কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহারউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুসিক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাসুম (২২) নামে এক হোটেল কর্মচারীকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যার অভিযোগে ওই মামলা করা হয়।

রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দ গ্রামের আবদুল হান্নান বাদী হয়ে মামলা করেন। আওয়ামী লীগ পতনের পর বাহার এবং কুসিক মেয়র সূচনার বিরুদ্ধে এটাই প্রথম মামলা।

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে গুলি ও কুপিয়ে মাছুম নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়।

মাছুম একই উপজেলার উত্তর রামপুর এলাকার শাহীন মিয়ার ছেলে।

ওসি বলেন, মামলায় সাবেক এমপি বাহার ও তার মেয়ে ডা. সূচনাকে (সিটি মেয়র) হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। আমরা মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করব।

মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন— কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, কুমিল্লা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মেদ নিয়াজ পাভেল, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর সাইফুল আলম রনি, (জামাই রনি), কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, কুমিল্লার বাগিচাগাওয়ের কাউসার জামান কায়েস, তালপুকুর পাড়ের সুজন দত্ত, কালিয়াজুড়ির মুরাদ মিয়া, কাউন্সিলর আজাদ হোসেন, কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর ইকরামুল হক, রেইসকোর্সের আবদুল কাইয়ূম, কাউন্সিলর আবুল হাসান, সাবেক কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক শিহানু, কুমিল্লার মধ্যম আশ্রাফপুরের নাজমুল ইসলাম শাওন, ছাত্রলীগ নেতা সালেহ আহম্মেদ রাসেল, কুমিল্লার অশোকতলার শাহ আলম খান, শাসনগাছার আবু হেনা, সাক্কু, ধর্মপুরের শহীদুল ইসলাম চপল, ফখরুল ইসলাম রুবেল, কাউন্সিলর গাজী গোলাম সরওয়ার শিপন, কুমিল্লার সদর দক্ষিনের শ্রীমন্তপুরের দুলাল হোসেন অপু, নেউয়ারার জাকির হোসেন, পাথুরিয়াপাড়ার প্রিতুল, শাকতলা মীর পুকুর পাড়ের রবিন, কালা মোস্তফা, অশোকতলার সাইফুল ইসলাম খোকন, শ্রীভল্লভপুরের মো. মেহেদী, পাঁচথুবির চেয়ারম্যান হাসান রাফি রাজু, শিমপুরের মনিরুজ্জামান মনির, ব্রাহ্মণপাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান শরীফ, শিমপুরের নিতান্ত, শ্রীভল্লবপুরের আবদুল মালেক ভূঁইয়া, মো. খাইরুল হাসান, মো. হানিফ দুলাল, ঢুলিপাড়ার রাশেদুজ্জামান রাশেদ, শাসনগাছার জালাল, দক্ষিণ বিজয়পুরের মো. জাফর আহাম্মদ শিপন ,মোস্তফাপুরের মুন্সীবাড়ির মো. হাসান, মনোহরপুরের মোখলেছুর রহমান, বাগিচাগাওয়ের শফিকুর রহমানের ছেলে বাপ্পি, ছায়া বিতানের জালাল (পিচ্চি জালাল), কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সোহেল, দক্ষিণ চর্থার কাউসার আহমেদ খন্দকার ও আকাশ, মুন্সেফবাড়ির ফরহাদ উল্লাহ, লক্ষ্মীনগরের কবির হোসেন, দিশাবন্দের গোলাম মোস্তফা, দুলাল মিয়া, জিয়াউর রহমান, লক্ষ্মীনগরের জালাল, সুজানগর চৌমুহনীর জালাল ও হানিফ। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাত ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।

সাবেক এমপি বাহার কুমিল্লা-৬ (সদর) আসন থেকে ২০০৮ সাল থেকে নৌকার মনোনয়নে টানা ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। তার বড় মেয়ে সূচনা চলতি বছরের গত ৯ মার্চ সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

মাছুমের বাবা শাহীন মিয়া বলেন, আমার ছেলে নিরপরাধ, তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো। তার বাম পায়ে দুটি গুলি ও মাথার পেছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমি আমার ছেলের খুনিদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা নগরীতে সাবেক এমপি বাহারের বাসভবন, তার মালিকানাধীন সোনালি স্কয়ার মার্কেট ও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে। বর্তমানে বাহার এবং তার মেয়ে সূচনা আত্মগোপনে রয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে