ক্রীড়া ডেস্ক :
লড়াইটা ছিলো দুই মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের। বিশ্ব ফুটবল মূলত যে দুই মহাদেশ ঘিরে আলোচিত সেই ইউরোপ আর লাতিন আমেরিকার সেরাদের লড়াই অবশ্য অনেকটা একপেশেই হয়ে গেছে।
ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি কোন পাত্তাই পায়নি কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার কাছে। ৩-০ স্কোরলাইন যেন সেকথাই বলছে।
ইতালির জমাট রক্ষণভাগ গুঁড়িয়ে দিয়ে আন্তঃমহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ‘লা ফিনালিসিমা’ জিতে আর্জেন্টিনা অবশ্য আরও একটি রেকর্ড গড়েছে। এখন টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত লিওনেল স্কলানির দল।
ম্যাচের শুরু থেকেই খেলা ছিলো অনেকটা লিওনেল মেসিময়। ১৫ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে তিনবার প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করেছেন। অবশ্য গোলের দেখা পাননি। আর্জেন্টিনার প্রথম সাফল্য আসে ২৮ মিনিটে, ইতালির পেনাল্টি বক্সের বাঁ পাশ থেকে লাওতেরো মার্টিনেজকে নিখুঁত এক পাস দেন মেসি। মার্তিনেজও গোলের এই সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় এগিয়ে নেন দলকে। ৪৫ মিনিটে এই মার্তিনেজেরই এক পাস থেকে অসাধারণ গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ডি মারিয়া। ফলাফল প্রথমার্ধেই আলবিসেলেস্তেদের স্কোর ২-০।
স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা রক্ষণাত্মক খেলবে এমন ভাবনা হয়তো কারো কারো মনে উঁকি দিয়েছে। কিন্তু স্কলানির এই আর্জেন্টিনা যেন বদলে যাওয়া এক দল। দ্বিতীয়ার্ধে আরও বেশি চেপে ধরে টানা দুইবার বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়া ইতালিকে। একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা ইতালি অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধের ৪৫ মিনিট নিজেদের গোলপোস্ট নিরাপদেই রাখতে পেরেছিলো। তাতে অবশ্য হার এড়ানোর কোন উপায়ও ছিলোনা। অতিরিক্ত সময়ে পাওলো দিবালার গোলটা তাই শুধু ব্যবধানই বাড়িয়েছে। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়ার কষ্টটা আরও একটু বাড়িয়েছে।
এই ম্যাচে আর্জেন্টিনা খেলেছে একটি দল হিসেবে। খেলা শুরুর আগে কোচ স্কলানি যেমন বলেছিলেন, কোন একজন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে নয়, বরং পরিপূর্ণ একটি দল হিসেবেই খেলবে আলবিসেলেস্তেরা। মাঠেও তার প্রমাণ মিললো ঠিকই। একসময় যে দলটিকে শুধু মেসিময় বলা হতো, সেই আর্জেন্টিনা আজ লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরোপ সেরাদের হারিয়েছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই। কি রক্ষণ, কি মাঝমাঠ সবখানেই এককভাবে আর্জেন্টিনার জয়জয়কার। গোলপোস্টের নিচে এমিলিয়ানো মার্টিনেজও অব্যাহত রেখেছেন কোপা আমেরিকায় দেখানো তার অসাধারণ সাফল্য। আর আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের কথা অবশ্য না বললেও চলে। মেসি-ডি মারিয়া-মার্তিনেজরা আজ সমর্থকদের সাজানো-গোছানো এবং একইসাথে চোখজোড়ানো এক খেলাই উপহার দিয়েছেন।
বুড়িয়ে যাওয়া মেসিও আজ ছিলেন সমুজ্জ্বল। নিজে গোল না পেলেও প্রথম ও তৃতীয় গোলটি এসেছে তার পাসেই। এছাড়াও পুরো ম্যাচ জুড়েই চেনা ছন্দে ছিলেন। ফলাফল কোন গোল না পেয়েও ম্যাচসেরা লিওনেল মেসি।
এই জয়ে চলতি বছর অনুষ্ঠিতব্য কাতার বিশ্বকাপে বড় কিছু অর্জনের গর্জনটাও দিয়ে রাখলো লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ এই দল।
সবশেষ ১৯৯৩ সালে হয়েছিলো কোপা আমেরিকা ও ইউরো সেরার লড়াই। সেবারের লা ফিনালিসিমায় ইউরোজয়ী ডেনমার্ককে হারিয়েছিলো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। ২৯ বছর পর আবারো এই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে জয় হলো আর্জেন্টিনারই। সেবার নায়ক ছিলেন ম্যারাডোনা, এবার লিওনেল মেসি।