Dhaka ০৫:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাজারো জনতার বিক্ষোভ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:২৮:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • ১২ Time View

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজারো মানুষ। মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক কিছু নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ৫০টি অঙ্গরাজ্যে হাজার হাজার মানুষ একযোগে রাস্তায় নেমে আসেন।

এই বিক্ষোভকে “স্বাধীনতার জন্য নতুন লড়াই” বলছেন প্রতিবাদকারীরা। এদিকে জনমত জরিপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে। রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের হাজারো মানুষ একযোগে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। আন্দোলনটির নাম ছিল “৫০৫০১”— অর্থাৎ ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫০টি প্রতিবাদ, একটাই আন্দোলন।

এই কর্মসূচি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর ২৫০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে আয়োজন করা হয়। তাই অনেক প্রতিবাদকারী বিক্ষোভের সময় “নো কিংস” (No Kings) লেখা পোস্টার হাতে রেখেছিলেন, যেটি ইংরেজ রাজতন্ত্রবিরোধী আমেরিকান বিপ্লবের প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এদিনের বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল অভিবাসন ও সরকারি ব্যয়ের কাটছাঁটের ইস্যুটি। হোয়াইট হাউসের সামনেসহ উত্তর আমেরিকার এই দেশটির বহু শহরের কেন্দ্রস্থলে, এমনকি কিছু টেসলা শোরুমের সামনেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। নানা দাবির ভিড়ে সবচেয়ে বেশি উঠে আসে কিলমার আবরেগো গার্সিয়া নামে এক ব্যক্তির ফেরত আনার দাবি।

মূলত গার্সিয়া একজন মার্কিন অভিবাসী যাকে ভুলবশত এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তার সমর্থনে এদিনের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন গিহাদ এলজেন্দি নামে এক বিক্ষোভকারী। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে তিনি বলেন, “ট্রাম্প চাইলে এল সালভাদরের ওপর চাপ দিয়ে গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন।”

প্রতিবাদকারীরা “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই)” নামক ট্রাম্প প্রশাসনের এক প্রকল্পের বিরুদ্ধেও কথা বলেন। সরকারি ব্যয় এবং চাকরি কমানোর উদ্দেশ্যে এই সংস্থাটি তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপকে অনেকেই গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।

এদিকে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ হলেও কিছু জায়গায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এক ঘটনায় ডেমোক্র্যট কংগ্রেসম্যান সুহাস সুব্রামানিয়াম এক ট্রাম্প-সমর্থকের সাথে তর্কে জড়ান, যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

“স্বাধীনতার চেতনা” আবারও জেগে উঠছে বলে মন্তব্য করছেন বিক্ষোভকারীরা। ম্যাসাচুসেটসের লেক্সিংটন ও কনকর্ড যুদ্ধের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে ৫০৫০১ বিক্ষোভের ঢেউ। সেখানে টমাস ব্যাসফোর্ড নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, “এটি আমাদের স্বাধীনতার জন্য আরেকটা কঠিন সময়। আমি আমার নাতিদের শেখাতে চেয়েছি—এই দেশ কিভাবে গড়ে উঠেছিল এবং কখনও কখনও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতেই হয়।”

এদিকে জনমত জরিপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে। গ্যালাপের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে, যেখানে গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশ। একই সময়ে ১৯৫২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত যেকোনও প্রেসিডেন্টের গড় প্রথম কোয়ার্টার জনপ্রিয়তা ছিল ৬০ শতাংশ।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে জনগণের সন্তুষ্টি আরও কমেছে। রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৭ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পছন্দ করছেন, যেখানে জানুয়ারিতে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।

অবশ্য শনিবারের এই বিক্ষোভকে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ বলে মনে করা হচ্ছে না। কারণ চলতি এপ্রিলের শুরুতে “হ্যান্ডস অফ” (Hands Off) শিরোনামে আরও বৃহত্তর একটি প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১২০০টি স্থানে, ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেটিকেই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাজারো জনতার বিক্ষোভ

