সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকান্ড সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সম্পর্কে কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে না। এ হত্যাকাণ্ডকে তারা অনাকাংখিত ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।
বুধবার (৫ আগস্ট) কক্সবাজার সৈকতের লাবনী পয়েন্টে সেনা বাহিনীর রেস্ট হাউজ ‘জল তরঙ্গে’ আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দু’বাহিনী প্রধান এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, সিনহা হত্যার ঘটনায় তদন্ত টিম কাজ করছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
তিনি বলেন, কোন ধরণের উস্কানীমূলক কথা বলে দু’বাহিনীর সম্পর্কে কেউ চিড় ধরাতে পারবে না।
অন্যদিকে পুলিশ বাহিনীর প্রধান বেনজীর আহমদ বলেন, সেনা ও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক রয়েছে। কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা এই সম্পর্কে ব্যত্যয় ঘটাবে না। তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে অনেক সংকটে সেনা বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী এক সাথে কাজ করেছে। করোনা পরিস্থিতিতেও দু’বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সাথে কাজ করছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্ত কাজ প্রভাব মুক্ত ভাবে হচ্ছে। সুশৃঙ্খল বাহিনীর কেউ অপরাধে জড়িত থাকলে যথাযথ শাস্তি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সিনহার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে উস্কানীমূলক কথা বলছেন। এই ধরণের উস্কানী দিয়ে তারা কোনভাবে সফল হবে না। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দু’বাহিনী দেশের কল্যাণে এক সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সিনহার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উস্কানীমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান।
সেনা ও পুলিশ বাহিনী প্রধান বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে কক্সবাজার পৌঁছে সেনা বাহিনীর রেস্ট হাউজে বৈঠকে মিলিত হন। এরপর দুপুরে তারা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। পরে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। দুই বাহিনী প্রধান টেকনাফের শামলাপুরে সিনহা যে স্থানে নিহত হয়েছেন সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা সেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর দায়িত্বরত সদস্যদের সাথে কথা বলেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কক্সবাজারের দিকে রওয়ানা হন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান তাঁর একজন সঙ্গিসহ কক্সবাজার আসছিলেন। এসমময় পথে টেকনাফের বাহারছরা শামলাপুর চেক পোষ্টে গাড়িটি থামায় পুলিশ। এই সময়ে গাড়িতে তল্লাশি করা নিয়ে বাক-বিতন্ডা হয়। এর এক পর্যায়ে মেজর সিনহা মো. রাশেদকে লক্ষ্য করে গুলি করে পুলিশ। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটি মঙ্গলবার থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এম মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে গঠিত এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন, পুলিশের চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাকির হোসেন, সেনা বাহিনী কক্সবাজারের রামুস্থ ১০ ডিভিশনের জেওসি’র প্রতিনিধি লে. কর্নেল সাজ্জাদ এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাহজাহান আলী।