আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেছে বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে। আজারবাইজানের অন্তত একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ফেলে দিয়েছে আর্মেনিয়ার বাহিনী।

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান দাবি করেছেন, আজারবাইজানই প্রথমে বিমান এবং আর্টিলারি হামলা চালিয়েছিল। অন্যদিকে আজারবাইজান বলছে, তারা আর্মেনিয়ার হামলার জবাবে পাল্টা হামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, পুরো রণক্ষেত্র বরাবর আর্মেনিয়া গোলা নিক্ষেপ করছিল।

দুই তরফ থেকেই জানানো হয়েছে, এই লড়াইয়ে কিছু বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।

নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৯১ সালের আগে পর্যন্ত আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান, দুটি দেশই ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে তারা আলাদা হয়।

নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে গত চার দশক ধরে এই দুই দেশ দ্বন্দ্বে লিপ্ত। নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের বলেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা।

গত জুলাই মাসেও দুই দেশের মধ্যে লড়াইয়ে ১৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বিরাট বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। এই বিক্ষোভ থেকে নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল পুনর্দখলে পূর্ণ সামরিক শক্তি প্রয়োগের আহবান জানানো হয় সরকারের প্রতি।

দুই পক্ষ কী বলছে

আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় নাগোর্নো-কারাবাখের বেসামরিক বসতির উপর হামলা শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে। হামলা চালানো হয় ওই অঞ্চলের রাজধানী স্টেপনাকার্টে। আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো বলছে তারা দুটি হেলিকপ্টার এবং তিনটি ড্রোন গুলি করে ফেলে দিয়েছে এবং তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে।

এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমরা এর উচিৎ জবাব দেব এবং পরিস্থিতির সম্পূর্ণ দায়িত্ব আজারবাইজানের সামরিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে।”

“পরে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুশান স্টেপানিয়ান বলেন, এক নারী এবং এক শিশু মারা গেছে এবং আরো যে সব হতাহতের খবর এসেছে সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা।

নাগার্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ সেখানে সামরিক আইন জারি করেছে। সেখানে সব সক্ষম পুরুষকে সামরিক বাহিনীতে ডাকা হয়েছে।

এদিকে আজারবাইজান ঘোষণা করেছে যে, “পুরো রণক্ষেত্র বরাবর সশস্ত্র বাহিনীর পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে যার লক্ষ্য আর্মেনিয়ার বাহিনীর হামলা প্রতিহত করা এবং বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা বিধান।”

আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, কয়েকটি গ্রামের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে সেখানে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে এবং সেখানকার অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

তারা আরো বলছে তাদের একটি হেলিকপ্টার নষ্ট হয়েছে তবে হেলিকপ্টারের ক্রুরা বেঁচে গেছে। তারা আরো দাবি করছে, আর্মেনিয়ার ১২টি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তবে আর্মেনিয়া আরো যেসব ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছে সেগুলো আজারবাইজান অস্বীকার করছে।

আজারবাইজান আর আর্মেনিয়ার এই বিরোধে বহু বছর ধরে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)। একটি যুদ্ধবিরতির জন্য এই প্রচেষ্টায় জড়িত আছে মিনস্ক গ্রুপ নামে কূটনীতিকদের একটি দল, যাতে আছেন ফ্রান্স, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। সূত্র: বিবিসি বাংলা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে