ঘা,,,,,,,,,,,,
কবি হাবিবুর রহমান
রহিদ দোকানে বসে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি-গোঁফ। মাথার চুলও বড়। দু আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট। চা আর সিগারেট তার জীবন। শার্ট ও জিন্স প্যান্ট তার পরনে।
রহিদ বলল,”আমার হৃদয়ে ঘা,এ ঘায়ে আর নূনের ছিটা নিতে চাইনা। “
শিবলু বলল,”বিয়ে কর,তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে। “
রহিদ উত্তর দিলনা। শিবলু ও রহিদ বন্ধু। শিবলু বিয়ে করেছে তার মেয়েও হয়েছে। রহিদ এখনও বিয়ে করেনি।গ্রামের সবচেয়ে চেয়ে বড় দোকানটি শিবলুর।
শ্রম ও চেষ্টা তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
তার অধিনে কর্মচারী কাজ করে। রহিদ ফ্যাল ফ্যাল করে শিবলুর দিকে তাকিয়ে থাকে। শিবলু বলল,”সিগারেট খাবি হাতে আগুনের ছ্যাকা লাগবে-ভয় পেলে চলে বল। “
রহিদ বলল,”আমার মনে ঘা,আমি কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করিনা। “
শিবলু বলল,”সব মেয়ে কি তোর লিজা?”
রহিদ বলল,”দোস্ত ঐ নামটা আমায় বেশি পুড়ায়,। “
শিবলু বলল,”চু্ল, দাড়ি,গোঁফ কেটে নে,সভ্যতায় ফির বন্ধু। “
রহিদ কিছু বলল না। সে উঠে চলে গেল। রহিদের রাগঢাক নেই। তার আপন বলতে একমাত্র মা,সে মাও বৃদ্ধ। চোখে ভালো দেখতে পারেনা।
রহিদ অনেক রাতে বাড়ি যায়। মার কথা শুনেনা। মা অনেক রাত জেগে থেকে ঘুমিয়ে গেছে। রহিদ না খেয়ে ঘুমিয়ে গেল।
সকাল হতেই রহিদ শিবলুর দোকানে যায়। প্রতিদিনের মত আজকেও গেল। সকালের নাস্তা বলতে তার সিগারেট আর বিড়ি। শিবলু তাকে রুটি দিল।
রহিদ বলল,”খুব দাতা হয়ে গেছিস। “
শিবলু বলল,”তুই আমার বন্ধু ভাই। “
রহিদ বলল,”তাই বলে ফ্রিতে খাওয়াবি বন্ধু। “
শিবলু বলল,”নিজের যত্ন নে, মেয়ের দেয়া আঘাত ভুলে যা ভাই। “
রহিদ বলল,”যে বিষ খেয়েছি হজম হওয়ার নয়। “
শিবলু বলল,”বিয়ে কর সুখ পাবি। “
রহিদ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলেনা। তারপর উঠে চলে যায়। আউলা চুল, মাথায় চিরুনী দেয়না। রাস্তার পাশে বট গাছ,রহিদ সেখানে বসে আছে।
বোরখা পড়া মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে।
মেয়েটি বলল,”পাগলের মত একি অবস্থা তোমার রহিদ? “
রহিদ বলল,”তুমি কেগো মেয়ে।”
মেয়েটি বলল,”আমি লিজা। “
বোরখার মুখ খুলে ফেলল। রহিদ যেন পাথর হয়ে গেল।
তার হৃদয় পুড়ছে। ঘা’য়ে পচন বেড়ে গেল।
রহিদ কিছু না বলে উঠে দাড়াল। বাঁ মুখ হয়ে থুঁতু ফেলল কয়েকবার। লিজা ডাকলেও পিছু ফিরে চায়নি। রহিদ সামনের দিকে হেটে চলে গেল।
বেশ কয়েক মাস পর, এক সন্ধ্যায় রহিদের মা কাঁদছে। সে কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে গেছে। আশে পাশের লোক জড়ো হলো। তার বন্ধু শিবলু এলো।
শিবলু কেঁদে কেঁদে বলল,”মনে ঘা নিয়ে এভাবে চলে গেলি বন্ধু। “
রহিদ আর নেই। ওপারে চলে গেছে। রাতে রাতেই পুকুর পাড়ে তার কবর দিয়ে দিল।
এক মাস পর, এক সকালে লিজা রহিদের কবরে।
তার চোখে জল,পা গড়িয়ে মাটিতে পড়ছে। শিবলু এলো বলল,”হত্যাকারী মেয়ে চলে যাও,ডাইনী তুমি আমার বন্ধুর খুনী,বিশ্বাসঘাতিনী, যাও। “
লিজা চলে গেল। শান্তিতে ঘুমিয়ে রইল রহিদ তার আপন বাড়িতে। সে বাড়িতে তার হৃদয়ে ঘা করার মত কেউ নেই।