সুবীর মণ্ডল, বাঁকুড়া জেলা প্রতিনিধি:
জঙ্গলমহলের এই পর্যটনকেন্দ্রকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছিল সারেঙ্গা ব্লক প্রশাসন। এই পর্যটনকেন্দ্রকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সারেঙ্গার বর্তমান বিডিও জানালেন, “কংসাবতী নদী তীরবর্তী বড়দি পাহাড় দেখতে পর্যটকেরা আসেন। শীতের মরশুমে চড়ুইভাতির জমাটি আসর বসে। কিন্তু পরিকাঠামোয় ঘাটতি রয়েছে। পর্যটকদের সুবিধা বাড়ানোর জন্যই একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে ।”
বাঁকুড়া থেকে রাইপুরের রাস্তায় পড়ে পিড়রগাড়ি মোড়। সেখান থেকে খাতড়া যাওয়ার রাস্তায় ছ’কিমি দূরে চুয়াগাড়া মোড়। ওই মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা ধরে চার কিমি গেলেই পাওয়া যাবে নেতুরপুর পঞ্চায়েতের কালাপাথর গ্রাম লাগোয়া বড়দি পাহাড়। তার কোলঘেঁষে বয়ে চলেছে কংসাবতী নদী। নদীর তীরে কালাপাথর গ্রামে রয়েছে একটি ঝর্ণা। স্থানীয় মানুষের কাছে তা কালাঝর্ণা নামে পরিচিত।
বিডিও জানান, পরিকল্পনা মাফিক পাহাড়ে ওঠার চারিদিকে চারটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। চালু হয়েছে। পর্যটকদের থাকার জন্য দু’টি ঘর, শৌচাগার, পাহাড়তলিতে একটি বাগান তৈরি হয়েছে। পানীয় জলের জন্য নলকূপের পাশাপাশি সাব-মার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এখানে রোপওয়ে তৈরির ভাবনাও রয়েছে। এই কাজ শেষ হলে পর্যটকেরা এখানে এসে স্বচ্ছন্দে পিকনিক করতে পারবেন।
একসময়ে মাওবাদী আতঙ্কে জঙ্গলমহলে পর্যটকেরা আসতে ভয় পেতেন। গত কয়েক বছরে সেই পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। কয়েক বছর জঙ্গলমহলের প্রায় প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যা ও পরিকাঠামোর অভাব থাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাটতি রয়েছে বলে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ পর্যটকদের। এ বার তাই পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি স্বল্প পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নেও জোর দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সম্প্রতি বড়দি পাহাড়ে গিয়ে দেখা গেল, পাহাড়ে ওঠার জন্য চারদিকে রাস্তা তৈরির কাজ অনেক দিন আগে শেষ হয়েছে । পায়ে হেঁটে পাহাড় দর্শনের পাশাপাশি চারচাকা গাড়ি ওঠার রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে, চালু হয়ে গেছে অনেক দিন।পর্যটকদের থাকার জন্য কয়েকটি ঘর, শৌচাগার চালু হয়েছে ২০১৯ সালে পুরোদমে। পাহাড়ের নিচে বর্ষায় ঘুরতে আসা খাতড়ার চন্দনা গ্রামের সদানন্দ সিংহ ও হাড়মাসড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা শ্রীমতি রেণুকা মণ্ডল বললেন, “কংসাবতী নদীর তীরে বড়দি পাহাড় আর ঝর্ণা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। এত সুন্দর মনোরম একটা পরিবেশের দৃশ্যপটকে প্রশাসন এত সুন্দর সাজিয়ে তুলেছে দেখে ভাল লাগছে। ভবিষ্যতে বাড়ির সবাইকে নিয়ে আবার আসব।” রাইপুরের সোনামণি দুলে, অসিত দুলেরা বলেন, “এতসুন্দর একটা পিকনিক স্পট। কিন্তু শুধু পাহাড় আর নদী ছাড়া কিছুই নেই। ক্যান্টিন, দোকান ,বিশ্রামাগার, শৌচাগার না থাকায় আমাদের অসুবিধা হল। তবে প্রশাসন এ সবের ব্যবস্থা করছে জেনে আমরা খুশি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শীতকালে কংসাবতী নদীর তীরে, বড়দি পাহাড়ে সারেঙ্গা, রাইপুর, রানিবাঁধ, খাতড়া, সিমলাপাল এলাকার বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন। করোনার ভয়াবহ আবহে এই বর্ষায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু নানা অব্যবস্থার জন্য তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। এখানে থাকার আরও ভালো ব্যবস্থা হলে বহু দূর দূরান্তের পর্যটকেরাও এ বারও আসবেন। মূূল রাস্তা থেকে চার কিলোমিটার রাস্তা খুব খারাপ। শিশু উদ্যান জঙ্গলে পরিপূর্ণ। এর সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার। একটু নজর দিলেই এলাকার অর্থনীতিও ভাল হবে। স্থানীয় কালাপাথর গ্রামের বাসিন্দা বাদল কিস্কু, সবুজ মাণ্ডি বলেন, “প্রশাসন আরও কিছু উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করলে আগামী শীতকাল থেকে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়বে বলে আমরা আশাবাদী।” নেতুরপুর পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্পে আমরা ওই পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এর ফলে যাতায়াতের সুবিধা হবে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য আমরা আরও কিছু কাজের পরিকল্পনা নিচ্ছি।” নেতুুুরপুর প্রাইমারি স্কুলের জনপ্রিয় শিক্ষক সাধন মণ্ডল বললেন,” জঙ্গলমহলের মুকুটমণিপুরের চেয়ে কোন অংশে কম নয় বড়দি পাহাড় ও রাইপুরের সবুুজদ্বীপ, দরকার আরও সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতা ও প্রচার, “। বর্তমান লজের তরুণ ম্যানেজার প্রদীপ মণ্ডল বলেন, এই মুহূর্তে বাইরের মানুষ আসছেন, আমরা লিজে নিয়েছি। পরিবহন ও পরিকাঠামোর অভাব দূরীকরণে সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে প্রশাসনকে”। সর্বত্রই একটা অযত্নে্র ছাপ স্পষ্ট । যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রের, কিন্তু পরতে পরতে সীমাহীন অবহেলা ।শিল্পে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয়া দিগন্ত সৃষ্টি করতে পারে বড়দি পাহাড়, দরকার আরও সরকারের উদ্যোগ।