত্রী গুরুতর আহত হবে।

”আমার পাঁচটা মেয়ে সন্তান আছে। একটা ছেলে মারা গেল। আমি জানি সন্তান ঈশ্বরের দান। এখন যা হবার সেটাই হবে।” পুলিশ এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে।

ভারতীয় দম্পতিদের মধ্যে ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষার ফলে দেশটিতে নারী ও পুরুষের সংখ্যায় ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। সংখ্যার অনুপাতে মেয়ের তুলনায় ছেলে বেশি ভারতে।জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বা ইউএনএফপিএ-র জুন মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ৫০ বছরে ভারতে প্রায় চার কোটি ৬০ লাখ মেয়ে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে।

প্রতি বছর দেশটিতে গর্ভপাত ঘটিয়ে ৪৬ লাখ কন্যা ভ্রূণ নষ্ট করে ফেলা হয় এবং জন্মের পর কন্যা শিশুদের ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করার কারণে জন্মের পর কন্যা শিশুমৃত্যুর হার খুবই বেশি।

ভারত সরকারের ২০১৮ সালে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলে সন্তান চেয়ে মেয়ে হয়েছে এমন ”অবাঞ্ছিত” মেয়ে শিশুর সংখ্যা দুই কোটি ১০ লাখ। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা ওই রিপোর্টে দেখা যায় যে বহু দম্পতি একটি ছেলে সন্তান না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চা নিতেই থাকে।

ভারতীয় নারী ও সমাজ বিষয়ক সম্পাদক গীতা পাণ্ডে বলছেন ভারতীয় সমাজে পুত্র সন্তানের প্রতি পক্ষপাত দীর্ঘদিনের একটা সংস্কৃতি।

তিনি বলেন, পরিবারগুলোর এখনও বিশ্বাস যে ছেলে সন্তান পরিবারকে আর্থিকভাবে দেখবে, বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মার দেখাশোনা করবে এবং বংশ পরিচয় বাঁচিয়ে রাখবে। অন্যদিকে, মেয়েরা বিয়ে করে পরের বাড়ি চলে যাবে এবং তার সাথে সাথে বাবা-মাকে মেয়ের বিয়ের সময় বিশাল যৌতুকের বোঝা বইতে হবে।

নারীর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় এবং ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষা সমাজে এত প্রবল হবার কারণে ভারতে গত কয়েক বছরে নারী-পুরুষ সংখ্যার অনুপাত ব্যাপকভাবে ওলট-পালট হয়ে গেছে। কয়েক কোটি কন্যাকে হত্যা করা হয়েছে – হয় গর্ভে থাকা অবস্থায় গর্ভপাত করে ভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে, নয়তো জন্মের পর মেয়েদের ইচ্ছা করে অবহেলা করে মেরে ফেলা হয়েছে।

গীতা পাণ্ডে বলছেন, ১৯৬১ সালে ভারতে সাত বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি ১০০০ ছেলে শিশুর বিপরীতে ছিল ৯৭৬টি মেয়ে শিশু। ২০১১ সালে চালানো সর্বশেষ আদম শুমারীতে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯১৪, অর্থাৎ মেয়ের সংখ্যা আরও কমেছে।

এ বিষয় নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন, তারা এটাকে “গণহত্যা” বলে থাকেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই কন্যা ভ্রূণ-হত্যা এবং শিশু-হত্যার সংস্কৃতিকে দেশের জন্য “জাতীয় লজ্জা” বলে বর্ণনা করেছিলেন এবং মেয়েদের বাঁচাতে একটা “জিহাদের” ডাক দিয়েছিলেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও “ছেলে চাই” এই মনোভাব বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন এবং “পুত্র সন্তানের আশায় কন্যা সন্তানকে হত্যা না করার” কথা বলেছেন। পাঁচ বছর আগে তিনি ”বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও” উদ্যোগও চালু করেছিলেন।

কিন্তু গীতা পাণ্ডে বলছেন, এসব কোন উদ্যোগই আসলে কাজ করেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে ছেলে-মেয়ে- থেকে-বেশি-আকাঙ্ক্ষিত — সমাজের এই মনোভাব যতদিন না দূর হবে, যতদিন সমাজ মেয়ে সন্তানকে ছেলে সন্তানের মত একই দৃষ্টিতে দেখার মানসিকতা অর্জন না করবে, ততদিন ভারতীয় সমাজে মেয়েরা এভাবেই অবহেলা, বঞ্চনা ও মৃত্যুর শিকার হবে।