Dhaka ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্যানসারে আক্রান্ত উপস্থাপিকা-অভিনেত্রী সামিয়া

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:১০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
  • ২৪ Time View

প্রায় আড়াই বছর ধরে এই মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন টিভি উপস্থাপক-অভিনেত্রী সামিয়া আফরিন। 

সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে তারকাদের পোশাক নিয়ে ‘রিভোগ ওয়্যার টু কেয়ার’ নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যেখান থেকে প্রাপ্ত পোশাক বিক্রির টাকা ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় হবে। গতকাল ২২ মার্চ উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনী শেষ হয়েছে।

এই আয়োজনে উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সামিয়া আফরিন বলেন, ‘আমার ক্যানসার ধরা পড়ে ২০২২-এর ঠিক এপ্রিলে। তখন কোভিড থেকে সবেমাত্র লকডাউন উঠছে এবং কিছু কিছু দেশ খুলছে (ভ্রমণ অনুমতি)। ওই সময় স্টেজ ৪-এ ছিল আমার ক্যানসার। এটা খুবই ভীতিকর ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল আমার পরিবারের লোকজনের জন্য। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে যে, এটা একটা অসুখ; এ জন্য আমাকে লড়াই করতে হবে অথবা নিরাময়ের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ভয় না পেয়ে কীভাবে নিরাময় হতে পারে, আমি সেসব খুঁজে বের করি।’

যোগ করে তিনি বলেন, ‘তখন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে, বরং আমি আমার পরিবারের জন্য সহায়ক হয়েছিলাম। কারণ, কারও কাছ থেকে সহানুভূতিশীল কোনো কথা বা সেই দৃষ্টিতে দেখতে চাইনি। আমি সবসময় দৃঢ়চেতা হতে চেয়েছিলাম। তাতে হয় কী, এটা একজন রোগীকে আরও বেশি শক্তি জোগায় তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার জন্য।’

ক্যানসারে আক্রান্ত হলে রোগীর মনোবল ভেঙে পড়ার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেই বিষয়ে সামিয়ার ভাষ্য, ‘আমরা হয় কী, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। মনে হয়—আমার জীবন শেষ হয়ে গেল, এরপর আর বুঝি কিছু নেই। এটা নিছক ভুল কথা। যদি আমরা চেষ্টা করি, মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি এবং সাথে সাথে অনেক লাইফ স্টাইলেও পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, যদিও তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। লাইফ স্টাইল যদি ঠিক থাকে, তাহলে পরবর্তীতে এটা আর হওয়ার সুযোগ থাকে না বলে আমার মনে হয়।’

বর্তমান নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা জানিয়ে সামিয়া বলেন, ‘প্রতি ঘরে-ঘরেই দেখা যায় এক-দুজন ক্যানসারের রোগী আছেন, আমি নিজেও একজন ক্যানসারের রোগী। প্রায় আড়াই বছর ধরে আমি এটার সঙ্গে লড়াই করছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।’

এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ মূলত ক্যানসার রোগীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সামিয়া বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সবার পক্ষে ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব না—এমনটা শোনার সাথে সাথে সবার ভেতর যে ভয় বা ভীতি কাজ করতে থাকে, সেই জায়গা থেকে একটা মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য তার যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তবে সে মানসিকভাবে একটু পরিত্রাণ পায়।’

তিনি বলেন, ‘সবারই ইচ্ছে থাকে কিছু করার, সহায়তা দেওয়ার, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এতটা সুযোগ হয় না। আমাদের যেহেতু কিছু জিনিস আছে, যেগুলো পরিধেয় পোশাক; টেলিভিশন-মিডিয়ায় কাজ করার সুবাদে আমাদের অনেক কাপড় পরতে হয়েছে এবং সেগুলো পুনরায় আর পরা হয়নি, তাই মনে হয়েছে এই কাপড়গুলো বিক্রি করে যে টাকা আসবে, সেটা আমরা ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যয় করব। এই ভাবনা থেকে বন্ধুদের জানালাম, সবাই সহমত প্রকাশ করেছে এবং একাত্মতা ঘোষণা করে তারাও এসেছে, সবাইকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি এই প্রদর্শনী এক ধরনের সচেতনতা তৈরি করাও যে, আমরা আমাদের জায়গা থেকে কতটুকু সহায়তা করতে পারি, দেখা যায় এক-দুই হাজার টাকা করে একসঙ্গে একটা বড় অ্যামাউন্ট হয়ে যায়।’

প্রসঙ্গত, একসময় টিভি উপস্থাপনার নিয়মিত মুখ ছিলেন উপস্থাপিকা সামিয়া আফরিন। মাঝেমধ্যে তাকে নাটকেও দেখা গেছে। ইমরাউল রাফাতের ‘পাপপূণ্য’, মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ধুলোর মানুষ’, ‘মানুষের ঘ্রাণ’ এবং রাজিবুল ইসলামের ‘ব্লাফমাস্টার’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

