অনুষ্কা মণ্ডল,উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রতিনিধি:

ভারতের প্রতিটি রাজ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দফায় দফায় প্রবল পরাক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

যেখানে ২০২১-এর ১লা জানুয়ারি থেকে ২০শে মার্চ এর মধ্যে ভারতের দৈনিক সংক্রমণের গ্রাফটি নিম্নগামী ছিল ;বর্তমানে তার ঊর্ধ্বগতি কার্যত বেসামাল হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা ভারতবর্ষের কাছে। এই ভয়াবহ রূপের পিছনে প্রশাসনিক গাফিলতির দিকগুলি আলোচিত হচ্ছে রাজনৈতিক মহলগুলিতে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে যেখানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই করনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়েছিল সেখানে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়ার নিষেধাজ্ঞা তুলে ফের স্কুল কলেজ অফিস চালু করার দাবিতে সরব হয় পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রের কড়া নির্দেশিকা জারি থাকলেও মহারাষ্ট্র, কেরালা, দিল্লি, ছত্তিসগড়, পাঞ্জাবসহ কিছু রাজ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা একেবারে শিথিল হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, মহামারির মধ্যে নির্বাচনকে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্তকেও অনেকে এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু বলে মনে করেন। তবে যথাসময়ে নির্বাচন করা সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা বলে দাবি করেন একাংশ। কিন্তু এক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী সমাবেশগুলিকে নিয়ে তীব্র নিন্দার ঝড় তুলেছে সাধারণ মানুষ।
তবে কি ভারত দ্বিতীয় ঢেউ এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছিল? জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারিতে করোনা সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ায় শর্তসাপেক্ষ প্রস্তাবিত তারিখেই কুম্ভ মেলার অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই ধর্মীয় সমাবেশ নিয়েও মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন মহল। সব আলোচনারই পক্ষ- বিপক্ষ উভয়ের মতামত যুক্তিযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মাথাচাড়া দেওয়ার আগে থেকেই সার্বিক টিকাকরণ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিল রাজ্য। যদিও এই গোটা প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রাধীন থাকায় তাদের নির্দেশিকা মেনে কাজ করতে হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে। তবে প্রথমসারির করোনা যোদ্ধা ও ষাটোর্ধ্বদের পরে ৪৫ বছরের টিকাকরণের পর্ব শুরু হতেই প্রতিষেধকের ঘাটতি দেখা দেয়। ১৮ বছর বয়সীদের টিকা কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও এখনও তার অগ্রগতি সামান্য। এই অবস্থায় করনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ নিয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা খুবই শঙ্কিত। যেহেতু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ মূলত অল্পবয়সীদের উপরে আছড়ে পড়ছে তাই এই বয়সের প্রত্যেককে টিকার আওতায় আনতে না পারলে তৃতীয় ঢেউয়ের এই আশঙ্কা সত্যি হতে বেশি সময় লাগবে না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সসীমার ৪ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রাথমিক লক্ষ্য থাকলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ১২০০ জনকে টিকা দেওয়া গিয়েছে। ৪৫ বছরের উর্ধ্বে এখনো প্রায় ৫০% মানুষের টিকাকরণ বাকি। সবমিলিয়ে টিকাকরণের লক্ষ্য অনুযায়ী রাজ্যের সাত কোটি ১৭ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ১ কোটি ২৪ লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধকের আওতায় আনা গিয়েছে।

তবে সম্প্রতি যেভাবে রাজ্যে দৈনিক করোনা সংক্রমণ দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে চিকিৎসকদের দাবিতে সাময়িক লকডাউন শুরু হয়েছে গোটা দেশজুড়ে। ২০২০-এর লকডাউন এর স্মৃতি এখনো মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। তবে ফের এই লকডাউনে সাধারণ মানুষের কি হবে? এই নিয়েও প্রশাসনিক মহল নানান প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সংক্রমণের চেইন ভাঙতে কমপক্ষে ১০ দিনের লকডাউন করা জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসক মহল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চরিত্র বদলে করণা নতুন রূপে বেশি মানুষকে আক্রমণ করে সংক্রমণের মাত্রাকে বৃদ্ধি করছে বলে ধরে নেওয়া যায়। এই ভাবেই সংক্রমণের পরিধি বেড়ে চলেছে। সাধারণত প্রতিটি ঢেউয়ের পরে সাময়িক একটা ইমিউনিটি তৈরি হয়। তার মধ্যে অন্তত ৮০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া গেলে তৃতীয় ঢেউয়ের বৃত্ত ছোট হতে পারে। তাই করোনার এই বীভৎস রূপ এড়াতে সাধারণ মানুষকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এই সংক্রমণ এড়াতে ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প আর কিছু নেই। ড্রপলেট ইনফেকশন অর্থাৎ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে রোগটি ছড়ানোর জন্য সন্দেহজনক আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধ। নিজেকে নিরাপদ রাখতে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত যেকোনো ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়েছে । আর তার জন্য লকডাউন সর্বাধিক জরুরী। এই পরিস্থিতিতে ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সচেতনতা অবলম্বন না করলে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে