কয়েক সপ্তাহ ধরে থাইল্যান্ড জুড়ে বিক্ষোভ চলছে। প্রতিদিনই দেশিটিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থি শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের উপর ধরপাকড় চালাচ্ছে দেশটির প্রশাসন। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ ও করোনা আইন ভঙ্গের অভিযোগে প্রায় ডজন খানেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা রাজতন্ত্র, সংবিধান ও রাজনৈতিক সংস্কার চাচ্ছেন এবং এজন্য প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওছার পদত্যাগ দাবি করেছেন। 

থাই আইন অনুযায়ী, রাজপরিবারের সমালোচনা করলে দীর্ঘদিন কারাভোগের বিধান রয়েছে। ২০১৪ সালে সাবেক সেনাপ্রধান প্রায়ুত এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজাকে তার নিয়ন্ত্রণে নেন। পাঁচ বছর জান্তা শাসনে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর গত বছর নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। বেসামরিক সরকার পরিচালনার জন্য প্রায়ুতকে ভোট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটিই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ প্রায়ুত আগের চরিত্রেই আছেন।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন ও নাগরিকদের হয়রানির সব বিধান বিলুপ্ত করতে হবে। তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রাজপরিবারের সমালোচনায় ১৫ বছর কারাভোগ থেকে মৃত্যুদণ্ডের আইনও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এসব দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিলেও অনেকে আবার ‘রাজতন্ত্রকে স্পর্শ’ না করতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।

গত বছরের নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, আন্দোলনকারীদের এমন দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন প্রায়ুথ চান-ওচা। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি- সাড়ে ছয় কোটির বেশি জনগণের বেশিরভাগই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একমত নন। তারা যাতে রাজতন্ত্র নিয়ে কোনো কথা না বলে, সে বিষয়েও সাবধান করে দেন তিনি। তবে রাজপ্রাসাদ থেকে এখনও আন্দোলন নিয়ে মুখ খোলেনি কেউ।

একসময় থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্র কিংবা রাজার বিপক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলা অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু গত জুলাইতে এই ট্যাবু ভেঙে দিয়েছেন কয়েকজন আন্দোলনকারী। তাদের মধ্যে অগ্রগামী ৩৬ বছর বয়সি আইনজীবী আনোন নাম্পা। রাজাকে অবমাননা করা হলে ১৫ বছরের জেল হতে পারে- এমন আইন সত্ত্বেও তিনি ভয় পান না। ক্ষমতায় সংস্কারের ডাক দিয়ে চলতি মাসের শুরুতে শুরু হওয়া হ্যারি-পটার ধাঁচের যে বিক্ষোভ ব্যাংকককে শুরু হয় তাতে আইনজীবী আনন নাম্পা প্রথম থেকেই সম্পৃক্ত আছেন। বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেফতার হয়েছেন আন্দোলনকারীদের এই পথিকৃৎ।

সেনাপ্রধান আপিরাত কংসোমপং সতর্ক করেছেন, ঘৃণা জাতির জন্য একটি অসহনীয় রোগ। আর প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহেই আন্দোলনকারীদের দাবি ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেন। যদিও পরে তিনি ঐক্যের ডাক দেন। এমন অবস্থায় থাইল্যান্ডের বিক্ষোভের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্লেষকরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। রাজপরিবারের বিষয়ে নরেসুয়ান ইউনিভার্সিটির পল চ্যাম্বার্স বলেন, আন্দোলনকারীরা কার্যকর জিনিসই সামনে এনেছেন। কিন্তু ইতিহাস ভয়কে সামনে আনছে। ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে এমনই এক আন্দোলনের সমাপ্তি হয়েছিল থামসাত ইউনিভার্সিটিতে গণহত্যার মধ্য দিয়ে। রাজতন্ত্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের মদদে সামরিক বাহিনী গুলি ও পিটিয়ে শিক্ষার্থীদের হত্যা করে।

উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডে জনসভায় বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী জড়ো করতে অভিনব সৃজনশীলতা ব্যবহার করছে থাই তরুণরা। সাম্প্রতিক বেশ কিছু প্রতিবাদসভায় তরুণরা সৃজনশীল কায়দায় পপ তারকাদের বেশ কয়েকটি প্রতীক ব্যবহার করে বিক্ষোভ করেছে। প্রথমত এইসব প্রতীক খুবই জনপ্রিয় এবং মানুষের কাছে সুপরিচিত। এছাড়াও ভিন্নমত দমনে থাই সরকার যে সেন্সরশিপ ব্যবস্থা এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন জারি করেছে সেগুলো পাশ কাটানোর উপায় হিসাবেও তরুণরা এইসব প্রতীকের দিকে ঝুঁকছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে