Dhaka ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাঁটাতারে বাঁধা জীবন তাদের, ভাগ্যও অনিশ্চিত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৫৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০
  • ১৪১ Time View

নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত কয়েক মাস ধরেই অন্যান্য দেশের মতো প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও যোগাাযোগ ও যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ প্রয়োজন কিংবা অসুস্থতার মতো জরুরি কারণ ছাড়া স্থল সীমান্ত দিয়ে এখনও কাউকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে ঢাকা থেকে বিমানে করে বাংলাদেশে আটকা পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে যে উদ্যোগ ও ব্যবস্থা দিল্লি গ্রহণ করেছিল, অর্থনৈতিক কারণে যাত্রীরা সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা – শুধু এই দুই সীমান্ত অঞ্চলেই প্রায় আড়াই হাজার ভারতীয় নাগরিক আটকা পড়ে আছেন। যাদের প্রায় সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। আটকা পড়া মানুষদের এই সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়ার কথা বলছে অন্য সূত্রগুলো।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশে আটকা পড়া এসব ভারতীয়রা সীমান্ত এলাকাগুলিতে স্থানীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ স্কুল-বাড়ির বারান্দায় কোনও মতে মাথা গুঁজে আছেন। যাদের মধ্যে অনেক নারী-শিশুও রয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই দেশের কোনও সরকারই এসব ভারতীয়দের আটকা পড়ার কারণ স্পষ্ট করেনি।

এ ব্যাপারে বেনাপোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান জানিয়েছেন, ভারতীয় ইমিগ্রেশন বিভাগ তাদের এই আটকা পড়া নাগরিকদের এখনও গ্রহণ করছে না। নিয়মিতই তারা থানায় আসছে বা ফোন করে সহায়তা চাইছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার- উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও ব্যাখ্যা কিংবা সাড়া দেয়নি এখনও।

বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা – এই দুই স্থলবন্দর দিয়ে এখনও নিয়মিত মানুষ চলাচল শুরু হয়নি। তবে পণ্য আমদানি-রফতানি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর গেল ২৪ মে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছিল, বিমানে যেসব ভারতীয় নাগরিক অন্য দেশ থেকে নিজ দেশে ফিরবেন- তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ওই নির্দেশিকাতে আরও লিখা ছিল- যারা স্থল সীমান্ত দিয়ে দেশে আসবেন তাদেরও এই প্রোটোকল মানতে হবে। দুই মাস আগে এমন নির্দেশিকা জারির পরও এই কয়েক হাজার ভারতীয় সীমান্ত এলাকাগুলোতে কেন আটকে আছেন সেটা স্পষ্ট নয় এখনও।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে আটকা থাকার কারণে অনেক ভারতীয়ের হাত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অনেকেরই এখন খাবার যোগাড় করতেও সমস্যা হচ্ছে। তার যেসব স্থানীয় বাংলাদেশিদের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছেন সেসব বাংলাদেশিদের পক্ষেও তাদেরকে ভরণপোষণ করানো কঠিন। আটকা পড়া ভারতীয়দের হাতে এখন তেমন টাকাও নেই। এখনও হয়তো কোনোভাবে তারা চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চালাতে পারবেন- এটাই এখন প্রশ্ন।

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিন দোকানপাটসহ অনেক কিছুই বন্ধ থাকবে। এই সময়টাতে তারা কীভাবে দৈনন্দিন খাবার যোগাড় করতে এ নিয়েও আটকা পড়া ভারতীয়রা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কিছু সমাজকর্মী ওইসব ভারতীয়দের জন্য চাল-ডাল, তেল-লবণসহ কিছু শুকনো খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন বলে জানা গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

কাঁটাতারে বাঁধা জীবন তাদের, ভাগ্যও অনিশ্চিত

Update Time : ০৪:৫৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুলাই ২০২০

নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত কয়েক মাস ধরেই অন্যান্য দেশের মতো প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গেও যোগাাযোগ ও যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ প্রয়োজন কিংবা অসুস্থতার মতো জরুরি কারণ ছাড়া স্থল সীমান্ত দিয়ে এখনও কাউকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে ঢাকা থেকে বিমানে করে বাংলাদেশে আটকা পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে যে উদ্যোগ ও ব্যবস্থা দিল্লি গ্রহণ করেছিল, অর্থনৈতিক কারণে যাত্রীরা সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা – শুধু এই দুই সীমান্ত অঞ্চলেই প্রায় আড়াই হাজার ভারতীয় নাগরিক আটকা পড়ে আছেন। যাদের প্রায় সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। আটকা পড়া মানুষদের এই সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়ার কথা বলছে অন্য সূত্রগুলো।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশে আটকা পড়া এসব ভারতীয়রা সীমান্ত এলাকাগুলিতে স্থানীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ স্কুল-বাড়ির বারান্দায় কোনও মতে মাথা গুঁজে আছেন। যাদের মধ্যে অনেক নারী-শিশুও রয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই দেশের কোনও সরকারই এসব ভারতীয়দের আটকা পড়ার কারণ স্পষ্ট করেনি।

এ ব্যাপারে বেনাপোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান জানিয়েছেন, ভারতীয় ইমিগ্রেশন বিভাগ তাদের এই আটকা পড়া নাগরিকদের এখনও গ্রহণ করছে না। নিয়মিতই তারা থানায় আসছে বা ফোন করে সহায়তা চাইছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার- উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও ব্যাখ্যা কিংবা সাড়া দেয়নি এখনও।

বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা – এই দুই স্থলবন্দর দিয়ে এখনও নিয়মিত মানুষ চলাচল শুরু হয়নি। তবে পণ্য আমদানি-রফতানি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর গেল ২৪ মে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছিল, বিমানে যেসব ভারতীয় নাগরিক অন্য দেশ থেকে নিজ দেশে ফিরবেন- তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ওই নির্দেশিকাতে আরও লিখা ছিল- যারা স্থল সীমান্ত দিয়ে দেশে আসবেন তাদেরও এই প্রোটোকল মানতে হবে। দুই মাস আগে এমন নির্দেশিকা জারির পরও এই কয়েক হাজার ভারতীয় সীমান্ত এলাকাগুলোতে কেন আটকে আছেন সেটা স্পষ্ট নয় এখনও।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে আটকা থাকার কারণে অনেক ভারতীয়ের হাত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অনেকেরই এখন খাবার যোগাড় করতেও সমস্যা হচ্ছে। তার যেসব স্থানীয় বাংলাদেশিদের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছেন সেসব বাংলাদেশিদের পক্ষেও তাদেরকে ভরণপোষণ করানো কঠিন। আটকা পড়া ভারতীয়দের হাতে এখন তেমন টাকাও নেই। এখনও হয়তো কোনোভাবে তারা চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চালাতে পারবেন- এটাই এখন প্রশ্ন।

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিন দোকানপাটসহ অনেক কিছুই বন্ধ থাকবে। এই সময়টাতে তারা কীভাবে দৈনন্দিন খাবার যোগাড় করতে এ নিয়েও আটকা পড়া ভারতীয়রা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কিছু সমাজকর্মী ওইসব ভারতীয়দের জন্য চাল-ডাল, তেল-লবণসহ কিছু শুকনো খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন বলে জানা গেছে।