প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সারা পৃথিবী যখন থমকে, তখন মোবাইল ক্যামেরায় ওয়েব ফিল্ম নির্মাণ করে চমক সৃষ্টি করেছেন তরুণ নির্মাতা আহমেদ জিহাদ। শ্যুটিং বা ডাবিং বন্ধ থাকলেও ঘরবন্দী মানুষের বিনোদনের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সীমিত পরিসরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ওয়েব ফিল্মটি নির্মাণ করেন তিনি। আর এটিই দেশে মোবাইল ক্যামেরায় নির্মিত প্রথম কোন থ্রিলার ওয়েব ফিল্ম।

গতকাল (৩১ আগস্ট) ‘থ্রি’ নামের এই ওয়েব ফিল্মটির দুই মিনিটের একটি ট্রেলার উন্মুক্ত করা হয়েছে।

‘থ্রি’ প্রসঙ্গে পরিচালক আহমেদ জিহাদ জানান, লকডাউনের সময় কলকাতায় আটকে পড়া তিন তরুণকে নিয়ে এর গল্প। এর কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ তিনি নিজেই লিখেছেন। বাংলাদেশ থেকে বসে ভার্চুয়ালি ছবিটি পরিচালনা করেছেন আহমেদ জিহাদ। ভিডিও কলের মাধ্যমে সার্বিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তিন অভিনেতা অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেরাই ক্যামেরা চালিয়েছেন।

জিহাদ বলেন, ‘লকডাউনের সময় আমার অভিনেতাদের সঙ্গে ছবিটি নিয়ে কথা বলি। তারা সবাই রাজি হয়ে যায়। জিরো বাজেটের ছবি। কেউ কোন পারিশ্রমিক নেননি। আসলে আমরা এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। চেয়েছি জিরো বাজেটেও ছবি নির্মাণ সম্ভব তা দেখিয়ে দিতে।’

স্বল্প বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোন সময়েই আমি বাজেটকে প্রয়োরিটি দেই না। আমি চিন্তা করি যে, গল্পটাই আসল। গল্পটা যদি আমার কাছে ভালো মনে হয়, তাহলে ক্যামেরার কোয়ালিটি কি, বাজেট কতো.. এগুলো কোন ব্যাপার মনে হয় না। আগের সময়ে যে সাদাকালো ক্যামেরাগুলো ছিলো, সেগুলো কিন্তু এখনকার মোবাইল ক্যামেরার থেকেও খারাপ অবস্থা ছিলো। ঐ তুলনায় তখন অনেক মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছে। অনেক সিনেমা এখনও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। এটা কিন্তু ভালো ক্যামেরা বা বাজেটের জন্য হয়নি, এটা হয়েছে ভালো গল্প আর অভিনয়ের জন্যই। আমার সিনেমাটাও আশা করি দেখলে সাধারণ দর্শকরা অনেক আনন্দ পাবে।’

তরুণ নির্মাতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক দিন চলচ্চিত্র অঙ্গন থমকে আছে, অনেকদিন নতুন কোন কাজ নেই। এমনকি এই করোনা কতোদিন থাকবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। এভাবে তো একটা দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেমে থাকতে পারে না। তরুণদের উচিত এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা। সময় ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর বাজেটের জন্য বসে থাকার সুযোগ নেই, কাজে নেমে পড়তে হবে। আমি মনে করি, মনের বাজেটই বড় বাজেট।’

লকডাউনে ‘থ্রি’ ওয়েব ফিল্মে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে অভিনেতা সাঞ্জু জন বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা। আমরা কলকাতায় বসেই ফোনে নির্মাতার কাছ থেকে সব জেনে নিয়ে নিজেরাই নিজেদের মতো করে অভিনয় করেছি। এমনকি ডিওপি হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ এসেছে এই ফিল্মে কাজ করার মাধ্যমে। গল্পটা খুবই সুন্দর। থ্রিলার এবং সাসপেন্স সবই আছে এই গল্পে। অভিনয় করার সময়ই বুঝতে পেরেছি এটা ভিন্নধর্মী একটি কাজ হতে যাচ্ছে। আশাকরি সবার কাছেই ভালো লাগবে।’

ওয়েব ফিল্মটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাঞ্জু জন, ইমতু রাতিশ ও তন্ময়। সাউন্ড ডিজাইনে ছিলেন মজুমদার ইশতি। মিউজিক কম্পোজার হিসেবে মুম্বাইয়ের রজত এবং সুনীল। ‘থ্রি’ ফিল্মের টাইটেল ট্র‍্যাক তাদেরই করা। বলা যায় পুরোপুরি সিনেমার আমেজ নিয়েই কাজ করা হয়েছে এই ওয়েবফিল্মের। গতানুগতিকের বাইরে এসে দর্শকেরা নতুনত্বের স্বাদ পাবেন এই ফিল্ম দেখে এটাই আশা ফিল্ম সংশ্লিষ্ট সকলের।

ওয়েব ফিল্ম ‘থ্রি’য়ের একটি দুই মিনিট দৈর্ঘ্য ট্রেলার উন্মুক্ত করা হয়েছে এস লেবেল নামক ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পুরো ছবিও দেখা যাবে চ্যানেলটিতে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রিলিজ পাবে ওয়েব ফিল্ম ‘থ্রি’।

এদিকে আহমেদ জিহাদ ‘বিচ্ছু’ নামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি বানাচ্ছিলেন। করোনার কারণে সেটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। করোনা শেষ হলে আবার শুটিং শুরু হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে