Dhaka ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
প্রথমদিনে অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২ পোল্যান্ডের বাংলাদেশের দূত হলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলাম ‘পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষস্থানে উঠতে প্রস্তুত বাংলাদেশ’ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সাক্ষী আবছার আটক ১৩ দিন বৃষ্টিবলয়ে থাকবে পুরো দেশ, হবে কালবৈশাখী-বজ্রপাত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক স্থগিত করলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লুট হওয়া অস্ত্র নিরাপত্তার জন্য হুমকি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা

হারিয়ে যাওয়া শিশুর দুই বছর পর খোঁজ মেলে আলমারিতে!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:২৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০
  • ৩৩০ Time View

উত্তর আমেরিকার বাসিন্দা ড্যানিয়েল প্রায় বছর চারেক হলো একটি নতুন বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে স্ত্রী সারাহ, দুই ছেলে টম এবং জ্যাকবকে নিয়ে থাকতেন। এখানে তারা খুব সুখেই বাস করছিল।

আগের বাড়ি থেকে এটি তুলনায় অনেক বড় আর খোলামেলা হওয়ায় তাদের বেশ পছন্দ হয়। এই বাড়িতে যখন আসে তখন তাদের ছেলেরা খুব ছোট ছিল। ধীরে ধীরে তারা বড় হতে থাকে। তবে এই সুখ বেশিদিন তাদের কপালে স্থায়ী হয়নি।

জ্যাকবের বয়স তখন আট বছর। খুব চঞ্চল প্রকৃতির সে। মাঝে মধ্যেই পাশের বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে চলে যায়। ঘটনার দিন সবাই যখন রাতের খাবার খেতে বসে লক্ষ্য করে জ্যাকব এখনো নিচে নামেনি। জ্যাকবের মা তার খোঁজ করে সেখানেও তাকে খুঁজে পায়নি। তিনি ভাবেন হয়তো কারো বাসায় গিয়েছে। ঘণ্টা দুই কেটে কেছে। রাতও অনেক হলো, জ্যাকব বাড়িতে না ফেরায় এবার সবাই চিন্তিত হলো।

খোঁজাখুঁজি শুরু হলো চারপাশে। অবশেষে জ্যাকবের বাবা পুলিশের সাহায্য নেন। তবুও কোনো খোঁজ মেলেনি জ্যাকবের। কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর সবাই ধরেই নিয়েছে জ্যাকবকে কেউ অপহরণ করেছে। তবে মুক্তিপণ চেয়ে তাদের কাছে কোনো ফোন আসেনি। একসময় সবাই মেনেই নিলো জ্যাকব আর পৃথিবীতে নেই। এদিকে জ্যাকবের মা সারাহ পুত্র শোকে কাতর। প্রতিদিনই চোখের পানি ফেলছেন জ্যাকবের কথা মনে করে।

কেটে গেছে এক এক করে দুই বছর। একদিন জ্যাকবের মা জ্যাকবের ঘর পরিষ্কার করতে যান। ভাবেন জ্যাকবের পুরনো কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখবেন। আলমারির কাপড় সরাতেই তার নজরে এলো কাপড়ের পেছনে কিছু একটা রয়েছে। তিনি সব কাপড় বের করে দেখতে গেলেন সেখানে কি?

সারাহ দেখলেন আলমারির পেছনের দিকটা কাটা এবং কস্টেপ দিয়ে লাগানো। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জ্যাকবের বাবাকে জানালেন ঘটনাটি। ড্যানিয়েল কস্টেপ খুলে দেখতে পেলেন আলমারির পিছনে রয়েছে একটি অন্ধকার ঘর। সেখানে তিনি জ্যাকবের জুতা দেখতে পান। একটি চশমা পান। সেটি ছিল তার পাশের বাড়ির একজনের। এছাড়াও হাতুড়ি, করাত এবং অন্যান্য জিনিস ছিল সেখানে।

ড্যানিয়েলের কিছু বুঝতে আর বাকি রইলো না। দৌড়ে গেলেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। সে দরজা খুলতেই গলা চেপে ধরলেন ড্যানিয়েল। জানতে চাইলেন জ্যাকব কোথায়? সে একটি ঘরের দিকে দেখিয়েই পালিয়ে যায়। ড্যানিয়েল যখন ঘরে ঢুকলেন তখন তিনি দেখতে পেলেন প্রচুর কমিক পরে আছে চারপাশে। আর জ্যাকবও বসে বসে কমিক পড়ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল কমিকস কখনো শেষ হচ্ছে না।

জ্যাকব তার বাবাকে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। পিতা এবং পুত্র উভয়ই একে অপরকে ধরে কাঁদতে থাকে। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। এরপরে তাদের প্রতিবেশী এবং তার স্ত্রীর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ড্যানিয়েল দ্রুত পুলিশকে সব কথা খুলে বলে। প্রতিবেশীরা বেশি দূরে যাওয়ার আগেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে।

এরপর জানা যায়, তাদের প্রতিবেশী হেক এবং তার স্ত্রী ক্যারোলিনের কোনো সন্তান নেই। তাই সন্তানের অভাব পূরণ করতে তারা জ্যাকবকে অপহরণ করেছিল। সন্তানের মায়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মায়া। যাদের সন্তান নেই তারাই শুধু বোঝেন সন্তানের মর্ম। একজন নারীকে পরিপূর্ণ করে তার কোল জুড়ে থাকা শিশু। তবে যাদের সেই সৌভাগ্য হয় না তারাই বোঝেন এর কষ্ট। তাই বলে অন্যের সন্তানকে অপহরণ করবে। এটা কেমন কথা। তাও আবার পাশের বাসার শিশুকে চুরি করে নিজেদের কাছে রাখা। ভাবছেন রাখতেই পারে।

তবে জানলে অবাক হবেন, উত্তর আমেরিকার এই দম্পতি তাদের পাশের বাসার এক ছেলেকে চুরি করে। দুই বছর ধরে তাকে তারা লালন পালন করছে নিজের সন্তানের মতোই। ক্যারোলিন বলেছিলেন, তিনি সবসময় তার সন্তানের মতো জ্যাকবকে লালন-পালন করেছেন। এই দুই বছরই তার জীবনের সেরা সময়। তবে অন্য কারো বাচ্চাকে অপহরণ করা অপরাধ। তাই ক্যারোলিন এবং হেককে শাস্তি দেয়া হয়।

যখন জ্যাকবকে পাওয়া গেল তখন তার বয়স ১০ বছর। জ্যাকব পুলিশকে একটি চিঠিতে জানায়, ক্যারোলিন এবং হেক তার সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করেননি। সন্তানের মতো করেই তাকে লালন পালন করেছে। এই চিঠির পরে ক্যারোলিন এবং হেককে জামিন দেয়া হয়। আবার তারা ড্যানিয়েলের পাশেই থাকতে শুরু করেন। এখন উভয় পরিবার একসঙ্গে জ্যাকবকে দেখাশোনা করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

প্রথমদিনে অনুপস্থিত প্রায় ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২

হারিয়ে যাওয়া শিশুর দুই বছর পর খোঁজ মেলে আলমারিতে!

Update Time : ০৮:২৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুলাই ২০২০

উত্তর আমেরিকার বাসিন্দা ড্যানিয়েল প্রায় বছর চারেক হলো একটি নতুন বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে স্ত্রী সারাহ, দুই ছেলে টম এবং জ্যাকবকে নিয়ে থাকতেন। এখানে তারা খুব সুখেই বাস করছিল।

আগের বাড়ি থেকে এটি তুলনায় অনেক বড় আর খোলামেলা হওয়ায় তাদের বেশ পছন্দ হয়। এই বাড়িতে যখন আসে তখন তাদের ছেলেরা খুব ছোট ছিল। ধীরে ধীরে তারা বড় হতে থাকে। তবে এই সুখ বেশিদিন তাদের কপালে স্থায়ী হয়নি।

জ্যাকবের বয়স তখন আট বছর। খুব চঞ্চল প্রকৃতির সে। মাঝে মধ্যেই পাশের বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে চলে যায়। ঘটনার দিন সবাই যখন রাতের খাবার খেতে বসে লক্ষ্য করে জ্যাকব এখনো নিচে নামেনি। জ্যাকবের মা তার খোঁজ করে সেখানেও তাকে খুঁজে পায়নি। তিনি ভাবেন হয়তো কারো বাসায় গিয়েছে। ঘণ্টা দুই কেটে কেছে। রাতও অনেক হলো, জ্যাকব বাড়িতে না ফেরায় এবার সবাই চিন্তিত হলো।

খোঁজাখুঁজি শুরু হলো চারপাশে। অবশেষে জ্যাকবের বাবা পুলিশের সাহায্য নেন। তবুও কোনো খোঁজ মেলেনি জ্যাকবের। কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর সবাই ধরেই নিয়েছে জ্যাকবকে কেউ অপহরণ করেছে। তবে মুক্তিপণ চেয়ে তাদের কাছে কোনো ফোন আসেনি। একসময় সবাই মেনেই নিলো জ্যাকব আর পৃথিবীতে নেই। এদিকে জ্যাকবের মা সারাহ পুত্র শোকে কাতর। প্রতিদিনই চোখের পানি ফেলছেন জ্যাকবের কথা মনে করে।

কেটে গেছে এক এক করে দুই বছর। একদিন জ্যাকবের মা জ্যাকবের ঘর পরিষ্কার করতে যান। ভাবেন জ্যাকবের পুরনো কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখবেন। আলমারির কাপড় সরাতেই তার নজরে এলো কাপড়ের পেছনে কিছু একটা রয়েছে। তিনি সব কাপড় বের করে দেখতে গেলেন সেখানে কি?

সারাহ দেখলেন আলমারির পেছনের দিকটা কাটা এবং কস্টেপ দিয়ে লাগানো। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জ্যাকবের বাবাকে জানালেন ঘটনাটি। ড্যানিয়েল কস্টেপ খুলে দেখতে পেলেন আলমারির পিছনে রয়েছে একটি অন্ধকার ঘর। সেখানে তিনি জ্যাকবের জুতা দেখতে পান। একটি চশমা পান। সেটি ছিল তার পাশের বাড়ির একজনের। এছাড়াও হাতুড়ি, করাত এবং অন্যান্য জিনিস ছিল সেখানে।

ড্যানিয়েলের কিছু বুঝতে আর বাকি রইলো না। দৌড়ে গেলেন প্রতিবেশীর বাড়িতে। সে দরজা খুলতেই গলা চেপে ধরলেন ড্যানিয়েল। জানতে চাইলেন জ্যাকব কোথায়? সে একটি ঘরের দিকে দেখিয়েই পালিয়ে যায়। ড্যানিয়েল যখন ঘরে ঢুকলেন তখন তিনি দেখতে পেলেন প্রচুর কমিক পরে আছে চারপাশে। আর জ্যাকবও বসে বসে কমিক পড়ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল কমিকস কখনো শেষ হচ্ছে না।

জ্যাকব তার বাবাকে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। পিতা এবং পুত্র উভয়ই একে অপরকে ধরে কাঁদতে থাকে। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। এরপরে তাদের প্রতিবেশী এবং তার স্ত্রীর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ড্যানিয়েল দ্রুত পুলিশকে সব কথা খুলে বলে। প্রতিবেশীরা বেশি দূরে যাওয়ার আগেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে।

এরপর জানা যায়, তাদের প্রতিবেশী হেক এবং তার স্ত্রী ক্যারোলিনের কোনো সন্তান নেই। তাই সন্তানের অভাব পূরণ করতে তারা জ্যাকবকে অপহরণ করেছিল। সন্তানের মায়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মায়া। যাদের সন্তান নেই তারাই শুধু বোঝেন সন্তানের মর্ম। একজন নারীকে পরিপূর্ণ করে তার কোল জুড়ে থাকা শিশু। তবে যাদের সেই সৌভাগ্য হয় না তারাই বোঝেন এর কষ্ট। তাই বলে অন্যের সন্তানকে অপহরণ করবে। এটা কেমন কথা। তাও আবার পাশের বাসার শিশুকে চুরি করে নিজেদের কাছে রাখা। ভাবছেন রাখতেই পারে।

তবে জানলে অবাক হবেন, উত্তর আমেরিকার এই দম্পতি তাদের পাশের বাসার এক ছেলেকে চুরি করে। দুই বছর ধরে তাকে তারা লালন পালন করছে নিজের সন্তানের মতোই। ক্যারোলিন বলেছিলেন, তিনি সবসময় তার সন্তানের মতো জ্যাকবকে লালন-পালন করেছেন। এই দুই বছরই তার জীবনের সেরা সময়। তবে অন্য কারো বাচ্চাকে অপহরণ করা অপরাধ। তাই ক্যারোলিন এবং হেককে শাস্তি দেয়া হয়।

যখন জ্যাকবকে পাওয়া গেল তখন তার বয়স ১০ বছর। জ্যাকব পুলিশকে একটি চিঠিতে জানায়, ক্যারোলিন এবং হেক তার সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করেননি। সন্তানের মতো করেই তাকে লালন পালন করেছে। এই চিঠির পরে ক্যারোলিন এবং হেককে জামিন দেয়া হয়। আবার তারা ড্যানিয়েলের পাশেই থাকতে শুরু করেন। এখন উভয় পরিবার একসঙ্গে জ্যাকবকে দেখাশোনা করেন।