Dhaka ০৬:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরম কর্ম ও ধর্ম পালনে দুই অনন্য যোদ্ধা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৩৩:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুন ২০২১
  • ১৯০ Time View

অরুন্ধতী সাহা গুপ্ত, চিত্তরঞ্জন ,পশ্চিম বর্ধমান প্রতিনিধি:
২ রা জুন, বুুুুধবার : ষোলো বছর আগে মারা গেছেন স্বামী। রেখে গেছেন দুই ছেলে আর এক মেয়েকে।প্রতিদিনকার রুটি জোগাড়ের তাগিদে তাই লোকের বাড়িতে ঘরবাসন পরিষ্কার করাকে বেছে নিতে বাধ্য হন স্ত্রী। এখন তাঁর পরিচয় সোনির মা হিসেবেই।কবেই মুছে গেছে নিজস্ব নাম।আঙ্গুলের মাথাগুলোতে ক্ষয়াটে ভাব।ছেলেরা বড় হতে কিছু কিছু কাজ করে তবু দিন গুজরান হতো।এখন লক ডাউনে তাদের আর কাজ তেমন জোটে না। সোনির মায়ের কাজও গেছে কমে।তিন চারটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে রোদে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে তবু সে করে চলে।যে ঝুপড়ি ঘরে সে থাকে তার ছাতের টালি ফেটেছে অনেক দিন।সারানোর কথা ভাবতেই টাকার প্রশ্ন চলে আসে সামনে ।আবার পিছিয়ে যেতে হয়।তবু যেদিন বৃষ্টি আসে সেদিন সারা রাত জেগে ঘরের কোণ পাল্টাতে থাকে সে ছেলে মেয়ে নিয়ে।হোয়াটস আপে একটা গ্রুপের মাধ্যমে এক অপরিচিত মহিলা আবেদন জানান একটা পুরনো বা বাতিল একটু বড় সাইজের একটা প্লাস্টিক শিটের জন্য।যদি তা দিয়ে ঢাকা দিয়ে অন্ততঃ বর্ষাটা পার করা যায়।চোখে পড়ে দেবদীপের।দেবদীপ চৌধুরী থাকেন আসানসোলে।সোনির মায়ের বাড়ি থেকে অন্তত পঁচিশ তিরিশ কিমি দূরে।সাথে সাথে তিনি উদ্যোগ নেন।ফোন করে জেনে নেন কার প্রয়োজন ও কি কারণে।নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ও অভিষেক দাস বার বার যোগাযোগ করেন এবং আশ্বাস দেন সহযোগিতার।আজ দোসরা জুন তিনি সকাল এগারোটার মধ্যে নিজে এসে যথেষ্ট বড় মাপের ও উত্তম মানের টার্পোলিন শিট পৌঁছে দেন সোনির মায়ের হাতে।

খুশিতে মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পরিবারের সদস্যদের।দেবদীপ তাঁদের পাশে থেকে বার্তা দিয়ে গেলেন সেবাই পরম কর্ম ও ধর্ম।দেবদীপ কোভিডে হারিয়েছেন তাঁর দিদিকে মাত্র সাতচল্লিশ বছর বয়সে।অসহায়তার করুণ রূপ সেই সময় তাঁকে উপলব্ধি করায় সঠিক সময়ের গুরুত্ব বুঝে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।তাঁর হৃদয় স্বজন হারানোর বেদনার উপশমে আর্তের সেবাকেই উপযুক্ত পথ্য হিসাবে বেছে নেয়। যেভাবে জানামাত্রই তিনি ছুটে এসেছেন পঞ্চাশ ষাট কিলোমিটার আসা যাওয়া করে,তাতে প্রমাণ হলো আরো একবার যে সদিচ্ছা থাকলে দুরত্ব কোনো বাধাই নয়।পরিচিত গণ্ডীর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে গেছে তাঁর প্রয়াস।

আরো একজন এমনই মানুষের নাম প্রবীর সাহা।ধীর স্থির আপাতগম্ভীর মানুষটি সদাই হাজির থাকেন বিভিন্ন সেবাকর্মে।তাঁকে বলা মাত্রই তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন চাল, ডাল,নুন, হলুদ, তেল, সোয়াবিন বিস্কুট ,চকলেট ইত্যাদি সামগ্রী সোনির মায়ের জন্য।জানার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই অত্যন্ত দ্রুত গতিতে দুজনই পৌঁছে দিয়েছেন প্রয়োজনের সামগ্রী নির্দিষ্ট জায়গায় ।এদের সকলকেই স্যালুট।মানুষের পাশে থাকতে আশ্বস্ত করে এঁরা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যান এভাবেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

পরম কর্ম ও ধর্ম পালনে দুই অনন্য যোদ্ধা

Update Time : ০৫:৩৩:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুন ২০২১

অরুন্ধতী সাহা গুপ্ত, চিত্তরঞ্জন ,পশ্চিম বর্ধমান প্রতিনিধি:
২ রা জুন, বুুুুধবার : ষোলো বছর আগে মারা গেছেন স্বামী। রেখে গেছেন দুই ছেলে আর এক মেয়েকে।প্রতিদিনকার রুটি জোগাড়ের তাগিদে তাই লোকের বাড়িতে ঘরবাসন পরিষ্কার করাকে বেছে নিতে বাধ্য হন স্ত্রী। এখন তাঁর পরিচয় সোনির মা হিসেবেই।কবেই মুছে গেছে নিজস্ব নাম।আঙ্গুলের মাথাগুলোতে ক্ষয়াটে ভাব।ছেলেরা বড় হতে কিছু কিছু কাজ করে তবু দিন গুজরান হতো।এখন লক ডাউনে তাদের আর কাজ তেমন জোটে না। সোনির মায়ের কাজও গেছে কমে।তিন চারটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে রোদে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে তবু সে করে চলে।যে ঝুপড়ি ঘরে সে থাকে তার ছাতের টালি ফেটেছে অনেক দিন।সারানোর কথা ভাবতেই টাকার প্রশ্ন চলে আসে সামনে ।আবার পিছিয়ে যেতে হয়।তবু যেদিন বৃষ্টি আসে সেদিন সারা রাত জেগে ঘরের কোণ পাল্টাতে থাকে সে ছেলে মেয়ে নিয়ে।হোয়াটস আপে একটা গ্রুপের মাধ্যমে এক অপরিচিত মহিলা আবেদন জানান একটা পুরনো বা বাতিল একটু বড় সাইজের একটা প্লাস্টিক শিটের জন্য।যদি তা দিয়ে ঢাকা দিয়ে অন্ততঃ বর্ষাটা পার করা যায়।চোখে পড়ে দেবদীপের।দেবদীপ চৌধুরী থাকেন আসানসোলে।সোনির মায়ের বাড়ি থেকে অন্তত পঁচিশ তিরিশ কিমি দূরে।সাথে সাথে তিনি উদ্যোগ নেন।ফোন করে জেনে নেন কার প্রয়োজন ও কি কারণে।নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ও অভিষেক দাস বার বার যোগাযোগ করেন এবং আশ্বাস দেন সহযোগিতার।আজ দোসরা জুন তিনি সকাল এগারোটার মধ্যে নিজে এসে যথেষ্ট বড় মাপের ও উত্তম মানের টার্পোলিন শিট পৌঁছে দেন সোনির মায়ের হাতে।

খুশিতে মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পরিবারের সদস্যদের।দেবদীপ তাঁদের পাশে থেকে বার্তা দিয়ে গেলেন সেবাই পরম কর্ম ও ধর্ম।দেবদীপ কোভিডে হারিয়েছেন তাঁর দিদিকে মাত্র সাতচল্লিশ বছর বয়সে।অসহায়তার করুণ রূপ সেই সময় তাঁকে উপলব্ধি করায় সঠিক সময়ের গুরুত্ব বুঝে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।তাঁর হৃদয় স্বজন হারানোর বেদনার উপশমে আর্তের সেবাকেই উপযুক্ত পথ্য হিসাবে বেছে নেয়। যেভাবে জানামাত্রই তিনি ছুটে এসেছেন পঞ্চাশ ষাট কিলোমিটার আসা যাওয়া করে,তাতে প্রমাণ হলো আরো একবার যে সদিচ্ছা থাকলে দুরত্ব কোনো বাধাই নয়।পরিচিত গণ্ডীর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে গেছে তাঁর প্রয়াস।

আরো একজন এমনই মানুষের নাম প্রবীর সাহা।ধীর স্থির আপাতগম্ভীর মানুষটি সদাই হাজির থাকেন বিভিন্ন সেবাকর্মে।তাঁকে বলা মাত্রই তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন চাল, ডাল,নুন, হলুদ, তেল, সোয়াবিন বিস্কুট ,চকলেট ইত্যাদি সামগ্রী সোনির মায়ের জন্য।জানার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই অত্যন্ত দ্রুত গতিতে দুজনই পৌঁছে দিয়েছেন প্রয়োজনের সামগ্রী নির্দিষ্ট জায়গায় ।এদের সকলকেই স্যালুট।মানুষের পাশে থাকতে আশ্বস্ত করে এঁরা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যান এভাবেই।