Dhaka ০৫:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চায় সোনালী ব্যাংক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৩৯:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০২০
  • ১৩১ Time View

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এতথ্য জানান সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান।

গত বছরের ২৭ আগস্ট দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংকটিতে এমডি হিসেবে যোগদান করেন আতাউর রহমান প্রধান। গত এক বছরের ব্যাংকটির সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মূলধনের বিষয়ে মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি অনেক আগে থেকে। চলতি বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ থেকে ছাড় গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য মূলধন ঘাটতির পরিবর্তে উদ্বৃত্ত দেখাচ্ছে। তবে যেহেতু ঘাটতি আছে তাই ব্যাংকটির মালিক সরকারের কাছে মূলধনের জন্য অর্থ চাওয়া হয়েছে। নগদ টাকা, গ্যারান্টিসহ তিনটি পৃথক ফর্মের যেকোন একটি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ চাওয়া হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেলে ব্যাংকটির মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী হবে।

তিনি আরও বলেন, সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নিয়ে সবাই কথা বলে। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের বাস্তব অবস্থা নিয়ে কেউ কথা বলেনা। সোনালী ব্যাংক এ পর্যন্ত ১১ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে সরকারকে দিয়েছে। সরকারের ৩৭ সেবা বিনামূল্যে দিচ্ছে। আবার লিমিটেড কোম্পানি করার সময় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। সেটিও পর্যায়ক্রমে লাভ থেকে পূরণ করা হয়েছে। এসব না করতে হলে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নয় উদ্বৃত্ত থাকতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ৩ কোটি ৩৫ লাখ উদ্বৃত্ত রয়েছে। যেখানে মার্চে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ও ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। আর এই ঘাটতি পূরণে গত জুলাইয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে সোনালী ব্যাংক।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র দাস বলেন, মূলধনের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হিসাবভিত্তিক, বাস্তবভিত্তিক নয়। আন্তর্জাতিক ব্যাসেল নীতিমালা অনুসারে ১০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। আর যেসব ব্যাংকের দেশের জিডিপিতে বড় অবদান রাখে সেসব ব্যাংককে সিস্টেমিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সোনালী ব্যাংক এই ক্যাটাগরিতে পড়ায় ব্যাসেল-৩ অনুসারে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। বাস্তবে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে আমানত ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এ বছরের জুলাইয়ের তা বেড়ে হয়েছ ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা ৪৭৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২২০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। আর লোকসানী শাখা ৫৮টি থেকে কমে হয়েছে ৫০টি।

এমডি বলেন, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সোনালী ব্যাংক। করোনাকালীন পাঁচ মাসে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সোনালী ব্যাংক পাঁচ বছর এগিয়ে গেছেন বলে মনে করেন তিনি। এরইমধ্যে ব্যাংকের ১ হাজার ২২৪ টি শাখায় অনলাইন কার্যক্রম শুরু হযেছে। ঘরে বসে গ্রাহকরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। আগামী মাস থেকে পুরোদমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলেও জানান আতাউর রহমান।

আতাউর রহমান প্রধান বলেন, করোনাকালের সংকট মোকাবেলায় কাজ করছে সোনালী ব্যাংক। কাজ করতে গিয়ে ১১০০ কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, ১১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যেও অর্থীতিকে চাঙ্গা করতে প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে। ৩০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের মধ্যে সোনালী ব্যাংক বিতরণ করবে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অন্য প্যাকেজগুলোর দ্রুত কাজ চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চায় সোনালী ব্যাংক

Update Time : ০১:৩৯:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০২০

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এতথ্য জানান সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান।

গত বছরের ২৭ আগস্ট দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংকটিতে এমডি হিসেবে যোগদান করেন আতাউর রহমান প্রধান। গত এক বছরের ব্যাংকটির সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মূলধনের বিষয়ে মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি অনেক আগে থেকে। চলতি বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ থেকে ছাড় গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য মূলধন ঘাটতির পরিবর্তে উদ্বৃত্ত দেখাচ্ছে। তবে যেহেতু ঘাটতি আছে তাই ব্যাংকটির মালিক সরকারের কাছে মূলধনের জন্য অর্থ চাওয়া হয়েছে। নগদ টাকা, গ্যারান্টিসহ তিনটি পৃথক ফর্মের যেকোন একটি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ চাওয়া হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা পাওয়া গেলে ব্যাংকটির মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী হবে।

তিনি আরও বলেন, সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নিয়ে সবাই কথা বলে। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের বাস্তব অবস্থা নিয়ে কেউ কথা বলেনা। সোনালী ব্যাংক এ পর্যন্ত ১১ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে সরকারকে দিয়েছে। সরকারের ৩৭ সেবা বিনামূল্যে দিচ্ছে। আবার লিমিটেড কোম্পানি করার সময় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। সেটিও পর্যায়ক্রমে লাভ থেকে পূরণ করা হয়েছে। এসব না করতে হলে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নয় উদ্বৃত্ত থাকতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ৩ কোটি ৩৫ লাখ উদ্বৃত্ত রয়েছে। যেখানে মার্চে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ও ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। আর এই ঘাটতি পূরণে গত জুলাইয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে সোনালী ব্যাংক।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র দাস বলেন, মূলধনের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হিসাবভিত্তিক, বাস্তবভিত্তিক নয়। আন্তর্জাতিক ব্যাসেল নীতিমালা অনুসারে ১০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। আর যেসব ব্যাংকের দেশের জিডিপিতে বড় অবদান রাখে সেসব ব্যাংককে সিস্টেমিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সোনালী ব্যাংক এই ক্যাটাগরিতে পড়ায় ব্যাসেল-৩ অনুসারে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। বাস্তবে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে আমানত ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এ বছরের জুলাইয়ের তা বেড়ে হয়েছ ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা ৪৭৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২২০ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। আর লোকসানী শাখা ৫৮টি থেকে কমে হয়েছে ৫০টি।

এমডি বলেন, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সোনালী ব্যাংক। করোনাকালীন পাঁচ মাসে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সোনালী ব্যাংক পাঁচ বছর এগিয়ে গেছেন বলে মনে করেন তিনি। এরইমধ্যে ব্যাংকের ১ হাজার ২২৪ টি শাখায় অনলাইন কার্যক্রম শুরু হযেছে। ঘরে বসে গ্রাহকরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন। আগামী মাস থেকে পুরোদমে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলেও জানান আতাউর রহমান।

আতাউর রহমান প্রধান বলেন, করোনাকালের সংকট মোকাবেলায় কাজ করছে সোনালী ব্যাংক। কাজ করতে গিয়ে ১১০০ কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, ১১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যেও অর্থীতিকে চাঙ্গা করতে প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে। ৩০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের মধ্যে সোনালী ব্যাংক বিতরণ করবে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। অন্য প্যাকেজগুলোর দ্রুত কাজ চলছে।