ক্যানসারে আক্রান্ত উপস্থাপিকা-অভিনেত্রী সামিয়া

Update Time : ০১:১০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

প্রায় আড়াই বছর ধরে এই মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন টিভি উপস্থাপক-অভিনেত্রী সামিয়া আফরিন। 

সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে তারকাদের পোশাক নিয়ে ‘রিভোগ ওয়্যার টু কেয়ার’ নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যেখান থেকে প্রাপ্ত পোশাক বিক্রির টাকা ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় হবে। গতকাল ২২ মার্চ উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনী শেষ হয়েছে।

এই আয়োজনে উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সামিয়া আফরিন বলেন, ‘আমার ক্যানসার ধরা পড়ে ২০২২-এর ঠিক এপ্রিলে। তখন কোভিড থেকে সবেমাত্র লকডাউন উঠছে এবং কিছু কিছু দেশ খুলছে (ভ্রমণ অনুমতি)। ওই সময় স্টেজ ৪-এ ছিল আমার ক্যানসার। এটা খুবই ভীতিকর ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল আমার পরিবারের লোকজনের জন্য। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে যে, এটা একটা অসুখ; এ জন্য আমাকে লড়াই করতে হবে অথবা নিরাময়ের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ভয় না পেয়ে কীভাবে নিরাময় হতে পারে, আমি সেসব খুঁজে বের করি।’

যোগ করে তিনি বলেন, ‘তখন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে, বরং আমি আমার পরিবারের জন্য সহায়ক হয়েছিলাম। কারণ, কারও কাছ থেকে সহানুভূতিশীল কোনো কথা বা সেই দৃষ্টিতে দেখতে চাইনি। আমি সবসময় দৃঢ়চেতা হতে চেয়েছিলাম। তাতে হয় কী, এটা একজন রোগীকে আরও বেশি শক্তি জোগায় তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার জন্য।’

ক্যানসারে আক্রান্ত হলে রোগীর মনোবল ভেঙে পড়ার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেই বিষয়ে সামিয়ার ভাষ্য, ‘আমরা হয় কী, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। মনে হয়—আমার জীবন শেষ হয়ে গেল, এরপর আর বুঝি কিছু নেই। এটা নিছক ভুল কথা। যদি আমরা চেষ্টা করি, মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি এবং সাথে সাথে অনেক লাইফ স্টাইলেও পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, যদিও তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। লাইফ স্টাইল যদি ঠিক থাকে, তাহলে পরবর্তীতে এটা আর হওয়ার সুযোগ থাকে না বলে আমার মনে হয়।’

বর্তমান নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা জানিয়ে সামিয়া বলেন, ‘প্রতি ঘরে-ঘরেই দেখা যায় এক-দুজন ক্যানসারের রোগী আছেন, আমি নিজেও একজন ক্যানসারের রোগী। প্রায় আড়াই বছর ধরে আমি এটার সঙ্গে লড়াই করছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।’

এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ মূলত ক্যানসার রোগীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সামিয়া বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সবার পক্ষে ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব না—এমনটা শোনার সাথে সাথে সবার ভেতর যে ভয় বা ভীতি কাজ করতে থাকে, সেই জায়গা থেকে একটা মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য তার যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তবে সে মানসিকভাবে একটু পরিত্রাণ পায়।’

তিনি বলেন, ‘সবারই ইচ্ছে থাকে কিছু করার, সহায়তা দেওয়ার, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এতটা সুযোগ হয় না। আমাদের যেহেতু কিছু জিনিস আছে, যেগুলো পরিধেয় পোশাক; টেলিভিশন-মিডিয়ায় কাজ করার সুবাদে আমাদের অনেক কাপড় পরতে হয়েছে এবং সেগুলো পুনরায় আর পরা হয়নি, তাই মনে হয়েছে এই কাপড়গুলো বিক্রি করে যে টাকা আসবে, সেটা আমরা ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যয় করব। এই ভাবনা থেকে বন্ধুদের জানালাম, সবাই সহমত প্রকাশ করেছে এবং একাত্মতা ঘোষণা করে তারাও এসেছে, সবাইকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি এই প্রদর্শনী এক ধরনের সচেতনতা তৈরি করাও যে, আমরা আমাদের জায়গা থেকে কতটুকু সহায়তা করতে পারি, দেখা যায় এক-দুই হাজার টাকা করে একসঙ্গে একটা বড় অ্যামাউন্ট হয়ে যায়।’

প্রসঙ্গত, একসময় টিভি উপস্থাপনার নিয়মিত মুখ ছিলেন উপস্থাপিকা সামিয়া আফরিন। মাঝেমধ্যে তাকে নাটকেও দেখা গেছে। ইমরাউল রাফাতের ‘পাপপূণ্য’, মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ধুলোর মানুষ’, ‘মানুষের ঘ্রাণ’ এবং রাজিবুল ইসলামের ‘ব্লাফমাস্টার’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।