Dhaka ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুভ জন্মদিন, আগুনের ফুল শিরীন আখতার – জিয়াউল হক মুক্তা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:১৫:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১
  • ১২৮ Time View

মোঃ পাভেল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি:

[বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালের সকল সামরিক-বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র ও যুদ্ধাপরাধ-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আর শ্রমিক-নারী-কৃষক-কৃষিশ্রমিকের সুনির্দিষ্ট অধিকার আদায়ের আন্দোলনে-সংগ্রামে রাজপথের সাহসী নেতা শিরীন আখতারের জন্মদিন আজ ১২ এপ্রিল। এ রচনায় তাঁর জীবনের ওপর সামান্য আলোকপাত করেছেন জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউল হক মুক্তা।]
আজ আমাদের দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক প্রিয় শিরীন আপার ৬৬তম জন্মদিন। ভীষণ এ মহামারীকালে ৬৭ বছর বয়সে পদার্পনের দিনেও তাঁর জীবন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়—কখনও থেমে যেতে নেই। সংগ্রাম চিরন্তন ও নিরন্তর, সংগ্রাম জীবনভর— এই তাঁর জীবনের শিক্ষা অন্যদের জন্য।
খুব ছোটকালে ১৯৬৮ সালে ১৪ বছর বয়সে তিনি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সক্রিয় গোপন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’-এর একজন সক্রিয় অনুসারী হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। সে সময় সমাজে প্রতিষ্ঠিত একটি পরিবারের একজন ‘মেয়ে’র জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া খুব সহজ ছিল না। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগহণ করেন।
১৯৭১ সালের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি আজিমপুরের দুঃসাহসী নগর-গেরিলা গ্রুপ সবুজ-সজীব গ্রুপের সদস্য হিসেবে ভুমিকা পালন করেন। সেসময় আজিমপুর কলোনির কিশোরীদের নিয়ে নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক দুঃসাহসী কাজের নেতৃত্ব দেন। ওই সময়ের ঘটনাবলী নিয়ে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সে সময়ের কিশোরী লিনু হকের বই: মেয়ে বিচ্ছু।
স্বাধীনতার পর সে ধারাবাহিকতায় তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থি ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ থেকে জাসদ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে প্রকাশ্য কার্যক্রম পরিচালনায় বাঁধা দেয়া হতে থাকলে দলের সক্রিয় সকল নেতাদের মতো তাঁকেও আত্মগোপনে গিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ১৯৭৫ সালে নিষিদ্ধ হবার পর দল বিপ্লবী গণবাহিনী গড়ে তোলে। ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল দলের অভ্যন্তরে যোগাযোগ ব্যবস্থাটি সক্রিয় রাখা— বিশেষত উত্তরবঙ্গে। মনে রাখা দরকার সেটা টেলিফোন বা মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না, ভালো সড়ক যোগাযোগেরও না।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৫ দিন পর ১৯৭৫ সালের ৩০ আগস্ট খোন্দকার মুশতাকের শাসনামলে তিনি তার বেইজ-এলাকা রংপুর থেকে সশস্ত্র অবস্থায় গ্রেফতার হন ও অমানুষিক নিপীড়নের শিকার হন। ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর তাঁকে ঢাকায় এনে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয় এক সপ্তাহ ও ৩ নভেম্বর চার জাতীয় নেতার জেল-হত্যার পরপরই তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জিয়াউর রহমানের সামরিক আদালতের রায়ে তাকে দুবছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। ১৯৭৭ সালের ১৩ জুলাই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন ডাকসুর ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদক পদে। ১৯৮২ সালে সামরিক জান্তা এরশাদ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন ও স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৩-র ১৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ঐতিহাসিক মধ্য-ফেব্রুয়ারির সামরিক-স্বৈরশাসন বিরোধী জঙ্গি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুনতর গতি ও মাত্রা দেন।

১৯৮৭-র ১৪ জানুয়ারি সালে ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেবার পর তিনি জাতীয় শ্রমিক জোটের মাধ্যমে শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন ও নেতৃত্ব দেন; সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনও অব্যাহত রাখেন।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শেষদিকে তিনি তাঁর ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর বাবার বাসার নীচতলার ছোট একটি কক্ষে গড়ে তোলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘কর্মজীবী নারী’। তাঁর এ উদ্যোগ বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের দুটো প্রধান নেতিবাচক প্রবণতাকে ছিন্নভিন্ন-তছনছ করে দেয়; ও পরে যুগপোযোগী করে তোলে।
প্রথমত, বাংলাদেশের নারী আন্দোলন তখনও পর্যন্ত ছিল এলিট ও মধ্যবিত্তের অ্যাজেন্ডায় ফ্যাঁচফ্যাঁচে— ‘পিতার সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার চাই’ জাতীয় ইস্যুতে পরিপূর্ণ। তিনি সামনে টেনে আনলেন সমাজ বিকাশের এ পর্যায়ে সর্বহারা নারীর ইস্যু— যে নারীর পিতার সম্পত্তিই নেই কিংবা যে নারী নিজেই সর্বহারা, শ্রম ছাড়া যার বিকোবার কিছু নেই— তাদের ইস্যু। বিকাশমান ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের নারীর ইস্যুর পাশাপাশি তিনি সামনে টেনে আনলেন সার্ভিস সেক্টরের নারীর ইস্যু; শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী নারীর সমমজুরি ও সমঅধিকারের ইস্যু। পরিবারে-কর্মক্ষেত্রে-সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন নিপীড়নের ইস্যুটিতেও তিনি ব্যাপকভাবে আলোকপাত করেন। তাঁর এসব বহুমাত্রিক উদ্যোগ পর্যায়ক্রমে সকল নারী সংগঠনকে বাধ্য করে তাদের নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা পরিবর্তন করতে, নয়তো বিলুপ্ত হতে।
দ্বিতীয়ত, ডান-বাম নির্বিশেষ বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রমিক নেতৃত্ব নারী শ্রমিকের বিশেষ অধিকারগুলোর প্রতি চরম নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন; অপ্রকাশ্যে হয়তো এখনও অনেকেই তাই করেন। নারী শ্রমিকের বিশেষ অধিকারের কথা [সমকাজে সমমজুরি ও সমঅধিকার, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃত্বকালীন ছুটি, শিশুযত্নকেন্দ্র ইত্যাদি] সামনে আনলেই এ নেতৃত্বের সবাই-সমস্বরে চিৎকার করে উঠতেন কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে যে শোষিত শ্রমিক তো শ্রমিকই তার আবার নারী-পুরুষ কী? হিমালয়সম এসব নেতৃত্বকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন মোটামুটি একা। স্থানীয়-জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিসরে তিনি এসব নিয়ে কাজ করেছেন নিরলস। এবং এরই মধ্যে তিনি এগুলোর বেশির ভাগেরই আইনগত স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। সকল শ্রমিক সংগঠনে নারী সেল গঠনের তাঁর যে প্রস্তাবনা, তাও অর্জিত হয়েছে।
খুব সংক্ষেপে বললে— তিনি নারী আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন শ্রমিকের অ্যাজোন্ডায়, আর শ্রমিক আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন নারীর অ্যাজেন্ডায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

শুভ জন্মদিন, আগুনের ফুল শিরীন আখতার – জিয়াউল হক মুক্তা

Update Time : ০৭:১৫:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১

মোঃ পাভেল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি:

[বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীকালের সকল সামরিক-বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র ও যুদ্ধাপরাধ-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আর শ্রমিক-নারী-কৃষক-কৃষিশ্রমিকের সুনির্দিষ্ট অধিকার আদায়ের আন্দোলনে-সংগ্রামে রাজপথের সাহসী নেতা শিরীন আখতারের জন্মদিন আজ ১২ এপ্রিল। এ রচনায় তাঁর জীবনের ওপর সামান্য আলোকপাত করেছেন জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউল হক মুক্তা।]
আজ আমাদের দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক প্রিয় শিরীন আপার ৬৬তম জন্মদিন। ভীষণ এ মহামারীকালে ৬৭ বছর বয়সে পদার্পনের দিনেও তাঁর জীবন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়—কখনও থেমে যেতে নেই। সংগ্রাম চিরন্তন ও নিরন্তর, সংগ্রাম জীবনভর— এই তাঁর জীবনের শিক্ষা অন্যদের জন্য।
খুব ছোটকালে ১৯৬৮ সালে ১৪ বছর বয়সে তিনি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সক্রিয় গোপন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’-এর একজন সক্রিয় অনুসারী হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। সে সময় সমাজে প্রতিষ্ঠিত একটি পরিবারের একজন ‘মেয়ে’র জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া খুব সহজ ছিল না। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগহণ করেন।
১৯৭১ সালের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি আজিমপুরের দুঃসাহসী নগর-গেরিলা গ্রুপ সবুজ-সজীব গ্রুপের সদস্য হিসেবে ভুমিকা পালন করেন। সেসময় আজিমপুর কলোনির কিশোরীদের নিয়ে নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক দুঃসাহসী কাজের নেতৃত্ব দেন। ওই সময়ের ঘটনাবলী নিয়ে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সে সময়ের কিশোরী লিনু হকের বই: মেয়ে বিচ্ছু।
স্বাধীনতার পর সে ধারাবাহিকতায় তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রপন্থি ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ থেকে জাসদ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে প্রকাশ্য কার্যক্রম পরিচালনায় বাঁধা দেয়া হতে থাকলে দলের সক্রিয় সকল নেতাদের মতো তাঁকেও আত্মগোপনে গিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ১৯৭৫ সালে নিষিদ্ধ হবার পর দল বিপ্লবী গণবাহিনী গড়ে তোলে। ১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল দলের অভ্যন্তরে যোগাযোগ ব্যবস্থাটি সক্রিয় রাখা— বিশেষত উত্তরবঙ্গে। মনে রাখা দরকার সেটা টেলিফোন বা মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না, ভালো সড়ক যোগাযোগেরও না।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৫ দিন পর ১৯৭৫ সালের ৩০ আগস্ট খোন্দকার মুশতাকের শাসনামলে তিনি তার বেইজ-এলাকা রংপুর থেকে সশস্ত্র অবস্থায় গ্রেফতার হন ও অমানুষিক নিপীড়নের শিকার হন। ১৯৭৫ সালের ২৫ অক্টোবর তাঁকে ঢাকায় এনে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয় এক সপ্তাহ ও ৩ নভেম্বর চার জাতীয় নেতার জেল-হত্যার পরপরই তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। জিয়াউর রহমানের সামরিক আদালতের রায়ে তাকে দুবছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। ১৯৭৭ সালের ১৩ জুলাই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন ডাকসুর ছাত্রী মিলনায়তন সম্পাদক পদে। ১৯৮২ সালে সামরিক জান্তা এরশাদ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন ও স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৩-র ১৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ঐতিহাসিক মধ্য-ফেব্রুয়ারির সামরিক-স্বৈরশাসন বিরোধী জঙ্গি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নতুনতর গতি ও মাত্রা দেন।

