দক্ষিণ চীনের একটি ছোট শহর ইয়াংশুর একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আমি ২০০৮ সালের মে মাসে শিক্ষকতা করতে গিয়েছিলাম। যখন আমি কোর্স শেষ করলাম, প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা আমাকে বললেন তারা আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চান। তারা বললেন চীনা একটা অ্যাপ আমার কম্প্যুটারে ডাউনলোড করে নিতে, যার নাম QQ (কিউকিউ)। অনেকটা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মত এই অ্যাপ।
আমি তাদের বললাম ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে (তখন চীনে ফেসবুক খোলা ছিল) আর আমাকে বন্ধু হিসাবে যোগ করে নিতে। আরও বললাম তোমাদের ইমেল করার ঠিকানাটাগুলোও দিও। কয়েকজন দিলেন। কিন্তু সেসব ইমেল ঠিকানা মনে রাখা খুব কঠিন, কারণ সেগুলো ছিল এরকম: [email protected].
আমার মনে হয়েছিল ইমেল ঠিকানাগুলো খুবই অদ্ভুত। তবে ২০০৮ সালে এমনকি যুক্তরাজ্যেও লোকে উদ্ভট সব নাম দিয়ে ইমেল পরিচিতি বা ঠিকানা তৈরি করত। কিন্তু এর বেশ কয়েক বছর পর আমি ফ্রিলান্স সাংবাদিক হিসাবে কাজ করতে বেইজিং গেলাম। তখনও দেখলাম চীনে প্রায় কেউই ইমেল ব্যবহারে আগ্রহী নন।
প্রায়ই আমাকে খবর লেখার জন্য সংবাদ পাঠানো হতো আমার স্মার্টফোনের উইচ্যাট অ্যাপে। চীনে যোগাযোগের জন্য উইচ্যাট বিপুল জনপ্রিয় অ্যাপ। আমার খবর লেখা হলে, সেটাও আমি পাঠাতাম উইচ্যাটে। আমাকে লেখার জন্য পেমেন্টও দেয়া হতো উইচ্যাটের মাধ্যমে। এই মোবাইল অ্যাপ এতই কার্যকর এবং এত দ্রুত যে মনে হতো সব কিছু নিমেষে হয়ে যাচ্ছে।
অ্যাপই প্রধান
পশ্চিমের বহু দেশে বিশেষ করে কর্মস্থলে এবং যে কোন কাজের কারণে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে সবার উপরে রাখা হয় ইমেলকে। আমেরিকা এবং ব্রিটেনে অনলাইনে যেসব কাজকর্ম হয় তাতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা ইমেলে কাজকর্ম করেন তাদের সংখ্যা যথাক্রমে ৯০.৯% এবং ৮৬%।
অনলাইন মানুষ যেসব কারণে ব্যবহার করে, যেমন কোন তথ্য, পণ্য এবং সেবা সম্পর্কে খোঁজখবর করা, ইন্টারনেটে ব্যাংকের লেনদেন, কেনাকাটা, ডিজিটাল ভিডিও দেখা, অডিও শোনা এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা- এই দুটি দেশে অর্থাৎ আমেরিকা ও ব্রিটেনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেখানে সবার উপরে রয়েছে ইমেলে যোগাযোগ। কিন্তু চীনে চিত্রটা পুরো আলাদা।
চীনের ভোক্তারা মোবাইল কী কাজে ব্যবহার করে, ডিলয়েট সংস্থা সে বিষয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল ২০১৮ সালে। তাতে দেখা গেছে চীনের মানুষ ইমেল খোলেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ২২% কম।
চীনে উইচ্যাটই প্রধান। চীনে যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের ৭৯.১% নিয়মিত এই অ্যাপ ব্যবহার করে। আর চীনে বিভিন্ন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮৪.৫%ই ব্যবহার করে উইচ্যাট।
চীনারা ব্যক্তিগত কারণে, দৈনন্দিন কাজেই যে শুধু উইচ্যাট ব্যবহার করে তা নয়, অফিসের কাজকর্মেও তারা উইচ্যাট ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে। উইচ্যাট অ্যাপটি তৈরি করেছে টেনসেন্ট নামে যে কোম্পানি তাদের গবেষণা বিভাগ পেঙ্গুইন ইন্টালিজেন্স বিশ হাজার ভোক্তার ওপর একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে প্রতিদিন কর্মস্থলে চীনের ৮৮% মানুষ উইচ্যাট ব্যবহার করছেন। ফোন, এসএমএস এবং টেক্সট তারা ব্যবহার করেন প্রায় ৬০% আর তৃতীয় স্থানে অর্থাৎ সবার নিচে আছে ইমেল – ২২.৬%।
