মাও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। আজ রোববার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা একথা বলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, একটি শিশুর জন্ম শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির ভবিষ্যতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের সময় এবং নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলেই আমরা শিশুর সুস্থতা ও বিকাশ নিশ্চিত করতে পারব। এ জন্য সরকার গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসব, নবজাতকের যত্ন এবং মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, কেবল সরকার নয়-এই লক্ষ্য অর্জনে জনসচেতনতা, পরিবার ও সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ শিশু জন্মের জন্য আমাদের প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে, গর্ভবতী মায়েদের যথাযথ যত্ন নিতে হবে এবং স্বাস্থ্য সেবাকে আরও সহজলভ্য ও সমন্বিত করতে হবে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের মা ও শিশুদের জন্য একটি উজ্জ্বল ও সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারব।
বর্তমানে ৫০ শতাংশ শিশু হাসপাতালে জন্ম নিচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ৫০ শতাংশ শিশু হাসপাতালে জন্ম নিলেও বাকি ৫০ শতাংশ জন্ম নিচ্ছে অদক্ষ ধাত্রীদের মাধ্যমে। এর ফলে প্রায়ই প্রসবকালীন সময়ে শিশুদের অক্সিজেন ঘাটতি এবং মস্তিষ্কে আঘাত লাগে। এসব ক্ষেত্রে স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং পরে অটিজমের মতো লক্ষণে প্রকাশ পেতে পারে। এ কারণেই দেশে দিন দিন অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। সচেতন না হলে ভবিষ্যতে এই হার আরও বাড়বে বলে জানা তিনি।
নারীর মর্যাদা ও বাল্যবিয়ে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা নারীকে নারী হিসেবে, মাকে মা হিসেবে কতটুকু মর্যাদা দিচ্ছি? গ্রাম পর্যায়ে নারীরা আজও অবহেলিত। এখনও দেশে বালিকা বিবাহের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। কিশোরী মেয়েরা বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে, যখন তার নিজেরই যত্ন প্রয়োজন, তখন বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে, বাচ্চার যত্ন করছে। এটা অপরাধ। এই অপরাধ সবাই দেখছি, কিন্তু কিছুই করছি না। এটা প্রতিরোধের পথে আমরা হাঁটছি না। এদিকে সবারই নজর দেওয়া দরকার। জন্ম তখনি সুরক্ষিত হবে, যদি আমরা সচেতন হই। এই প্রবণতা বন্ধ না করলে সুস্থ শিশুর জন্ম সম্ভব নয়, বরং মাতৃমৃত্যুর হার বাড়বে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর সূর্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশেদ মোহাম্মদ।