Dhaka ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাজ্যের রেড লিস্ট থেকে ভারতকে বাদ কিন্তু পাকিস্তানকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:২৩:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অগাস্ট ২০২১
  • ৩৯ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

যুক্তরাজ্য তাদের রেড লিস্ট অর্থাৎ কোভিড নিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকা থেকে সম্প্রতি ভারতকে সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানকে রেখে দেওয়ায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিদের পর এখন ইসলামাবাদ পক্ষ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি সোমবার (৯ আগস্ট) ব্রিটিশ সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। ব্রিটেন ভ্রমণের লাল তালিকা থেকে গত সপ্তাহে ভারতকে সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানকে রেখে দেওয়ার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিরা বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে সরকারের ওপর চড়াও হয়।

চাপে পড়ে ব্রিটেনের সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে, পাকিস্তানের কাছ থেকে টিকা এবং সংক্রমণের সর্বশেষ তথ্য তাদের দেওয়া হয়নি। কিন্তু পাকিস্তানের মন্ত্রী শিরিন মাজারি বলেন, ব্রিটিশ সরকার ‘খোঁড়া যুক্তি’ দেখিয়ে পাকিস্তানকে রেড লিস্টে রেখে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানের কাছ থেকে টিকা বা সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কিত কোনো তথ্য কখনই চায়নি।

টুইটারে তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানি মন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্ব জানে কোভিড প্যানডেমিক মোকাবেলায় ভারতের ভূমিকা কতটা সর্বনেশে ছিল। অথচ ভারতপন্থী প্রভাবিত ব্রিটিশ সরকার ভারতকে অ্যাম্বার লিস্টে ঢোকালো কিন্তু পাকিস্তানকে লাল তালিকায় রেখে দিল। এখন বিরোধী এমপিদের চাপে সরকার বলছে পাকিস্তান তাদেরকে তথ্য দেয়নি।’

মন্ত্রী শিরিন মাজারি বলেন, কোভিড বিষয়ে পাকিস্তানের সমস্ত তথ্য অনলাইনে রয়েছে এবং যে কেউ তা যখন তখন দেখতে পারে। পাকিস্তানের ন্যাশনাল কম্যান্ড অ্যান্ড অপারেশন সেন্টারের সমস্ত তথ্য তাদের ডেটাবেজে রয়েছে এবং প্রতিদিন তা আপডেট করা হয়।

দেশের বাইরে থেকে কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে ব্রিটিশ সরকার বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কিত একটি ‘ট্রাফিক লাইট’ পদ্ধতি অনুসরণে করছে। যেখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে লাল তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব দেশ থেকে কেউ ব্রিটেনে এলে তাদের নিজ খরচে ১০ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় এবং এই দশদিনের মধ্যে কমপক্ষে দুবার নিজের খরচে কোভিড পরীক্ষা করাতে হয়।

অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অ্যাম্বার তালিকা অর্থাৎ কমলা তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব দেশে থেকে আসা যাত্রীদের বাড়িতে পাঁচদিন কোয়ারেন্টিন করলেই চলে। গ্রিন লিস্ট বা সবুজ তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে কেউ এলে তাদের কোয়ারেন্টিন করা লাগেনা, যদি তাদের টিকা দেওয়া থাকে।

এপ্রিলে ব্রিটিশ সরকার উপমহাদেশের তিনটি দেশকেই অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে লাল তালিকায় স্থান দেয়। কিন্তু গত রোববার থেকে বাহরাইন, কাতার এবং ইউএই’র সাথে ভারতকে লাল তালিকা থেকে সরিয়ে কমলা তালিকায় নেওয়া হলেও পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে লাল তালিকায় রেখে দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ সরকারের কোয়ারেন্টিন সম্পর্কিত এই সিদ্ধান্তের পরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বেশ কজন এমপি। তাদের সবারই বক্তব্য- ভারতের কোভিড পরিস্থিতি পাকিস্তানের চেয়ে এখনও অনেক খারাপ হওয়া সত্ত্বেও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় ভারতকে সুবিধা দেয়া হয়েছে।

উত্তর ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড শহরের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপি নাজ শাহ সরকারের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোয়ারেন্টিনের জন্য ট্রাফিক লাইট পদ্ধতির ব্যবস্থাপনায় ব্রিটেন আবারও ‘আহাম্মকি আচরণ’ করলো।

পাকিস্তানি অধ্যুষিত লুটন নর্থ আসনের চীনা বংশোদ্ভূত এমপি সারা ওয়েন বলেন, সরকারের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের যুক্তি তিনি কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না। যদি তথ্য পরিসংখ্যানের দিকে তাকান তাহলে ব্রিটিশ মন্ত্রীদের ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন ভারত অ্যাম্বার তালিকায় এবং পাকিস্তান ও অন্য আরও কিছু দেশ লাল তালিকায়।

সূত্র :  বিবিসি বাংলা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

যুক্তরাজ্যের রেড লিস্ট থেকে ভারতকে বাদ কিন্তু পাকিস্তানকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ

Update Time : ০৪:২৩:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অগাস্ট ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

যুক্তরাজ্য তাদের রেড লিস্ট অর্থাৎ কোভিড নিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকা থেকে সম্প্রতি ভারতকে সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানকে রেখে দেওয়ায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিদের পর এখন ইসলামাবাদ পক্ষ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি সোমবার (৯ আগস্ট) ব্রিটিশ সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। ব্রিটেন ভ্রমণের লাল তালিকা থেকে গত সপ্তাহে ভারতকে সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানকে রেখে দেওয়ার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিরা বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে সরকারের ওপর চড়াও হয়।

চাপে পড়ে ব্রিটেনের সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে, পাকিস্তানের কাছ থেকে টিকা এবং সংক্রমণের সর্বশেষ তথ্য তাদের দেওয়া হয়নি। কিন্তু পাকিস্তানের মন্ত্রী শিরিন মাজারি বলেন, ব্রিটিশ সরকার ‘খোঁড়া যুক্তি’ দেখিয়ে পাকিস্তানকে রেড লিস্টে রেখে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানের কাছ থেকে টিকা বা সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কিত কোনো তথ্য কখনই চায়নি।

টুইটারে তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানি মন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্ব জানে কোভিড প্যানডেমিক মোকাবেলায় ভারতের ভূমিকা কতটা সর্বনেশে ছিল। অথচ ভারতপন্থী প্রভাবিত ব্রিটিশ সরকার ভারতকে অ্যাম্বার লিস্টে ঢোকালো কিন্তু পাকিস্তানকে লাল তালিকায় রেখে দিল। এখন বিরোধী এমপিদের চাপে সরকার বলছে পাকিস্তান তাদেরকে তথ্য দেয়নি।’

মন্ত্রী শিরিন মাজারি বলেন, কোভিড বিষয়ে পাকিস্তানের সমস্ত তথ্য অনলাইনে রয়েছে এবং যে কেউ তা যখন তখন দেখতে পারে। পাকিস্তানের ন্যাশনাল কম্যান্ড অ্যান্ড অপারেশন সেন্টারের সমস্ত তথ্য তাদের ডেটাবেজে রয়েছে এবং প্রতিদিন তা আপডেট করা হয়।

দেশের বাইরে থেকে কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে ব্রিটিশ সরকার বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কিত একটি ‘ট্রাফিক লাইট’ পদ্ধতি অনুসরণে করছে। যেখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে লাল তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব দেশ থেকে কেউ ব্রিটেনে এলে তাদের নিজ খরচে ১০ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় এবং এই দশদিনের মধ্যে কমপক্ষে দুবার নিজের খরচে কোভিড পরীক্ষা করাতে হয়।

অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অ্যাম্বার তালিকা অর্থাৎ কমলা তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব দেশে থেকে আসা যাত্রীদের বাড়িতে পাঁচদিন কোয়ারেন্টিন করলেই চলে। গ্রিন লিস্ট বা সবুজ তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে কেউ এলে তাদের কোয়ারেন্টিন করা লাগেনা, যদি তাদের টিকা দেওয়া থাকে।

এপ্রিলে ব্রিটিশ সরকার উপমহাদেশের তিনটি দেশকেই অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে লাল তালিকায় স্থান দেয়। কিন্তু গত রোববার থেকে বাহরাইন, কাতার এবং ইউএই’র সাথে ভারতকে লাল তালিকা থেকে সরিয়ে কমলা তালিকায় নেওয়া হলেও পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে লাল তালিকায় রেখে দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ সরকারের কোয়ারেন্টিন সম্পর্কিত এই সিদ্ধান্তের পরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বেশ কজন এমপি। তাদের সবারই বক্তব্য- ভারতের কোভিড পরিস্থিতি পাকিস্তানের চেয়ে এখনও অনেক খারাপ হওয়া সত্ত্বেও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় ভারতকে সুবিধা দেয়া হয়েছে।

উত্তর ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড শহরের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপি নাজ শাহ সরকারের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোয়ারেন্টিনের জন্য ট্রাফিক লাইট পদ্ধতির ব্যবস্থাপনায় ব্রিটেন আবারও ‘আহাম্মকি আচরণ’ করলো।

পাকিস্তানি অধ্যুষিত লুটন নর্থ আসনের চীনা বংশোদ্ভূত এমপি সারা ওয়েন বলেন, সরকারের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের যুক্তি তিনি কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না। যদি তথ্য পরিসংখ্যানের দিকে তাকান তাহলে ব্রিটিশ মন্ত্রীদের ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন ভারত অ্যাম্বার তালিকায় এবং পাকিস্তান ও অন্য আরও কিছু দেশ লাল তালিকায়।

সূত্র :  বিবিসি বাংলা