Dhaka ১১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৌদিতে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ালো ইসি সংস্কার না করে কোনো নির্বাচনেই ভালো ফল পাওয়া যাবে না : কমিশন প্রধান ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস, বাড়বে গরমের অনুভূতি জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় টেকসই কর্মসূচি বাড়ানো হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা রাজনৈতিক পর্যায়ে সার্কের অগ্রগতি হয়নি : নেপালের রাষ্ট্রদূত শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ১৯১ রানেই অলআউট টাইগাররা প্রধান উপদেষ্টা কাতার সফরে যাচ্ছেন সোমবার

আত্রাই নদীর পানি সিংড়া এলাকায় বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৪২:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০
  • ১৬৪ Time View

আত্রাই নদীর পানি সিংড়া এলাকায় বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে নলডাঙ্গার বারনই নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

নাটোরের নদ-নদী, চলনবিল ও হালতি বিলের বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসিদের মাঝে আতংক কাটেনি। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গড়ে ৫৬ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আত্রাই নদীতে বিপদসীমার ১১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। আর বারনই নদীতে প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। পানি কমতে শুরু করায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বন্যার ভয়াবহতা নিয়ে আতঙ্ক কাটেনি। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ফের বন্যার পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে  নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান এ তথ্য জানিয়েছেন। বন্যায় গত দুইদিনে সিংড়ার আত্রাই নদীর পানির প্রবল স্রোতে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে শোলাকুড়া মহল্লার ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫টি বাড়ি আংশিক পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে পানি কমলেও ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে, আতংকে মানুষ মালামাল অন্যত্র সরে নিচ্ছেন। আজ সরেজমিনে গিয়ে নদীর পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ভাঙ্গন কবলিত স্থানগুলোতো বালিল বস্তা ফেলে তা রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আত্রাই ও বারনই নদী থেকে অবৈধ সোঁতি জাল আরো আগে অপসারণ করা হলে বন্যার ভয়াবহতা এত রূপ নিত না। অবৈধ সোঁতি জালের স্থাপনার কারণে নদ-নদীতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে নদীতে পানি উপচে পড়ে নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। এছাড়া  বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে চলনবিলের শতশত গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, তলিয়ে গেছে রোপা আমন ক্ষেত। ভেঙ্গে গেছে অনেক আধা কাঁচা ঘরবাড়ি। ফলে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষরা। সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান তারা।

নলডাঙ্গা উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কাওসার আলী ও সিংড়া উপজেলার শেলাকুড়া গ্রামের আবেদ আলী বলেন, ১৯৮৮ সাল, ১৯৯৮ সাল ও ২০১৭ সালে বড় বন্যা  হয়েছিল। তবে এবারের বন্যা আরও বেশি বড় ও ভয়াবহ হয়েছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু হলেও যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতে আবারও বন্যার পানি বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু জানান, এবারের বন্যায় সিংড়া উপজেলায় ২৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক,২৩০ কিলোমিটার কাচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৩২০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ২২ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ২০৩৯টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫ হাজার ৭’শ পরিবারের ১ লাখ ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১৭২ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার ৮ হাজার ৩শ পরিবারের ৩৩ হাজার ৯’শ মানুষ বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, সিংড়া উপজেলার বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৬৭ মেঃটঃ চাল, ১৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে এটি একটি ভালো সংবাদ। আশাকরি দুই-একদিনের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। নদ-নদীতে পেতে রাখা সকল অবৈধ সোঁতি জাল অপসারণ করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সোঁতি জাল অপসারণ করা হয়েছে। ফলে নদ-নদীতে পানিপ্রবাহ এখন স্বাভাবিক রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। পর্যায়ক্রমে দুর্গত মানুষদের কাছে পৌঁছানো হবে।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় মনিটরিং করা হচ্ছে এবং ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

আত্রাই নদীর পানি সিংড়া এলাকায় বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে

Update Time : ০১:৪২:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০

আত্রাই নদীর পানি সিংড়া এলাকায় বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে নলডাঙ্গার বারনই নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

নাটোরের নদ-নদী, চলনবিল ও হালতি বিলের বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসিদের মাঝে আতংক কাটেনি। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গড়ে ৫৬ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আত্রাই নদীতে বিপদসীমার ১১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। আর বারনই নদীতে প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। পানি কমতে শুরু করায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বন্যার ভয়াবহতা নিয়ে আতঙ্ক কাটেনি। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ফের বন্যার পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে  নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান এ তথ্য জানিয়েছেন। বন্যায় গত দুইদিনে সিংড়ার আত্রাই নদীর পানির প্রবল স্রোতে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে শোলাকুড়া মহল্লার ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫টি বাড়ি আংশিক পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে পানি কমলেও ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে, আতংকে মানুষ মালামাল অন্যত্র সরে নিচ্ছেন। আজ সরেজমিনে গিয়ে নদীর পানি তীব্র বেগে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ভাঙ্গন কবলিত স্থানগুলোতো বালিল বস্তা ফেলে তা রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আত্রাই ও বারনই নদী থেকে অবৈধ সোঁতি জাল আরো আগে অপসারণ করা হলে বন্যার ভয়াবহতা এত রূপ নিত না। অবৈধ সোঁতি জালের স্থাপনার কারণে নদ-নদীতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে নদীতে পানি উপচে পড়ে নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। এছাড়া  বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে চলনবিলের শতশত গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, তলিয়ে গেছে রোপা আমন ক্ষেত। ভেঙ্গে গেছে অনেক আধা কাঁচা ঘরবাড়ি। ফলে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষরা। সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান তারা।

নলডাঙ্গা উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কাওসার আলী ও সিংড়া উপজেলার শেলাকুড়া গ্রামের আবেদ আলী বলেন, ১৯৮৮ সাল, ১৯৯৮ সাল ও ২০১৭ সালে বড় বন্যা  হয়েছিল। তবে এবারের বন্যা আরও বেশি বড় ও ভয়াবহ হয়েছে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু হলেও যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে তাতে আবারও বন্যার পানি বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু জানান, এবারের বন্যায় সিংড়া উপজেলায় ২৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক,২৩০ কিলোমিটার কাচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৩২০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ২২ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ২০৩৯টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫ হাজার ৭’শ পরিবারের ১ লাখ ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২১৭২ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার ৮ হাজার ৩শ পরিবারের ৩৩ হাজার ৯’শ মানুষ বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, সিংড়া উপজেলার বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৬৭ মেঃটঃ চাল, ১৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে এটি একটি ভালো সংবাদ। আশাকরি দুই-একদিনের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। নদ-নদীতে পেতে রাখা সকল অবৈধ সোঁতি জাল অপসারণ করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সোঁতি জাল অপসারণ করা হয়েছে। ফলে নদ-নদীতে পানিপ্রবাহ এখন স্বাভাবিক রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ আছে। পর্যায়ক্রমে দুর্গত মানুষদের কাছে পৌঁছানো হবে।
বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় মনিটরিং করা হচ্ছে এবং ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।