স্পোর্টস ডেস্ক:
মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আফিফ হাসান ও মেহেদি মিরাজের ইতিহাস গড়া জুটির সুবাদে প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৪ উইকেটের দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
বুধবার (২৩শে ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান সবকটি উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ২১৫ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট আর ৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
যদিও জয়টা এত সহজে আসেনি। প্রথম ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ৪৫ রানের মাথায় হারায় ৬ উইকেট। এরপর ব্যাটিংয়ে এসে ইতিহাস গড়েন আফিফ ও মিরাজ। সপ্তম উইকেটে তাদের জুটিতে আসে ১৭৮ রান। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ও ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সপ্তম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এটি।
এর আগে, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারিরা। ১১ রান সংগ্রহ করতে হারায় প্রথম উইকেট। বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইনিংসের প্রথম অর্ধে ছিল স্বাগতিকদের দাপট। এর মধ্যে আফগানদের পথ দেখিয়েছে রহমত শাহর ৬৯ বলে ৩৪, অধিনায়ক হাশমতউলাহ শহিদির ৪৩ বলে ২৮ ও মোহাম্মদ নবীর ২৪ বলে ২০ রানের ইনিংস।
তবে সবচেয়ে কার্যকরী ছিলেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। চাপের মুখে স্নায়ুচাপ ধরে রেখে দেখে শুনে সামলেছেন বাংলাদেশের বোলারদের। সতীর্থরা প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও তিনি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ অর্ধশতক। ৬৭ রান করে শরিফুলের শিকার হয়ে এই ব্যাটার সাজঘরে ফিরলে সব উইকেট হারিয়ে ২১৫ রানের পুঁজি নিয়ে মাঠ ছাড়ে আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের হয়ে তিনটি উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। দু’টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম। একটি উইকেট ঝুলিতে পুরেন মাহমুদউলাহ রিয়াদ।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। টাইগাররা প্রথম উইকেট হারায় তৃতীয় ওভারে। ফজল হক ফারুকির বলে ১ রান করেই সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। একই ওভারে ৮ রান করা তামিম ইকবালকেও নিজের শিকার বানান ফজল হক।
এক ওভার পরেই বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। এবারও বোলার ফজল হক।
১৮ রানেই দলের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান নেই। এমন অস্থায় ফজল হকের স্টাম্প সোজা বল আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হন অভিষিক্ত ইয়াসির রাব্বি। তিনি রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
১৮ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশের বিপদটা আরও বাড়িয়ে দেন আফগান বোলার মুজিব। তিনি বোল্ড করেন ১০ রান করা সাকিব আল হাসানকে।
এরপর অবশ্য বাংলাদেশকে আশা দেখাছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হাসান। তবে ১২তম ওভারে রাশিদ খানের সহজ একটি বলকে মারতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন রিয়াদও। তাতে ৪৫ রানেই পতর ঘটে প্র্রথম ৬ উইকেটের।
এমন অবস্থায় হারের শঙ্কা তৈরি হয়। তবে তখনো অনেক নাটক বাকি ছিল। রিয়াদের আউটের পর আফিফকে সঙ্গ দিতে আসেন মিরাজ। এই দু’জন শুরুটা করে ধীরে। তবে ক্রিজে সেট হতেই আসতে থাকে রান।
২২তম ওভারে তাদের ব্যাটে দলের ১০০ রান পূর্ণ হয়। এরপর ৩১তম ওভারে নিজের হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন আফিফ হাসান। ওয়ানডেতে এটি তার প্রথম অর্ধশতক। আফিফের দেখানো পথে হাঁটেন মিরাজও। বেশ কিছুদিন ধরেই রান পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে জ্বলে উঠলেন আজ।
ইয়ামিস আহমদজাইকে পুলে চমৎকার বাউন্ডারিতে ৭৯ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মিরাজ। তখনো প্রয়োজন ৫০ রান। তবে আফিফ বা মিরাজ কাউকেই এ নিয়ে বিচলিত হতে দেখা যায়নি। ঠাণ্ডা মাথায় আফগান বোলারদের মোকাবেলা করেন তারা। দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।
মিরাজ শেষ পর্যন্ত ১২০ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থাকেন। আর আফিফ হাসান অপরাজিত থাকেন ১১৪ বলে ৯৩ রান করে। তাদের সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে ১৭৮ রান।
আফগানিস্তানের হয়ে ১০ ওভারে ৫৪ রানে ৪ উইকেট নেন ফজল হক ফারুকি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২১৫-১০ (৪৯.১ ওভার)
বাংলাদেশ: ২১৯-৬ (৪৮.৫ ওভার)