Update Time : ০৩:২৮:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজারো মানুষ। মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক কিছু নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ৫০টি অঙ্গরাজ্যে হাজার হাজার মানুষ একযোগে রাস্তায় নেমে আসেন।

এই বিক্ষোভকে “স্বাধীনতার জন্য নতুন লড়াই” বলছেন প্রতিবাদকারীরা। এদিকে জনমত জরিপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে। রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, স্থানীয় সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের হাজারো মানুষ একযোগে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। আন্দোলনটির নাম ছিল “৫০৫০১”— অর্থাৎ ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫০টি প্রতিবাদ, একটাই আন্দোলন।

এই কর্মসূচি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর ২৫০তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলিয়ে আয়োজন করা হয়। তাই অনেক প্রতিবাদকারী বিক্ষোভের সময় “নো কিংস” (No Kings) লেখা পোস্টার হাতে রেখেছিলেন, যেটি ইংরেজ রাজতন্ত্রবিরোধী আমেরিকান বিপ্লবের প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এদিনের বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল অভিবাসন ও সরকারি ব্যয়ের কাটছাঁটের ইস্যুটি। হোয়াইট হাউসের সামনেসহ উত্তর আমেরিকার এই দেশটির বহু শহরের কেন্দ্রস্থলে, এমনকি কিছু টেসলা শোরুমের সামনেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। নানা দাবির ভিড়ে সবচেয়ে বেশি উঠে আসে কিলমার আবরেগো গার্সিয়া নামে এক ব্যক্তির ফেরত আনার দাবি।

মূলত গার্সিয়া একজন মার্কিন অভিবাসী যাকে ভুলবশত এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তার সমর্থনে এদিনের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন গিহাদ এলজেন্দি নামে এক বিক্ষোভকারী। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে তিনি বলেন, “ট্রাম্প চাইলে এল সালভাদরের ওপর চাপ দিয়ে গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন।”

প্রতিবাদকারীরা “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডিওজিই)” নামক ট্রাম্প প্রশাসনের এক প্রকল্পের বিরুদ্ধেও কথা বলেন। সরকারি ব্যয় এবং চাকরি কমানোর উদ্দেশ্যে এই সংস্থাটি তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপকে অনেকেই গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।

এদিকে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ হলেও কিছু জায়গায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এক ঘটনায় ডেমোক্র্যট কংগ্রেসম্যান সুহাস সুব্রামানিয়াম এক ট্রাম্প-সমর্থকের সাথে তর্কে জড়ান, যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

“স্বাধীনতার চেতনা” আবারও জেগে উঠছে বলে মন্তব্য করছেন বিক্ষোভকারীরা। ম্যাসাচুসেটসের লেক্সিংটন ও কনকর্ড যুদ্ধের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে ৫০৫০১ বিক্ষোভের ঢেউ। সেখানে টমাস ব্যাসফোর্ড নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, “এটি আমাদের স্বাধীনতার জন্য আরেকটা কঠিন সময়। আমি আমার নাতিদের শেখাতে চেয়েছি—এই দেশ কিভাবে গড়ে উঠেছিল এবং কখনও কখনও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতেই হয়।”

এদিকে জনমত জরিপে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে। গ্যালাপের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে, যেখানে গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে এই হার ছিল ৪৭ শতাংশ। একই সময়ে ১৯৫২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত যেকোনও প্রেসিডেন্টের গড় প্রথম কোয়ার্টার জনপ্রিয়তা ছিল ৬০ শতাংশ।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে জনগণের সন্তুষ্টি আরও কমেছে। রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৭ শতাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পছন্দ করছেন, যেখানে জানুয়ারিতে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।

অবশ্য শনিবারের এই বিক্ষোভকে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ বলে মনে করা হচ্ছে না। কারণ চলতি এপ্রিলের শুরুতে “হ্যান্ডস অফ” (Hands Off) শিরোনামে আরও বৃহত্তর একটি প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১২০০টি স্থানে, ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেটিকেই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।