প্রতিপক্ষকে শেষ ওভার থেকে করতে হবে ১৭ রান, একটি করে ওভার বাকি ডোয়াইন ব্রাভো, রবিন্দ্র জাদেজা এবং করন শর্মার। উইকেটে সেঞ্চুরি করে অপরাজিত এক ব্যাটসম্যান, অন্যজন এসেছেন মাত্রই; দুজনই বাঁহাতি।

ব্যাটসম্যানদের এসব তথ্য না জানলেও, যেকোনো অধিনায়ক চোখ বন্ধ করে শেষ ওভারটি তুলে দিতেন ব্রাভোর হাতে। কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনি করলেন অন্যটা, দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সামনে শেষ ওভারে বোলিংয়ে ডাকলেন বাঁহাতি স্পিনার জাদেজাকে।

যা দেখে হয়তো মনে মনে খুশিই হয়েছিলেন দিল্লি ক্যাপিট্যালসের দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরিয়ান শিখর ধাওয়ান ও মাত্রই উইকেটে আসা অক্ষর প্যাটেল। কেননা শারজার ছোট মাঠে শেষ ওভারে ১৭ রানের লক্ষ্যটা পূরণ করতে বাঁহাতি স্পিনারের চেয়ে ভালো সুযোগ যে তারা আর পেতেন না।

ম্যাচ শেষে ধোনি জানিয়েছেন আনফিট ছিলেন ব্রাভো, তাই বাধ্য হয়ে জাদেজাকে দিতে হয়েছিল শেষ ওভার। আর এতেই শেষ হয়ে গেছে চেন্নাই সুপার কিংসের জয়ের আশাও। জাদেজার করা শেষ ওভারে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে ২২ রান তুলেছেন অক্ষর ও ধাওয়ান, এক বল হাতে রেখেই দলকে এনে দিয়েছেন অসাধারণ এক জয়।

চেন্নাইয়ের করা ১৭৯ রানের জবারে ১৯ ওভার শেষে দিল্লি ক্যাপিট্যালসের সংগ্রহ ছিল ১৬৩ রান। জাদেজার করা শেষ ওভারে ২২ রান নিয়ে অবিস্মরণীয় জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন ধাওয়ান ও অক্ষর। এর ফলে নয় ম্যাচে ৭ জয় নিয়ে আবারও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে দিল্লি।

অথচ ১৮০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি দিল্লির। প্রথম পাওয়ার প্লে-র ছয় ওভারে মাত্র ৪১ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরে যান পৃথ্বি শ (২ বলে ০) ও আজিঙ্কা রাহানে (১০ বলে ৮)। প্রাথমিক ধাক্কাটা সামাল দেন ধাওয়ান ও অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার।

দুজন মিলে তৃতীয় উইকেটে মাত্র ৪৪ বলে গড়েন ৬৮ রানের জুটি। ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে সাজঘরে ফিরে ২৩ বলে ২৩ রান করা শ্রেয়াস। তখনও জয়ের জন্য ৫১ বলে ৮৬ রান করতে হতো দিল্লির। পাঁচে নামা মার্কাস স্টয়নিস ১৪ বলে ২৪ রান করলে সমীকরণ খানিক সহজ জয়।

কিন্তু স্টয়নিসের বিদায়ের পর অ্যালেক্স ক্যারে ৪ রান করতে নষ্ট করেন ৭টি বল। যা আবারও চাপে ফেলে দেয় দিল্লিকে। এর মধ্যে ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রান খরচ করেন স্যাম কারান। সে ওভারেই আইপিএল ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন ধাওয়ান।

তবু জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৭ রান বাকি থাকে দিল্লির। সৌভাগ্যক্রমে শেষ ওভারে জাদেজাকে পেয়ে ম্যাচ জিতে নেন অক্ষর। শেষ ওভারের প্রথম বল ওয়াইড করেন জাদেজা, পরে বৈধ প্রথম বলে ১ রান নেন ধাওয়ার।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন অক্ষর। চতুর্থ বলে নেন ২ রান। ফলে শেষ দুই বলে বাকি থাকে ১; পঞ্চম বলে সোজা মাঠের বাইরে পাঠিয়ে ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন স্পিনিং অলরাউন্ডার অক্ষর।

দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার সময় ১৪ চার ও ১ ছয়ের মারে ৫৮ বলে ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন ধাওয়ান। শেষ ওভারের নায়ক অক্ষর প্যাটেল মাত্র ৫ বলে করেন ২১ রান।

এর আগে দুর্দান্ত খেলতে থাকা দিল্লি ক্যাপিটালসের সামনে ১৮০ রানের বিশাল লক্ষ্য বেধে দেয় চেন্নাই। শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম এমনিতেই রান প্রসবিনি। তবে সে তুলনায় চেন্নাইয়ের স্কোরটা ছোটই মনে হচ্ছিল।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার স্যাম কুরানের উইকেট হারায় চেন্নাই। এরপর ফ্যাফ ডু প্লেসি এবং শেন ওয়াটসন মিলে ৮৭ রানের জুটি গড়ে তোলেন। ২৮ বলে ৩৬ রান করে আউট হয়ে যান ওয়াটসন।

৪৭ বলে ৫৮ রান করেন ফ্যাফ ডু প্লেসি। ২৫ বলে অপরাজিত ৪৫ রান করেন আম্বাতি রাইডু। ১৩ বলে ৪টি বিশাল ছয়ের মারে ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন রবীন্দ্র জাদেজা।

বল হাতে ২ উইকেট নেন অ্যানরিখ নর্টজে এবং ১টি করে উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা ও তুষার দেসপান্দে। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান করে চেন্নাই সুপার কিংস।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে