মহীতোষ গায়েন, মফস্বল সম্পাদক,পশ্চিমবঙ্গ:
“ইয়াস” আজ সকাল ঠিক ৯.১৫ মিনিটে ল্যান্ড করে উড়িষ্যার ধামরা ও বালাসোরের মাঝে। উড়িষ্যার জনজীবনকে বিধ্বস্ত করে পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুর,পুরুলিয়া,বাঁকুড়া, হুগলি,দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে এই ঘূর্ণিঝড়।
উড়িষ্যার বালেশ্বরে ঝড়ের দাপটে অধিকাংশ স্থান এখনো জলের তলায়।
এই “ইয়াস”মোকাবিলার জন্য আজ কেন্দ্রীয় সরকার ১৭কলাম সেনা নিয়োগ করে পশ্চিমবঙ্গে।কেন্দ্রীয় সরকার উড়িষ্যার জন্য ৬০০ কোটি ও পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৪০০কোটি টাকার অনুদান আগেই ঘোষণা করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে গতকালই ৭৪ হাজার সরকারি কর্মী ও ২ লক্ষ পুলিশ নামানো হয় বিপর্যয় মোকাবিলায়।
ইয়াসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, দীঘায় উপকূলবর্তী এলাকা জলে ভেসেগেছে, দোকানপাট জলের তলায়,রাস্তায় গলা সমান জল।পূর্ব মেদিনীপুরের ১০০টির গ্রাম জলে ডুবে গেছে, উদয়পুর বিচ এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে। মহিষাদল, নন্দীগ্রাম, রামনগর, কন্টাই, হলদিয়া হয়েছে জল প্লাবিত। মন্দারমণি, শঙ্করপুর তছনছ করেছে ইয়াস। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ, বকখালি, ফ্রেজারগঞ্জ, মৌসুনি দ্বীপ লক্ষীপুর, নামখানা, পাথরপ্রতীমা, গোসাবা,বাসন্তী, কুলপী বিস্তীর্ণ এলাকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বহু কাঁচাবাড়ি ভেঙে গেছে, ফসলের মাঠ জলের তলায় এই এলাকাগুলিতে কয়েক হাজার মানুষ এই ঘূর্ণিঝড়ের শিকার। গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রম জলের তলায়।
একে ভরাকোটাল তাতে আবার ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে বহু নদী বাঁধ ভেঙে গেছে, ক্যানিং এর নদী বাঁধ ভেঙে গেছে। কালিন্দী, বিদ্যাধরী, নদী বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ন এলাকা ভাসিয়েছে। উত্তর ২৪পরগনার কলাগাছি, মাতলা নদীবাঁধ ভেঙে ভাসিয়েছে বেড়মজুর, ধামাখালি, সরবেড়িয়া ও সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ এলাকা। ইছামতী নদীবাঁধ ভেঙে বসিরহাটের বহু এলাকার প্লাবিত। হিঙ্গলগঞ্জের বহু
এলাকা লণ্ডভণ্ড করেছে ইয়াস। দুই মেদিনীপুর ও দুই ২৪পরগনা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে ইয়াস। গ্রামের পর গ্রাম জলের তলায়, হাজার হাজার গাছ ভেঙ্গেছে, অসংখ্য গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটেছে, লক্ষ লক্ষ চাষের জমি লোনা জলে ডুবে গেছে। টালি ও টিনের বাড়ির ছাঁদ উড়ে গেছে। কলকাতা টিভির সাংবাদিকের গাড়ি ভেসে যায়, কোনক্রমে প্রাণে বাঁচেন।
বহু সাংবাদিককে দেখা গেছে গলা জলে দাঁড়িয়ে ও রাস্তায় সাঁতরে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে। হাজার হাজার পানের বরজ ধ্বংস হয়েছে।বহু নৌকা খণ্ড বিখন্ড,বড় বড় পাথর উড়ে উড়ে পড়েছে রাস্তায়, লক্ষ লক্ষ মানুষের কান্না, হাহাকার আর আর্তনাদে প্লাবিত ও বিপর্যস্ত এলাকার আকাশে বাতাসে এখনও পরিপ্লাবিত।
আগামীকাল মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে হিঙ্গলগঞ্জে এবং বকখালি, নন্দীগ্রাম এলাকায় সরজমিনে বিপর্যয় খতিয়ে দেখতে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন এই ঘূর্ণিঝড়ে পশ্চিমবঙ্গে ৩ লক্ষের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১৩৪টি নদীবাঁধ ভেঙেছে। নোনা জল ঢুকে বহু চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎসচাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকাগুলি থেকে ১৫ লক্ষেরও বেশি মানুষকে সরকারের ফ্লাড সেন্টারে ও অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে
আগেই সরিয়ে তাদের সরকার থেকে থাকে খাওয়া ও চিকিৎসার যাবতীয় সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
কলকাতার চেতলা, কালীঘাট, রাসবিহারীও জলমগ্ন হয়েছে, বাবুঘাট ও আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকাও বিপর্যস্ত হয়েছে। সিটি কলেজে সহ বহু স্থানে ত্রাণ শিব খোলা হয়েছে। তবে এবারের ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আমফানের মত কলকাতায় তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
ভরা কোটাল ও ঘূর্ণিঝড়ের জোড়া দাপটে অসংখ্য পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এই বিপর্যয় মোকাবিলায় ৩ লক্ষেরবেশি কর্মী নিযুক্ত করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। এই ঘূর্ণিঝড়ে সরকারি হিসেবে মাত্র ২জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে তিনি জানান।
আজ রাত ৮.৪৫ পর্যন্ত এই ভরা কোটালের প্রভাব থাকবে বলে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। আজ মুখ্যমন্ত্রী বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি নবান্ন থেকে সমস্ত রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার পরার্মশ দিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুক্ষণ আগে জানালেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আগামী ২৮তারিখ থেকে ইয়াসে বিপর্যস্ত সমগ্ৰ এলাকা পরিদর্শনে যাবেন।