Dhaka ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেভাবে ত্বকের তারুণ্যের মেয়াদ বাড়বে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৪৪:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০
  • ১৪৯ Time View

শরীরের ঘড়িটাকে অর্থাৎ বয়সটাকে এক জায়গায় থামিয়ে দেওয়ার পদ্ধতি থাকলেও, সেই পদ্ধতিগুলি কি সবই কৃত্রিম, কষ্টকর? রূপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এজিং’ জৈবিক প্রক্রিয়া। সেটিকে পুরোপুরি থামাতে না পারলেও ক্যামেরা বা আয়নার চোখে বয়স ফাঁকি দেওয়ার কিছু কৌশল আছে। স্বাভাবিক উপায়ে, নিয়মিত রূপচর্চা ও জীবনাভ্যাসে কিছু শৃঙ্খলা মেনে চলুন। ত্বকের তারুণ্যের মেয়াদ বাড়বে।

আঠারো বছর বয়সে অধিকাংশ মানুষের ত্বকই ঈর্ষণীয়। তখন থেকেই ত্বকের যত্ন  শুরু করতে হবে। তাহলে আটচল্লিশেও ত্বকের জেল্লা অনেকখানি বজায় থাকবে। আর যদি ভাবেন, এখন থাক পরে শুরু করব। ভুল করবেন। চামড়ায় জাঁকিয়ে বসবে বয়স আর সময়। তখন কিন্তু ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনা বেশ মুশকিল।

ত্বকের যত্ন শুরু করুন:

ত্বকে কত দিনের মধ্যে বয়সের দাগ পড়বে, তা প্রথম যৌবনেই ঠিক হয়ে যায়। কারণ তা নির্ভর করে যত্নের উপরে। তাই ই কম বয়স থেকেই ত্বকের যত্ন শুরু করুন।
• দূষণের সংস্পর্শে এসে ত্বক দ্রুত বিবর্ণ ও শিথিল হয়, কুঁচকে যায়। ডার্ক স্পট দেখা দেয়। তাই বাইরে বেরোলে যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখবেন। যে অংশ বাইরে বেরিয়ে থাকবে, সেখানে ওয়াটার রেজ়িস্ট্যান্ট এবং এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন লাগান। বাড়ি এসে ভাল ভাবে স্নান করে নিন। মেকআপ লাগালে খুব ভাল ভাবে পরিষ্কার করবেন।
• ত্বকের ক্লেনজিিং, টোনিং, সেরাম ও ময়শ্চারাইজ়িং-এর রুটিন মানার সময়ে ত্বকের প্রতি যত্নশীল হন। জোরে ঘষবেন না। কোমল ভাবে ক্রিম লাগাবেন। প্রত্যেক দিন স্ক্রাব করবেন না। বদলে স্পঞ্জ দিয়ে মুখ মুছে নিন। আঙুলের আলতো স্পর্শে বৃত্তাকার ভাবে, আপওয়ার্ড স্ট্রোক-এ ক্রিম মাসাজ করুন।
• ঘেমে গেলেই ভাল করে মুখ পরিষ্কার করবেন। এসি-তে থাকলে ঘন ময়শ্চারাইজ়ার ও বডি লোশন মাখা জরুরি।
• স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের রুটিন মেনে চলুন। শরীরের উপর অত্যাচার করলে আগেভাগেই বয়স্ক দেখাবে। স্ট্রেসে লাগাম টানার চেষ্টা করুন।
• ভুরু কোঁচকানোর অভ্যেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এতে কপালে ভাঁজ পড়ে। বালিশে মুখ গুঁজে শোবেন না। ত্বকে চাপ পড়ে কুঞ্চন আসতে পারে।
• কোনও প্রসাধনী, ক্রিম  বা লোশন লাগিয়ে যদি মনে হয় গরম লাগছে, ত্বক জ্বলছে, ওটি আর ব্যবহার করবেন না।
• ২২ বছর বয়সের পর নিয়মিত ফেসিয়াল, ফেস মাসাজ ও নাইট ক্রিম ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নিন। ত্রিশ ছুঁইছুঁই হলেই রেটিনল-সমৃদ্ধ অ্যান্টি এজিং প্রডাক্ট ব্যবহার শুরু করে দিন। এই সময় থেকেই আলাদা করে আন্ডার-আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনুন:

সময় থাকতে হয়তো ত্বকের যত্ন করা হয়নি।  কিন্তু বয়স ঘনাতেই মেনোপজ় হরমোনগুলির সৌজন্যে ত্বকের বলিরেখা, দাগছোপগুলি প্রকট হয়ে উঠেছে। তখন এই এজ স্পটগুলি ঠিক করতে চাইলে, ত্বকে কী সমস্যা হচ্ছে সেটা প্রথমে বুঝে নিতে হবে। চামড়া ঝুলে আসলে কোলাজেন সমৃদ্ধ ক্রিম বা স্কিন লোশন ব্যবহার করুন।

বাইরের জল হাওয়ার প্রভাবেও ত্বকের কোলাজেন তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। ত্বকের উপরের পরতটি পাতলা হয়ে যায়। রেটিনয়েড, কোলাজেন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রডাক্টগুলি এই নষ্ট কোষ মেরামত করতে পারে। স্কিন টাইটনিং বা ফার্মিং প্রডাক্টে এই উপাদানগুলি আছে কি না, দেখে কিনুন। ব্যবহারের সময় যথা সম্ভব কম ঘষবেন। আলতো চাপড়ে (প্যাট) অ্যান্টি এজিং প্রডাক্ট লাগান।

ডার্ক স্পটে অ্যান্টি এজিং সেরাম লাগান। ত্বকের যেখানে ভাঁজ পড়ছে, সেখানে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ক্রিম, পেপটাইড বা স্কিন বুস্টার সেরাম লাগাতে পারেন। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি ফাইভ যুক্ত বুস্টার সেরাম কার্যকর। ত্বকের ছিদ্র উন্মুক্ত হয়ে গেলে ‘পোর টোনার’ লাগানো যায়।
ব্যায়াম করুন নিয়মিত। মন শান্ত রাখতে মেডিটেশন করুন। কম তেলমশলা স্বাস্থ্যকর খাবার খান, পরিমাণ মতো জল খান। ঘুমকে অবহেলা করবেন না। সকলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখুন, তাতে মন ভাল থাকবে। এগুলিই তারুণ্যের বিশল্যকরণী।

পাশে আছেন চিকিৎসক:

মডেলিং, অভিনয়, বিমান পরিষেবাসহ আরো কিছু পেশায় সুন্দর, সজীব ও ঝকঝকে ত্বক প্রায় অপরিহার্য। সেগুলি পেতে অনেকে আধুনিক চিকিৎসার সাহায্য নেতে হবে।  চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর জানালেন কিছু ট্রিটমেন্টের সাহায্যে ত্বকে বয়সের ছাপও মুছে ফেলা যায়। ডার্ম্যাব্রেশন (উঁচু-নিচু ত্বক মসৃণ করে), ডার্মাল ফিলার (ত্বকের গর্তে আর্টিফিশিয়াল কোলাজেন, লিকুইড প্যারাফিন, ফ্যাট ফিলার প্রভৃতি ইঞ্জেক্ট করা হয়), প্লাস্টিক রিকনস্ট্রাকশন (যেখানে গর্ত হয়েছে, অন্য জায়গার চামড়া নিয়ে সেখানে ভরে দেওয়া)-এর মতো চিকিৎসা আকছার করানো হচ্ছে। দু’চার বছর পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কুঞ্চিত অংশে বোটক্স ইঞ্জেকশন। তবে এর মেয়াদ বড় জোর দেড় বছর।

অবশ্য শুধু মুখের সৌন্দর্যের কথা ভাবলেই বা চলবে কেন? গলা, হাত-পা-কেও কিন্তু সময়ের থাবা থেকে রক্ষা করতে হবে। খুব গরমকাল ছাড়া অন্য সময়ে বাকি শরীরে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে দেখুন। চমকপ্রদ ফল পাবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

যেভাবে ত্বকের তারুণ্যের মেয়াদ বাড়বে

Update Time : ০৪:৪৪:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০

শরীরের ঘড়িটাকে অর্থাৎ বয়সটাকে এক জায়গায় থামিয়ে দেওয়ার পদ্ধতি থাকলেও, সেই পদ্ধতিগুলি কি সবই কৃত্রিম, কষ্টকর? রূপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এজিং’ জৈবিক প্রক্রিয়া। সেটিকে পুরোপুরি থামাতে না পারলেও ক্যামেরা বা আয়নার চোখে বয়স ফাঁকি দেওয়ার কিছু কৌশল আছে। স্বাভাবিক উপায়ে, নিয়মিত রূপচর্চা ও জীবনাভ্যাসে কিছু শৃঙ্খলা মেনে চলুন। ত্বকের তারুণ্যের মেয়াদ বাড়বে।

আঠারো বছর বয়সে অধিকাংশ মানুষের ত্বকই ঈর্ষণীয়। তখন থেকেই ত্বকের যত্ন  শুরু করতে হবে। তাহলে আটচল্লিশেও ত্বকের জেল্লা অনেকখানি বজায় থাকবে। আর যদি ভাবেন, এখন থাক পরে শুরু করব। ভুল করবেন। চামড়ায় জাঁকিয়ে বসবে বয়স আর সময়। তখন কিন্তু ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনা বেশ মুশকিল।

ত্বকের যত্ন শুরু করুন:

ত্বকে কত দিনের মধ্যে বয়সের দাগ পড়বে, তা প্রথম যৌবনেই ঠিক হয়ে যায়। কারণ তা নির্ভর করে যত্নের উপরে। তাই ই কম বয়স থেকেই ত্বকের যত্ন শুরু করুন।
• দূষণের সংস্পর্শে এসে ত্বক দ্রুত বিবর্ণ ও শিথিল হয়, কুঁচকে যায়। ডার্ক স্পট দেখা দেয়। তাই বাইরে বেরোলে যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখবেন। যে অংশ বাইরে বেরিয়ে থাকবে, সেখানে ওয়াটার রেজ়িস্ট্যান্ট এবং এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন লাগান। বাড়ি এসে ভাল ভাবে স্নান করে নিন। মেকআপ লাগালে খুব ভাল ভাবে পরিষ্কার করবেন।
• ত্বকের ক্লেনজিিং, টোনিং, সেরাম ও ময়শ্চারাইজ়িং-এর রুটিন মানার সময়ে ত্বকের প্রতি যত্নশীল হন। জোরে ঘষবেন না। কোমল ভাবে ক্রিম লাগাবেন। প্রত্যেক দিন স্ক্রাব করবেন না। বদলে স্পঞ্জ দিয়ে মুখ মুছে নিন। আঙুলের আলতো স্পর্শে বৃত্তাকার ভাবে, আপওয়ার্ড স্ট্রোক-এ ক্রিম মাসাজ করুন।
• ঘেমে গেলেই ভাল করে মুখ পরিষ্কার করবেন। এসি-তে থাকলে ঘন ময়শ্চারাইজ়ার ও বডি লোশন মাখা জরুরি।
• স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের রুটিন মেনে চলুন। শরীরের উপর অত্যাচার করলে আগেভাগেই বয়স্ক দেখাবে। স্ট্রেসে লাগাম টানার চেষ্টা করুন।
• ভুরু কোঁচকানোর অভ্যেস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এতে কপালে ভাঁজ পড়ে। বালিশে মুখ গুঁজে শোবেন না। ত্বকে চাপ পড়ে কুঞ্চন আসতে পারে।
• কোনও প্রসাধনী, ক্রিম  বা লোশন লাগিয়ে যদি মনে হয় গরম লাগছে, ত্বক জ্বলছে, ওটি আর ব্যবহার করবেন না।
• ২২ বছর বয়সের পর নিয়মিত ফেসিয়াল, ফেস মাসাজ ও নাইট ক্রিম ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নিন। ত্রিশ ছুঁইছুঁই হলেই রেটিনল-সমৃদ্ধ অ্যান্টি এজিং প্রডাক্ট ব্যবহার শুরু করে দিন। এই সময় থেকেই আলাদা করে আন্ডার-আই ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনুন:

সময় থাকতে হয়তো ত্বকের যত্ন করা হয়নি।  কিন্তু বয়স ঘনাতেই মেনোপজ় হরমোনগুলির সৌজন্যে ত্বকের বলিরেখা, দাগছোপগুলি প্রকট হয়ে উঠেছে। তখন এই এজ স্পটগুলি ঠিক করতে চাইলে, ত্বকে কী সমস্যা হচ্ছে সেটা প্রথমে বুঝে নিতে হবে। চামড়া ঝুলে আসলে কোলাজেন সমৃদ্ধ ক্রিম বা স্কিন লোশন ব্যবহার করুন।

বাইরের জল হাওয়ার প্রভাবেও ত্বকের কোলাজেন তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। ত্বকের উপরের পরতটি পাতলা হয়ে যায়। রেটিনয়েড, কোলাজেন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রডাক্টগুলি এই নষ্ট কোষ মেরামত করতে পারে। স্কিন টাইটনিং বা ফার্মিং প্রডাক্টে এই উপাদানগুলি আছে কি না, দেখে কিনুন। ব্যবহারের সময় যথা সম্ভব কম ঘষবেন। আলতো চাপড়ে (প্যাট) অ্যান্টি এজিং প্রডাক্ট লাগান।

ডার্ক স্পটে অ্যান্টি এজিং সেরাম লাগান। ত্বকের যেখানে ভাঁজ পড়ছে, সেখানে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ক্রিম, পেপটাইড বা স্কিন বুস্টার সেরাম লাগাতে পারেন। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি ফাইভ যুক্ত বুস্টার সেরাম কার্যকর। ত্বকের ছিদ্র উন্মুক্ত হয়ে গেলে ‘পোর টোনার’ লাগানো যায়।
ব্যায়াম করুন নিয়মিত। মন শান্ত রাখতে মেডিটেশন করুন। কম তেলমশলা স্বাস্থ্যকর খাবার খান, পরিমাণ মতো জল খান। ঘুমকে অবহেলা করবেন না। সকলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখুন, তাতে মন ভাল থাকবে। এগুলিই তারুণ্যের বিশল্যকরণী।

পাশে আছেন চিকিৎসক:

মডেলিং, অভিনয়, বিমান পরিষেবাসহ আরো কিছু পেশায় সুন্দর, সজীব ও ঝকঝকে ত্বক প্রায় অপরিহার্য। সেগুলি পেতে অনেকে আধুনিক চিকিৎসার সাহায্য নেতে হবে।  চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর জানালেন কিছু ট্রিটমেন্টের সাহায্যে ত্বকে বয়সের ছাপও মুছে ফেলা যায়। ডার্ম্যাব্রেশন (উঁচু-নিচু ত্বক মসৃণ করে), ডার্মাল ফিলার (ত্বকের গর্তে আর্টিফিশিয়াল কোলাজেন, লিকুইড প্যারাফিন, ফ্যাট ফিলার প্রভৃতি ইঞ্জেক্ট করা হয়), প্লাস্টিক রিকনস্ট্রাকশন (যেখানে গর্ত হয়েছে, অন্য জায়গার চামড়া নিয়ে সেখানে ভরে দেওয়া)-এর মতো চিকিৎসা আকছার করানো হচ্ছে। দু’চার বছর পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে। সবচেয়ে জনপ্রিয় কুঞ্চিত অংশে বোটক্স ইঞ্জেকশন। তবে এর মেয়াদ বড় জোর দেড় বছর।

অবশ্য শুধু মুখের সৌন্দর্যের কথা ভাবলেই বা চলবে কেন? গলা, হাত-পা-কেও কিন্তু সময়ের থাবা থেকে রক্ষা করতে হবে। খুব গরমকাল ছাড়া অন্য সময়ে বাকি শরীরে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করে দেখুন। চমকপ্রদ ফল পাবেন।