ইভা হ্যসু একটি ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং কোম্পানি চালান। তিনি তাইওয়ানিজ, তরুণ বয়সে কয়েক বছর কাটিয়েছেন আমেরিকায়, গত ছয় বছর কাজ করছেন সাংহাইতে।
তিনি বলছেন, বিদেশে তার যেসব ক্লায়েন্ট আছেন তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য তিনি ইমেল বা লিংকডইন ব্যবহার করেন। কিন্তু চীনে যাদের সাথে ব্যবসা করেন, তাদের সাথে সব যোগাযোগ একদম আলাদা। “চীনা ক্লায়েন্টরা উইচ্যাটই ব্যবহার করেন। যত ফাইলপত্র সবই উইচ্যাটে পাঠান।”
সাইবার ক্যাফে সংস্কৃতি
চীনে ১০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর জন্য উইচ্যাট একটি সুপারঅ্যাপ এবং এই অ্যাপ এখন চীনা জীবনের সবক্ষেত্রে। কিন্তু এই অ্যাপের প্রতি চীনের মানুষের নির্ভরতা এবং এর জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে সম্ভবত বেশ কয়েক বছর আগে।
উনিশশো নিরানব্বই সালে, সেসময় চীনে গড়ে ওঠা নতুন প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট বাজারে একটি নতুন পণ্য ছেড়েছিল- নাম কিউকিউ। সেটি ছিল কম্প্যুটারে বার্তা আদানপ্রদানের একটি মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সেসময় চীনে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে গড়ে মাত্র ১.২ জন মানুষের কম্প্যুটার ছিল। ওই সময় আমেরিকায় প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের কম্প্যুটার ছিল। কিন্তু ২০০০সাল থেকে চীনের সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠল ইন্টারনেট ক্যাফে। এবং সেখানে তরুণদের ভিড় উপছে পড়তে শুরু করল।
চীনে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের জন্য কিউকিউ-এর মত প্রোগ্রাম ইমেলের চেয়ে অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে উঠল। দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার যত প্রসার লাভ করতে শুরু করল, এর জনপ্রিয়তাও ততই বাড়তে থাকল।
এসব ক্যাফে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল মূলত কিউকিউ-এর কারণে। কিউকিউ-এ কম্প্যুটারে গেম খেলা যেত, গানবাজনা শোনা যেত এবং চীনে সেই প্রথমদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছোট ছোট ব্লগ লেখা যেত এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
কিউকিউ ইমেলের চেয়ে বেশি ও সহজে দ্রুত যোগাযোগের সুযোগ করে দিয়েছিল মানুষকে। ইনস্টান্ট মেসেজিং বা অনলাইনে সরাসরি কথোপকথনের একটা পথ তখনই তৈরি করে দিয়েছিল কিউকিউ। ভবিষ্যতের চীনকে নিয়ে ২০০৮ সালে ‘সুপারট্রেন্ডস অফ ফিউচার চায়না’ বইয়ের লেখক জেমস ইউয়ান ও জেসন ইঞ্চ বলেছিলেন, চীনে কারো কিউকিউ নেই এটা ভাবাই যায় না।
বড় বড় কোম্পানির ব্যবসায়ীরা তাদের বিজনেস কার্ডে কিউকিউ নম্বর ছাপাতেন। প্রত্যেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিউকিউ অ্যাকাউন্ট নম্বর ছিল। দুহাজার বারো সালের মধ্যে সক্রিয়ভাবে কিউকিউ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭৯ কোটি ৮০ লাখ, যা ছিল সেই বছর চীনের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি।
এই টেনসেন্ট কোম্পানিই ২০১১ সালে উদ্ভাবন করেছে উইচ্যাট অ্যাপ, যা চীনে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। একই সাথে চীনে কম্প্যুটার বিদায় নিচ্ছে, তার জায়গা নিচ্ছে স্মার্ট ফোন।
চীনে ২০০৪ সাল থেকে ডিজিটাল উদ্ভাবন বিষয়ে উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন ব্রিটেনের ম্যাথিউ ব্রেনান। তিনি বলছেন, বহু দেশে ইমেল ঠিকানা থাকাটা মানুষের পরিচিতির একটা অংশ, কারণ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে গেলে তার জন্য নথিভুক্ত হতে ইমেল ঠিকানা ব্যবহার করতে হয়।
কিন্তু চীনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সব কিছু করা সম্ভব। ‘উইচ্যাট’ এবং আলিবাবার তৈরি অ্যাপ ‘আলিপে’তে একবার লগ ইন করে বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যায়, আলাদা আলাদা লগ ইন-এর প্রয়োজন হয় না-একটা অ্যাপের মাধ্যমেই অ্যাপয়েন্টমন্ট বুক করা থেকে শুরু করে, বাজার দোকান করা, অফিস বা ব্যবসা করা এবং বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা সবই করা যায়- ইমেলের কোন প্রয়োজন হয় না।
দ্রুত আদান-প্রদানের সংস্কৃতি
চিউং কং গ্র্যাজুয়েট স্কুল ফর বিজনেসের অর্থনীতির অধ্যাপক ঝং লিং মনে করেন, চীনের কর্ম সংস্কৃতির সাথে উইচ্যাট খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলছেন, এই চ্যাট অ্যাপে যে কোন সময়ে, যে কোন জায়গা থেকে যে কোন কাজ করা যায় – আপনাকে ব্যবসা বা অফিসের কাজের জন্য অফিসের সময়ের ওপর নির্ভর করতে হবে না। কোন কিছু চাইলে তার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, যা চাইছেন তা সাথে সাথে পাওয়া যাবে, যেটা চীনের সংস্কৃতি, মানসিকতা ও ব্যবসার পরিবেশের সাথে খুবই খাপ খায়।
মিস ঝং বলছেন, চীনে মানুষের কাজের সময় আর ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে সীমানাটা বেশ দুর্বল। ফলে চাকুরিদাতারা বা ম্যানেজাররা প্রায়ই কাজের সময়ের বাইরে প্রশ্ন জানতে চেয়ে কর্মচারীদের বার্তা পাঠান বা তাদের কাজ করতে বলেন। খুবই সামান্য একটা উত্তরের জন্যও তারা পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা পছন্দ করেন না।
ইমেলে বার্তা আদান প্রদান করতে যে সময়টা দিতে হয়, তাতে হয়ত একটা বিষয় নিয়ে কয়েকবার মেইল চালাচালির প্রয়োজন হয়, কিন্তু উইচ্যাটে খুব দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের মাধ্যমে কাজ করা যায়, বলছেন মিস ঝং। ফলে এই দ্রুত ও সহজ মেসেজিং অ্যাপ মানুষের ওপর সবসময় কাজ করার বাড়তি একটা চাপও তৈরি করেছে।
দ্রুত উত্তরের যুগ
যোগাযোগের একটা প্ল্যাটফর্ম যখন তৈরি হয় তখন তা ব্যবহারেরও একটা ধারা তৈরি হয়ে যায়। যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ – উইচ্যাটের মত এসব যোগাযোগ মাধ্যমেও কেউ কিছু জানতে চাইলে মানুষ সাথে সাথে উত্তর পাবে বলে আশা করে।
ব্রেনান বলছেন, ইমেল অনেকটা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের মাধ্যম – সেখানে মেইলের শুরুতে – প্রিয় বা সম্মানিত অমুক, ও শেষে- শ্রদ্ধান্তে বা শুভেচ্ছান্তে তমুক এবং এমনকী বয়ানেও অনেকটা পুরনো চিঠি লেখার স্টাইল অনুসরণ করা হয়। ফলে ইমেল লিখতে সময় লাগে।
তিনি বলছেন, চীনে তো বটেই, এমনকি এশিয়ার অনেক দেশে এখন ইমেল বাদ দিয়ে চ্যাট অ্যাপ কাজের ক্ষেত্রে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে। কারণ চ্যাট অ্যাপে আনুষ্ঠানিক হবার প্রয়োজন নেই। দ্রুত প্রশ্ন পাঠানো এবং দ্রুত তার জবাব পাওয়াটাই সেখানে মুখ্য।
