Dhaka ১২:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদে বাড়ি ফেরার পথে নতুন জামা কেনার ধুম

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:২৪:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
  • ২৬ Time View

‘নাতনি ফোনে কইছে, লাল জামার কথা। ভাবছিলাম বাড়ি গিয়ে কিনে দেব। কিন্তু এখানেই দেখি বাচ্চাদের জামা পাওয়া যাচ্ছে। সে জন্য দেখেশুনে চারশো টাকায় একটি জামা কিনেই ফেললাম। নাতনি খুব খুশি হবে। ঈদ তো ওদেরই৷ আসলে, পরিবারের সদস্যদের হাসিমুখ দেখলেই মন ভালো লাগে।’—রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালের প্রবেশমুখের ফুটপাতে পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল মান্নান হাসিমুখে এভাবেই বলছিলেন প্রিয়জনের সাধপূরণের গল্প৷
ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত মানুষজন ঈদের আগে নতুন জামা-কাপড় কিনতে বিভিন্ন ফুটপাত এবং মার্কেটগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে পরিবারের সদস্যদের জন্য এসব জামাকাপড় কিনে নিতে তাদের উদ্দেশ্য একটাই—প্রিয়জনদের হাসিমুখ দেখা।

সরাসরি বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করতে অনেকের পছন্দ হলেও, একদিকে রমজান মাসের ব্যস্ততা, অন্যদিকে বাহিরে ভিড়, যানজট—সব মিলিয়ে ফুটপাত ও ছোট মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করে তারা পরিবারে প্রিয়জনদের হাসিমুখ দেখতে চাইছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা যেমন, সদরঘাট, গুলিস্তান, সায়দাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় পুরুষ, নারী, শিশুদের জন্য নতুন জামাকাপড় বিক্রি হচ্ছে। জামা, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিসসহ নানা ধরনের পোশাক সাজানো রয়েছে দোকানগুলোতে।

বিক্রেতারা জানান, তারা মধ্যবিত্ত মানুষের কথা বিবেচনা করে কম দামে পোশাক বিক্রি করছেন, যাতে বিভিন্ন আয়ের মানুষজনও সাশ্রয়ী মূল্যে ঈদের নতুন পোশাক কিনতে পারেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী লাবণী আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন পর বাড়ি যাচ্ছি, কিন্তু ঈদকে ঘিরে মা-বাবার জন্য শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনেছি। তাদের হাসিমুখের মুহূর্তটা আমার কাছে অনেক বিশেষ।

একইভাবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিব বিল্লাহ বলেন, টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে মা-বাবার জন্য শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে যাচ্ছি। ভাতিজির জন্যও জামা কিনেছি। এরচেয়ে আনন্দের অনুভূতি আর কিছু নেই।

আলমগীর হোসেন, একজন চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে ঈদের পোশাক কেনার জন্য সময় পাইনি। তাই আজ বাড়ি যাবার আগে ছোট দোকানগুলো থেকে ঈদের পোশাক কিনলাম। বাবা-মা, ছোট ভাই-বোনদের জন্য জামাকাপড় কিনেছি। তাদের খুশি দেখাটা অসাধারণ অনুভূতির ব্যাপার।

এদিকে, সদরঘাট ও আশপাশের ফুটপাত, ভ্যান, ও পামের মার্কেটগুলোতে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, তারা মধ্যবিত্তদের কথা চিন্তা করে সাশ্রয়ী দামে ঈদের পোশাক বিক্রি করছেন। এখানে ৪০০-৫০০ টাকায় সাদা ও অন্যান্য রঙের পাঞ্জাবি, ২০০-৩০০ টাকায় পায়জামা, ২০০-৩০০ টাকায় টিশার্ট, ৩০০-৫০০ টাকায় শার্ট, ৪০০-৭০০ টাকায় জুতা, এবং ১০০-৩০০ টাকায় টুপি ও আতর পাওয়া যাচ্ছে। এসব দামে ক্রেতারা তাদের ঈদের পোশাক কিনতে পারছেন এবং তা তাদের বাজেটের মধ্যে পড়ে, ফলে বিক্রেতারাও ভালো সাড়া পাচ্ছেন।

সদরঘাটের বিক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, ঈদের সময় আমাদের দোকানে অনেক ক্রেতার ভিড় থাকে। চাহিদা অনুযায়ী পুরুষ, নারী, শিশুদের জন্য নতুন পোশাক সাজিয়েছি। এখানে ক্রেতারা তাদের বাজেটের নাগালেই সব পোশাক কিনতে পারছেন৷ আমরা স্বল্প লাভে বেশি পরিমাণে বিক্রি করি৷ তাতেই পর্যাপ্ত লাভ থাকে৷

সদরঘাটের বিক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, এখানে ক্রেতাদের বাজেট অনুযায়ী পোশাক বিক্রি করছি। ঈদের সময় আমাদের দোকানে ভিড় থাকে। আমরা কম লাভে বেশি পরিমাণে বিক্রি করি, তাতে পর্যাপ্ত লাভ থাকে। এছাড়া ক্রেতারাও খুশি হয়ে ফিরে যান।

আরেক বিক্রেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রতি ঈদের সময়ই আমাদের দোকানে খুব ব্যস্ততা থাকে। এখানে বিভিন্ন আয়ের মানুষজন আসেন। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিতে চাই না৷ বাজেট অনুযায়ী পছন্দের পোশাক কম-বেশি লাভে ছেড়ে দেই।

এছাড়া, ২৭ রোজার পর (শবে কদরের পর) বেচাকেনা আরও জমজমাট হবে বলে মন্তব্য করেন এই বিক্রেতা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

ঈদে বাড়ি ফেরার পথে নতুন জামা কেনার ধুম

Update Time : ০৬:২৪:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

‘নাতনি ফোনে কইছে, লাল জামার কথা। ভাবছিলাম বাড়ি গিয়ে কিনে দেব। কিন্তু এখানেই দেখি বাচ্চাদের জামা পাওয়া যাচ্ছে। সে জন্য দেখেশুনে চারশো টাকায় একটি জামা কিনেই ফেললাম। নাতনি খুব খুশি হবে। ঈদ তো ওদেরই৷ আসলে, পরিবারের সদস্যদের হাসিমুখ দেখলেই মন ভালো লাগে।’—রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালের প্রবেশমুখের ফুটপাতে পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল মান্নান হাসিমুখে এভাবেই বলছিলেন প্রিয়জনের সাধপূরণের গল্প৷
ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত মানুষজন ঈদের আগে নতুন জামা-কাপড় কিনতে বিভিন্ন ফুটপাত এবং মার্কেটগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে পরিবারের সদস্যদের জন্য এসব জামাকাপড় কিনে নিতে তাদের উদ্দেশ্য একটাই—প্রিয়জনদের হাসিমুখ দেখা।

সরাসরি বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করতে অনেকের পছন্দ হলেও, একদিকে রমজান মাসের ব্যস্ততা, অন্যদিকে বাহিরে ভিড়, যানজট—সব মিলিয়ে ফুটপাত ও ছোট মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করে তারা পরিবারে প্রিয়জনদের হাসিমুখ দেখতে চাইছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা যেমন, সদরঘাট, গুলিস্তান, সায়দাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় পুরুষ, নারী, শিশুদের জন্য নতুন জামাকাপড় বিক্রি হচ্ছে। জামা, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিসসহ নানা ধরনের পোশাক সাজানো রয়েছে দোকানগুলোতে।

বিক্রেতারা জানান, তারা মধ্যবিত্ত মানুষের কথা বিবেচনা করে কম দামে পোশাক বিক্রি করছেন, যাতে বিভিন্ন আয়ের মানুষজনও সাশ্রয়ী মূল্যে ঈদের নতুন পোশাক কিনতে পারেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী লাবণী আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন পর বাড়ি যাচ্ছি, কিন্তু ঈদকে ঘিরে মা-বাবার জন্য শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনেছি। তাদের হাসিমুখের মুহূর্তটা আমার কাছে অনেক বিশেষ।

একইভাবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিব বিল্লাহ বলেন, টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে মা-বাবার জন্য শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে যাচ্ছি। ভাতিজির জন্যও জামা কিনেছি। এরচেয়ে আনন্দের অনুভূতি আর কিছু নেই।

আলমগীর হোসেন, একজন চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে ঈদের পোশাক কেনার জন্য সময় পাইনি। তাই আজ বাড়ি যাবার আগে ছোট দোকানগুলো থেকে ঈদের পোশাক কিনলাম। বাবা-মা, ছোট ভাই-বোনদের জন্য জামাকাপড় কিনেছি। তাদের খুশি দেখাটা অসাধারণ অনুভূতির ব্যাপার।

এদিকে, সদরঘাট ও আশপাশের ফুটপাত, ভ্যান, ও পামের মার্কেটগুলোতে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, তারা মধ্যবিত্তদের কথা চিন্তা করে সাশ্রয়ী দামে ঈদের পোশাক বিক্রি করছেন। এখানে ৪০০-৫০০ টাকায় সাদা ও অন্যান্য রঙের পাঞ্জাবি, ২০০-৩০০ টাকায় পায়জামা, ২০০-৩০০ টাকায় টিশার্ট, ৩০০-৫০০ টাকায় শার্ট, ৪০০-৭০০ টাকায় জুতা, এবং ১০০-৩০০ টাকায় টুপি ও আতর পাওয়া যাচ্ছে। এসব দামে ক্রেতারা তাদের ঈদের পোশাক কিনতে পারছেন এবং তা তাদের বাজেটের মধ্যে পড়ে, ফলে বিক্রেতারাও ভালো সাড়া পাচ্ছেন।

সদরঘাটের বিক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, ঈদের সময় আমাদের দোকানে অনেক ক্রেতার ভিড় থাকে। চাহিদা অনুযায়ী পুরুষ, নারী, শিশুদের জন্য নতুন পোশাক সাজিয়েছি। এখানে ক্রেতারা তাদের বাজেটের নাগালেই সব পোশাক কিনতে পারছেন৷ আমরা স্বল্প লাভে বেশি পরিমাণে বিক্রি করি৷ তাতেই পর্যাপ্ত লাভ থাকে৷

সদরঘাটের বিক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, এখানে ক্রেতাদের বাজেট অনুযায়ী পোশাক বিক্রি করছি। ঈদের সময় আমাদের দোকানে ভিড় থাকে। আমরা কম লাভে বেশি পরিমাণে বিক্রি করি, তাতে পর্যাপ্ত লাভ থাকে। এছাড়া ক্রেতারাও খুশি হয়ে ফিরে যান।

আরেক বিক্রেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রতি ঈদের সময়ই আমাদের দোকানে খুব ব্যস্ততা থাকে। এখানে বিভিন্ন আয়ের মানুষজন আসেন। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিতে চাই না৷ বাজেট অনুযায়ী পছন্দের পোশাক কম-বেশি লাভে ছেড়ে দেই।

এছাড়া, ২৭ রোজার পর (শবে কদরের পর) বেচাকেনা আরও জমজমাট হবে বলে মন্তব্য করেন এই বিক্রেতা।