Dhaka ০৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিব্বতকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করার নামে চীনের নতুন কৌশল

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:২৮:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ অগাস্ট ২০২০
  • ৮৩ Time View

শান্তিপূর্ণ মুক্তি’! সাত দশক আগে লাল ফৌজের তিব্বত দখল অভিযানকে এই ভাষাতেই চিহ্নিত করলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। সেই সঙ্গে শনিবার তাঁর ঘোষণা, ‘‘সুস্থিতি বজায় রাখা, জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে তিব্বতকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা হবে।”

একদলীয় শাসনাধীন চীনের শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে ১৯৫০ সালের অক্টোবরের গোড়ায় তিব্বত দখলের সাফাইও দিয়েছেন শি। তাঁর যুক্তি, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে তিব্বতের জনগণকে মুক্তি দিতেই অভিযান চালিয়েছিল চিনা ফৌজ। যদিও ইতিহাস বলছে, দলাই লামা-সহ বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন কখনওই বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়নি তিব্বতে। একদা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রটিতে যাবতীয় অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল চীনা দখলদারির পরে।

‘সামন্ততন্ত্র’ থেকে তিব্বতকে মুক্ত করার দাবি করলেও, বেজিং যে বৌদ্ধ আমজনতার মন জয় করতে পারেনি, শি চিনফিংয়ের বক্তৃতাতেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের তিনি বলেছেন, ‘‘তিব্বতের প্রতিটি যুবকের হৃদয়ের গভীরে চীনের প্রতি ভালবাসার বীজ রোপণ করতে হবে।’’ আর সেই লক্ষ্যপূরণের পদ্ধতিও বাতলেছেন তিনি— ‘‘তিব্বতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনৈতিক ও আদর্শগত শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে।’’

চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া এই খবর প্রচার করার পর থেকেই ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি। তাদের আশঙ্কা, অধিকৃত শিনজিয়াংয়ে চীনা কমিউনিস্ট নেতৃত্ব যে ভাবে ‘রাজনৈতিক শিক্ষা’র নামে উইঘুর মুসলিম যুবকদের বন্দি করে মগজধোলাই চালাচ্ছে, এ বার তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চলেও সেই নীতি বলবৎ হবে। কারণ, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক চিনফিং গতকাল বলেছেন, ‘‘বৌদ্ধধর্মকে এ বার সমাজতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’’ সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার চীনা নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন তিব্বতিরা। লাল ফৌজ নির্মম ভাবে তিব্বতিদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তিব্বত দখলের ৭০তম বর্ষপূর্তিতে চীনা প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য বেজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন টানাপড়েন সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত মাসে মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো জানিয়েছিলেন, অধিকৃত তিব্বতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দমনপীড়নে অভিযুক্ত চীনা সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা দেওয়া হবে না। তাঁর ওই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল চীন।

সূত্র: আনন্দবাজার

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

তিব্বতকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করার নামে চীনের নতুন কৌশল

Update Time : ০১:২৮:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ অগাস্ট ২০২০

শান্তিপূর্ণ মুক্তি’! সাত দশক আগে লাল ফৌজের তিব্বত দখল অভিযানকে এই ভাষাতেই চিহ্নিত করলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং। সেই সঙ্গে শনিবার তাঁর ঘোষণা, ‘‘সুস্থিতি বজায় রাখা, জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে তিব্বতকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা হবে।”

একদলীয় শাসনাধীন চীনের শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে ১৯৫০ সালের অক্টোবরের গোড়ায় তিব্বত দখলের সাফাইও দিয়েছেন শি। তাঁর যুক্তি, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে তিব্বতের জনগণকে মুক্তি দিতেই অভিযান চালিয়েছিল চিনা ফৌজ। যদিও ইতিহাস বলছে, দলাই লামা-সহ বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন কখনওই বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়নি তিব্বতে। একদা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রটিতে যাবতীয় অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল চীনা দখলদারির পরে।

‘সামন্ততন্ত্র’ থেকে তিব্বতকে মুক্ত করার দাবি করলেও, বেজিং যে বৌদ্ধ আমজনতার মন জয় করতে পারেনি, শি চিনফিংয়ের বক্তৃতাতেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের তিনি বলেছেন, ‘‘তিব্বতের প্রতিটি যুবকের হৃদয়ের গভীরে চীনের প্রতি ভালবাসার বীজ রোপণ করতে হবে।’’ আর সেই লক্ষ্যপূরণের পদ্ধতিও বাতলেছেন তিনি— ‘‘তিব্বতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে রাজনৈতিক ও আদর্শগত শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে।’’

চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া এই খবর প্রচার করার পর থেকেই ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি। তাদের আশঙ্কা, অধিকৃত শিনজিয়াংয়ে চীনা কমিউনিস্ট নেতৃত্ব যে ভাবে ‘রাজনৈতিক শিক্ষা’র নামে উইঘুর মুসলিম যুবকদের বন্দি করে মগজধোলাই চালাচ্ছে, এ বার তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চলেও সেই নীতি বলবৎ হবে। কারণ, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক চিনফিং গতকাল বলেছেন, ‘‘বৌদ্ধধর্মকে এ বার সমাজতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’’ সাম্প্রতিক কালে একাধিক বার চীনা নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন তিব্বতিরা। লাল ফৌজ নির্মম ভাবে তিব্বতিদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তিব্বত দখলের ৭০তম বর্ষপূর্তিতে চীনা প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য বেজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্কে নতুন টানাপড়েন সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত মাসে মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো জানিয়েছিলেন, অধিকৃত তিব্বতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দমনপীড়নে অভিযুক্ত চীনা সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা দেওয়া হবে না। তাঁর ওই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল চীন।

সূত্র: আনন্দবাজার