Dhaka ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কারাগারে বিয়ে করতে হলো ধর্ষণে অভিযুক্ত নোবেলকে

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:৩৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • 38

কারাগারেই বিয়ে করতে হলো ধর্ষণে অভিযুক্ত নোবেলকে। গতকাল (১৯ জুন) বৃহস্পতিবার কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নোবেল ও ধর্ষণ মামলার বাদি ইসরাত জাহান প্রিয়াকে বিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন উভয় পক্ষের সাক্ষী নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, মো. খলিলুর রহমান, মো. সাদেক উল্লাহ ভূইয়া। গত বুধবার ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে নোবেলের পারস্পারিক সম্মতি সাপেক্ষে কাবিনমূলে বিয়ের ব্যবস্থা করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১৮ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে নোবেলের আইনজীবী একটি আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, মামলার আসামি নোবেল গত ২০ মে থেকে জেল হাজতে আছেন। যেহেতু বাদিনী ও আসামির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হওয়ায় বাদিনী মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার বাদিনী ও আসামি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক। সেহেতু জেল হাজতে আসামি ও বাদিনীর বিয়ের অনুমতি প্রদান করা একান্ত আবশ্যক। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

গত ১৯ মে রাত ২টার দিকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে নোবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বাড়িতে আটকে রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণের মামলা করেন ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক ওই ছাত্রী। পরদিন ২০ মে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপর দিকে নোবেলের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাদী ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যয়নকালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ২০১৮ সালে আসামির সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাদিনীর পরিচয় হয়। আসামি নোবেল তার সাথে মোবাইল ফোনে প্রায়ই কথাবার্তা বলতেন। একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর মোহাম্মদপুরে বাদীর সাথে দেখা করে তাকে নিজের স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ডেমরা থানা এলাকায় নিজের বাসায় নিয়ে আসেন নোবেল। বাসায় নিয়ে আসার পর অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনের সহায়তায় আসামি তাকে একটি রুমে আটক করে ধর্ষণ করে এবং সেই ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। বাদী আসামির কথামতো তার বাসায় না থাকলে মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

সাত মাস ধরে ওই শিক্ষার্থী বাসাটিতে বন্দি ছিলেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোবেলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে একজন নারীকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নামাতে দেখা যায়। ওই ভিডিও দেখে ছাত্রীর পরিবার তাকে চিনে ফেলেন এবং টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। অভিযানের সময় নোবেল পালিয়ে যান। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৯ সালে ভারতের জি-বাংলা টিভির রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’তে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়ে আলোচনায় আসেন নোবেল। তবে নানা কর্মকাণ্ডে তাকে নিয়ে বিতর্কও বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের ২৬ এপ্রিল কুড়িগ্রামে গান পরিবেশনের সময় মঞ্চে নোবেলের ‘অসংলগ্ন আচরণে’ ক্ষুব্ধ হয়ে জুতা ও পানির বোতল ছোড়ে দর্শক। আর তাতে পণ্ড হয় ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি ও সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

তবে সম্প্রতি বিভিন্ন কনসার্ট ও গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে প্রায়ই উপস্থিত হয়ে ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নোবেল। এরই মধ্যে নতুন অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয় তাকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

কারাগারে বিয়ে করতে হলো ধর্ষণে অভিযুক্ত নোবেলকে

Update Time : ১০:৩৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

কারাগারেই বিয়ে করতে হলো ধর্ষণে অভিযুক্ত নোবেলকে। গতকাল (১৯ জুন) বৃহস্পতিবার কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নোবেল ও ধর্ষণ মামলার বাদি ইসরাত জাহান প্রিয়াকে বিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কারাগার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন উভয় পক্ষের সাক্ষী নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, মো. খলিলুর রহমান, মো. সাদেক উল্লাহ ভূইয়া। গত বুধবার ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে নোবেলের পারস্পারিক সম্মতি সাপেক্ষে কাবিনমূলে বিয়ের ব্যবস্থা করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১৮ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে নোবেলের আইনজীবী একটি আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, মামলার আসামি নোবেল গত ২০ মে থেকে জেল হাজতে আছেন। যেহেতু বাদিনী ও আসামির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হওয়ায় বাদিনী মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার বাদিনী ও আসামি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক। সেহেতু জেল হাজতে আসামি ও বাদিনীর বিয়ের অনুমতি প্রদান করা একান্ত আবশ্যক। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

গত ১৯ মে রাত ২টার দিকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের বাসা থেকে নোবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে বাড়িতে আটকে রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণের মামলা করেন ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক ওই ছাত্রী। পরদিন ২০ মে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপর দিকে নোবেলের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদ তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাদী ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যয়নকালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ২০১৮ সালে আসামির সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাদিনীর পরিচয় হয়। আসামি নোবেল তার সাথে মোবাইল ফোনে প্রায়ই কথাবার্তা বলতেন। একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর মোহাম্মদপুরে বাদীর সাথে দেখা করে তাকে নিজের স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ডেমরা থানা এলাকায় নিজের বাসায় নিয়ে আসেন নোবেল। বাসায় নিয়ে আসার পর অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনের সহায়তায় আসামি তাকে একটি রুমে আটক করে ধর্ষণ করে এবং সেই ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। বাদী আসামির কথামতো তার বাসায় না থাকলে মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

সাত মাস ধরে ওই শিক্ষার্থী বাসাটিতে বন্দি ছিলেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোবেলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে একজন নারীকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নামাতে দেখা যায়। ওই ভিডিও দেখে ছাত্রীর পরিবার তাকে চিনে ফেলেন এবং টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। অভিযানের সময় নোবেল পালিয়ে যান। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৯ সালে ভারতের জি-বাংলা টিভির রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’তে অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়ে আলোচনায় আসেন নোবেল। তবে নানা কর্মকাণ্ডে তাকে নিয়ে বিতর্কও বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের ২৬ এপ্রিল কুড়িগ্রামে গান পরিবেশনের সময় মঞ্চে নোবেলের ‘অসংলগ্ন আচরণে’ ক্ষুব্ধ হয়ে জুতা ও পানির বোতল ছোড়ে দর্শক। আর তাতে পণ্ড হয় ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি ও সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

তবে সম্প্রতি বিভিন্ন কনসার্ট ও গণমাধ্যমের অনুষ্ঠানে প্রায়ই উপস্থিত হয়ে ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নোবেল। এরই মধ্যে নতুন অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয় তাকে।