প্রফেট নামে একটি উপদেষ্টা সংস্থা যারা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজ করে, তার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা অ্যালান কেসি বলছেন, চীনের মতই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এখন কম্প্যুটার যুগকে পেছনে ফেলে মোবাইল ভিত্তিক অ্যাপের যুগে দ্রুত উত্তরণ ঘটাচ্ছে। এবং দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে ফেসবুক, উইচ্যাট, লাইন, কাকাও টক এবং জেলোর মত বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্ম।
ব্যবসা বান্ধব অ্যাপ
চীনে উইচ্যাট ছাড়াও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং যারা আরও ব্যাপক পর্যায়ে কর্মীদের কাছ থেকে কাজ পেতে চান তাদের জন্য তৈরি হয়েছে ব্যবসা বান্ধব অ্যাপ। আলিবাবা তৈরি করেছে ‘ডিংটক’ বাইটডান্স তৈরি করেছে ‘লার্ক’, উইচ্যাটও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি করেছে ‘উইচ্যাট ওয়ার্ক’।
এসব অ্যাপের মাধ্যমে উঁচু পর্যায়ের নিরাপত্তা বজায় রেখে বড় বড় নথি শেয়ার করা যায়, অনলাইনে নথি রদবদল করা যায়, মানুষের বেতন সংক্রান্ত কাজকর্ম করা যায়। ডিংটক অ্যাপে সরাসরি দেখা যায় আপনার পাঠানো মেসেজ যিনি পেয়েছেন তিনি পড়েছেন কিনা, না পড়লে তাকে পড়ার জন্য আবার মেসেজ করা যায়।
পশ্চিমের অবস্থা
তিরিশ বছর বয়সী হেইলান জিয়া একটি চীনা ক্রিপটোকারেন্সি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ ম্যানেজার। তার স্বামীর সঙ্গে থাকার জন্য ২০১৮ সালে তিনি বেজিং থেকে ইংল্যান্ডে চলে এসেছেন।
তিনি বলছেন, ব্রিটেনে অনলাইন সেবা খুবই ছড়ানো। একেকটা কাজের জন্য আপনাকে অনলাইনে একেকটা সেবা প্রতিষ্ঠানে লগ ইন করতে হবে। কিন্তু চীনে উইচ্যাটে গেলে সব কিছু একসাথে এক জায়গায় আছে।
“আপনার উইচ্যাট অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনি সব রকম কাজ এক অ্যাপ থেকেই করতে পারবেন।”
“ইংল্যান্ডে আমাকে অনবরত ইমেল চেক করতে হয়, চীনে আমি কখনও ইমেল খুলতাম না, কেউ সেখানে ইমেল দেখে না। ইমেলে জবাব দেবার জন্য কোন প্রত্যাশাও সেখানে নেই,” বলেন হেইলান জিয়া।
তবে চীনে কেউ ইমেল একেবারেই ব্যবহার করে না সেটা ঠিক নয়। অনেকেরই ইমেল অ্যাকাউন্ট আছে, কিন্তু তারা ইমেল খুলে তা দেখেন খুবই অনিয়মিতভাবে। ব্রেনান বলছেন, বেজিং এবং সাংহাইতে যারা কাজ করেন তারা যেহেতু আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সাথে বেশি পরিচিতি তারা তুলনামূলকভাবে বেশি ইমেল খোলেন।
আমার পুরনো শিক্ষার্থীরা
গোড়াতেই যে বলছিলাম আমি যখন চীনে ইংরেজি শিক্ষকতা শেষ করেছিলাম আমার পুরনো শিক্ষার্থীদের বলেছিলাম যোগাযোগ রাখার জন্য তাদের ইমেল দিতে। এদের একজন ছিলেন ইয়াংশু লিলি ওয়াং। আমরা কিছুকাল ইমেলে যোগাযোগ রেখেছিলাম। তারপর আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এখন তার বয়স ৩০। দক্ষিণ চীনে গুয়াংডং-এ তিনি থাকেন। বছর দুয়েক আগে তাকে আমি উইচ্যাটে খুঁজে পাই। এখন উইচ্যাটে আমাদের কথা হয়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম পুরনো সেই ইমেল অ্যাড্রেসটা কি তার এখনও আছে?
সে জানতে চাইল কোনটা? হেসে বলল, “আমার তো অনেকগুলো ঠিকানা ছিল ১৬৩, ১২৬, এমএসএন।”
সে বলল, শেষ কবে যে সে ইমেল ব্যবহার করেছে তার মনে পড়ে না।
“এখন আমি উইচ্যাট ব্যবহার করি। কিউকিউ খুব একটা ব্যবহার করি না, মাঝে মাঝে করি,” সে বলল। চীনে লিলি ওয়াংয়ের মত বেশির ভাগ মানুষের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ এখন উইচ্যাট। ইমেল তাদের জন্য অতীতের কোন একটা প্রযুক্তি। সূত্র: বিবিসি বাংলা