Dhaka ০৫:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিম তীর সফরের অনুমতি দিল না ইসরায়েল

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • ১১ Time View

ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফাকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের কয়েকটি ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রাম পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এসব শহর ও গ্রাম বারবারই অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে আসছে।

এই ঘটনাটিকে “বিপজ্জনক নজির” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা। রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা-কে দখলকৃত পশ্চিম তীরের কয়েকটি গ্রাম ও শহর সফরের অনুমতি দেয়নি—যেখানে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা বারবার হামলা চালিয়ে আসছে। বিষয়টি শনিবার নিশ্চিত করেছেন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা।

মুআয়্যাদ শাবান — যিনি বসতি ও দেয়াল প্রতিরোধ কমিশনের প্রধান — তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলুকে বলেন, ইসরায়েল রামাল্লাহর পূর্বে অবস্থিত বুরকা ও দেইর দিবওয়ান এবং নাবলুসের দক্ষিণে দোমা ও কুসরা গ্রামগুলোতে প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফার সফরের জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এই এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষ গত কয়েক মাস ধরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস আক্রমণ ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উপস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

শাবান জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও ইসরায়েলের মধ্যে যে চুক্তি রয়েছে, তার আওতায় ফিলিস্তিনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যেকোনও চলাচলের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করা বাধ্যতামূলক, কারণ তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীও থাকে। কিন্তু এবার সেই সমন্বয় ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে, যেটিকে “একটি বিপজ্জনক নজির” হিসেবে উল্লেখ করেছেন শাবান।

এদিকে এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে মূলত অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের চাপে ইসরায়েল সরকারের নতিস্বীকার। জানা গেছে, তারা প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে সফর বন্ধের দাবি তোলে এবং ইসরায়েলি সরকার সে দাবি মেনেই ফিলিস্তিনি এই প্রধানমন্ত্রীর সফরের অনুমতি দেয়নি।

আনাদোলু বলছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পশ্চিম তীরে প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজার অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বসবাস করছে, যারা ১৮০টি বৈধ ঘোষণা করা বসতি এবং ২৫৬টি অননুমোদিত আউটপোস্টে বসবাস করেন। এর মধ্যে ১৩৮টি আবার কৃষিজ ও পশুপালন নির্ভর বসতি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই পশ্চিম তীরে উত্তেজনা চরমে রয়েছে। ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ মাসে পশ্চিম তীরে সহিংসতায় ইতোমধ্যেই ৯৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে দশকের পর দশক ধরে চলা দখলকে “অবৈধ” ঘোষণা করে এবং সব বসতি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়।

কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েল সে রায় উপেক্ষা করে বসতি সম্প্রসারণ ও ফিলিস্তিনি জনপদে হস্তক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিম তীর সফরের অনুমতি দিল না ইসরায়েল

Update Time : ০৩:০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফাকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের কয়েকটি ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রাম পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এসব শহর ও গ্রাম বারবারই অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে আসছে।

এই ঘটনাটিকে “বিপজ্জনক নজির” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা। রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা-কে দখলকৃত পশ্চিম তীরের কয়েকটি গ্রাম ও শহর সফরের অনুমতি দেয়নি—যেখানে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা বারবার হামলা চালিয়ে আসছে। বিষয়টি শনিবার নিশ্চিত করেছেন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা।

মুআয়্যাদ শাবান — যিনি বসতি ও দেয়াল প্রতিরোধ কমিশনের প্রধান — তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলুকে বলেন, ইসরায়েল রামাল্লাহর পূর্বে অবস্থিত বুরকা ও দেইর দিবওয়ান এবং নাবলুসের দক্ষিণে দোমা ও কুসরা গ্রামগুলোতে প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফার সফরের জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এই এলাকাগুলোর সাধারণ মানুষ গত কয়েক মাস ধরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস আক্রমণ ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উপস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

শাবান জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও ইসরায়েলের মধ্যে যে চুক্তি রয়েছে, তার আওতায় ফিলিস্তিনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যেকোনও চলাচলের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করা বাধ্যতামূলক, কারণ তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীও থাকে। কিন্তু এবার সেই সমন্বয় ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে, যেটিকে “একটি বিপজ্জনক নজির” হিসেবে উল্লেখ করেছেন শাবান।

এদিকে এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে মূলত অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের চাপে ইসরায়েল সরকারের নতিস্বীকার। জানা গেছে, তারা প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে সফর বন্ধের দাবি তোলে এবং ইসরায়েলি সরকার সে দাবি মেনেই ফিলিস্তিনি এই প্রধানমন্ত্রীর সফরের অনুমতি দেয়নি।

আনাদোলু বলছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পশ্চিম তীরে প্রায় ৭ লাখ ৭০ হাজার অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী বসবাস করছে, যারা ১৮০টি বৈধ ঘোষণা করা বসতি এবং ২৫৬টি অননুমোদিত আউটপোস্টে বসবাস করেন। এর মধ্যে ১৩৮টি আবার কৃষিজ ও পশুপালন নির্ভর বসতি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই পশ্চিম তীরে উত্তেজনা চরমে রয়েছে। ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ মাসে পশ্চিম তীরে সহিংসতায় ইতোমধ্যেই ৯৫২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে দশকের পর দশক ধরে চলা দখলকে “অবৈধ” ঘোষণা করে এবং সব বসতি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়।

কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েল সে রায় উপেক্ষা করে বসতি সম্প্রসারণ ও ফিলিস্তিনি জনপদে হস্তক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে।