Dhaka ১১:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমাজন বনাঞ্চলের ব্রাজিল অংশের বন-নিধন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:১০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০
  • ১২২ Time View

আমাজন বনাঞ্চলের ব্রাজিল অংশের বন-নিধন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশবাদীরা বর্ধিত হারে আমাজনের বন-নিধনে হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেছেন। তারা আশংকা করছেন, গরম মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি বনাঞ্চল ধ্বংসের সম্ভাবনা রয়েছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকা ও দ্য গার্ডিয়ান’র। 

২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট জৈর বোলসোনারো ক্ষমতায় আসার পর বন-নিধনের মাত্রা বহুলাংসে বৃদ্ধি পায়।

স্যাটেলাইটে থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ১২ মাসে আমাজনের ৩,৫৫৫ বর্গমাইল পুড়ে বিধস্ত হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। ঐ অগ্নিকাণ্ডের চেয়ে চলতি মাসে তা আরও খারাপের দিকে গেছে। আগস্টের প্রথম ১০ দিনে এক হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে আমাজনে শুরু হয়ে গেছে দাবানলের মৌসুম। এবারের মৌসুমটি এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপভাবে শুরু হয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিস। গ্রিনপিস জানিয়েছে, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে আমাজনের ১০ হাজার ১৩৬টি স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি।

ব্রাজিল সরকারের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্রিনপিস দেখিয়েছে, দেশটির কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার দাবানলের সংখ্যা বেড়েছে ৮১ শতাংশ। গত বছর আমাজনের ভয়াবহ দাবানল আন্তর্জাতিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গ্রিনপিসের দেওয়া নতুন তথ্যে এবারের দাবানল গত বছরের তুলনায় আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তবে আমাজন নিয়ে এমন আশঙ্কার বার্তা ব্রাজিল সরকার একেবারে আমলে নিচ্ছে না। আমাজনে কোন দাবানলের অস্তিত্ব আছে তা স্বীকারই করছে না ব্রাজিল সরকার। সম্প্রতি আমাজন বনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট দাবানলের ছবি ও ভিডিও অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জৈর বোলসোনারো দাবানলের ঘটনাকে ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাজনের উপড় দিয়ে বিমানযোগে দূরবর্তী শহর বোয়া ভিস্টা থেকে মানোস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেও কেউ একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও দেখতে পাবেন না।’ বোলসোনারো বলেন, ‘গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এ বনাঞ্চলে আগুন ধরে না। আগুন ও বন নিধনের বিরুদ্ধে আমরা সর্বাত্মক লড়াই করছি। কিন্তু তারপরও আমাদের সমালোচনা করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট আমাজন। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এই বনাঞ্চলটি এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থান। আমাজন জঙ্গল চার দশমিক আট  মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার (দুই দশমিক ৮৮ মিলিয়ন বর্গমাইল) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। বিশ্বের নয়টি দেশ-ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ফরাসি গায়ানা, গিয়ানা, পেরু, সুরিনাম এবং ভেনিজুয়েলার বিভিন্ন অংশ জুড়ে বিস্তৃত আমাজন বনাঞ্চলটি।

আমাজন সহযোগিতা চুক্তি সংস্থা (অ্যাকটিও) অনুসারে, প্রায় তিন মিলিয়ন আদিবাসীর বাস আমাজন জঙ্গলে। সেখানে প্রায় ৪০০ উপজাতির সদস্যরা স্বাধীনভাবে বসবাস করে। তারা বাইরের পৃথিবীর সাহায্য ছাড়াই নিজেদের মতো করে বসবাস করে আসছে। উপজাতির মধ্যে প্রায় ৬০ জন বিচ্ছিন্নভাবে বাস করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎস বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট আমাজন। এ কারণে আমাজনকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আখ্যা দেওয়া হয়। আমাজন জঙ্গল বিপুল কার্বন জমা রেখে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতিকে খানিকটা শ্লথ রেখেছে। রেইনফরেস্ট অঞ্চল হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় আমাজনে আর্দ্রতা বজায় থাকে। তবে জুলাই-আগস্ট মাসে আমাজনের আবহাওয়া কিছুটা শুষ্ক হয়ে ওঠে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

আমাজন বনাঞ্চলের ব্রাজিল অংশের বন-নিধন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি

Update Time : ০৫:১০:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০

আমাজন বনাঞ্চলের ব্রাজিল অংশের বন-নিধন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবেশবাদীরা বর্ধিত হারে আমাজনের বন-নিধনে হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেছেন। তারা আশংকা করছেন, গরম মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি বনাঞ্চল ধ্বংসের সম্ভাবনা রয়েছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকা ও দ্য গার্ডিয়ান’র। 

২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট জৈর বোলসোনারো ক্ষমতায় আসার পর বন-নিধনের মাত্রা বহুলাংসে বৃদ্ধি পায়।

স্যাটেলাইটে থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ১২ মাসে আমাজনের ৩,৫৫৫ বর্গমাইল পুড়ে বিধস্ত হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। ঐ অগ্নিকাণ্ডের চেয়ে চলতি মাসে তা আরও খারাপের দিকে গেছে। আগস্টের প্রথম ১০ দিনে এক হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে আমাজনে শুরু হয়ে গেছে দাবানলের মৌসুম। এবারের মৌসুমটি এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপভাবে শুরু হয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিস। গ্রিনপিস জানিয়েছে, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে আমাজনের ১০ হাজার ১৩৬টি স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি।

ব্রাজিল সরকারের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্রিনপিস দেখিয়েছে, দেশটির কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার দাবানলের সংখ্যা বেড়েছে ৮১ শতাংশ। গত বছর আমাজনের ভয়াবহ দাবানল আন্তর্জাতিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গ্রিনপিসের দেওয়া নতুন তথ্যে এবারের দাবানল গত বছরের তুলনায় আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তবে আমাজন নিয়ে এমন আশঙ্কার বার্তা ব্রাজিল সরকার একেবারে আমলে নিচ্ছে না। আমাজনে কোন দাবানলের অস্তিত্ব আছে তা স্বীকারই করছে না ব্রাজিল সরকার। সম্প্রতি আমাজন বনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট দাবানলের ছবি ও ভিডিও অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জৈর বোলসোনারো দাবানলের ঘটনাকে ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাজনের উপড় দিয়ে বিমানযোগে দূরবর্তী শহর বোয়া ভিস্টা থেকে মানোস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেও কেউ একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও দেখতে পাবেন না।’ বোলসোনারো বলেন, ‘গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এ বনাঞ্চলে আগুন ধরে না। আগুন ও বন নিধনের বিরুদ্ধে আমরা সর্বাত্মক লড়াই করছি। কিন্তু তারপরও আমাদের সমালোচনা করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট আমাজন। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এই বনাঞ্চলটি এক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থান। আমাজন জঙ্গল চার দশমিক আট  মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার (দুই দশমিক ৮৮ মিলিয়ন বর্গমাইল) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। বিশ্বের নয়টি দেশ-ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ফরাসি গায়ানা, গিয়ানা, পেরু, সুরিনাম এবং ভেনিজুয়েলার বিভিন্ন অংশ জুড়ে বিস্তৃত আমাজন বনাঞ্চলটি।

আমাজন সহযোগিতা চুক্তি সংস্থা (অ্যাকটিও) অনুসারে, প্রায় তিন মিলিয়ন আদিবাসীর বাস আমাজন জঙ্গলে। সেখানে প্রায় ৪০০ উপজাতির সদস্যরা স্বাধীনভাবে বসবাস করে। তারা বাইরের পৃথিবীর সাহায্য ছাড়াই নিজেদের মতো করে বসবাস করে আসছে। উপজাতির মধ্যে প্রায় ৬০ জন বিচ্ছিন্নভাবে বাস করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরই উৎস বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট আমাজন। এ কারণে আমাজনকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আখ্যা দেওয়া হয়। আমাজন জঙ্গল বিপুল কার্বন জমা রেখে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতিকে খানিকটা শ্লথ রেখেছে। রেইনফরেস্ট অঞ্চল হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় আমাজনে আর্দ্রতা বজায় থাকে। তবে জুলাই-আগস্ট মাসে আমাজনের আবহাওয়া কিছুটা শুষ্ক হয়ে ওঠে।