১৯৮৭-র ১৪ জানুয়ারি সালে ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেবার পর তিনি জাতীয় শ্রমিক জোটের মাধ্যমে শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন ও নেতৃত্ব দেন; সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনও অব্যাহত রাখেন।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শেষদিকে তিনি তাঁর ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর বাবার বাসার নীচতলার ছোট একটি কক্ষে গড়ে তোলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘কর্মজীবী নারী’। তাঁর এ উদ্যোগ বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের দুটো প্রধান নেতিবাচক প্রবণতাকে ছিন্নভিন্ন-তছনছ করে দেয়; ও পরে যুগপোযোগী করে তোলে।
প্রথমত, বাংলাদেশের নারী আন্দোলন তখনও পর্যন্ত ছিল এলিট ও মধ্যবিত্তের অ্যাজেন্ডায় ফ্যাঁচফ্যাঁচে— ‘পিতার সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার চাই’ জাতীয় ইস্যুতে পরিপূর্ণ। তিনি সামনে টেনে আনলেন সমাজ বিকাশের এ পর্যায়ে সর্বহারা নারীর ইস্যু— যে নারীর পিতার সম্পত্তিই নেই কিংবা যে নারী নিজেই সর্বহারা, শ্রম ছাড়া যার বিকোবার কিছু নেই— তাদের ইস্যু। বিকাশমান ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের নারীর ইস্যুর পাশাপাশি তিনি সামনে টেনে আনলেন সার্ভিস সেক্টরের নারীর ইস্যু; শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী নারীর সমমজুরি ও সমঅধিকারের ইস্যু। পরিবারে-কর্মক্ষেত্রে-সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন নিপীড়নের ইস্যুটিতেও তিনি ব্যাপকভাবে আলোকপাত করেন। তাঁর এসব বহুমাত্রিক উদ্যোগ পর্যায়ক্রমে সকল নারী সংগঠনকে বাধ্য করে তাদের নিজ নিজ অ্যাজেন্ডা পরিবর্তন করতে, নয়তো বিলুপ্ত হতে।
দ্বিতীয়ত, ডান-বাম নির্বিশেষ বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রমিক নেতৃত্ব নারী শ্রমিকের বিশেষ অধিকারগুলোর প্রতি চরম নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন; অপ্রকাশ্যে হয়তো এখনও অনেকেই তাই করেন। নারী শ্রমিকের বিশেষ অধিকারের কথা [সমকাজে সমমজুরি ও সমঅধিকার, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃত্বকালীন ছুটি, শিশুযত্নকেন্দ্র ইত্যাদি] সামনে আনলেই এ নেতৃত্বের সবাই-সমস্বরে চিৎকার করে উঠতেন কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে যে শোষিত শ্রমিক তো শ্রমিকই তার আবার নারী-পুরুষ কী? হিমালয়সম এসব নেতৃত্বকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন মোটামুটি একা। স্থানীয়-জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিসরে তিনি এসব নিয়ে কাজ করেছেন নিরলস। এবং এরই মধ্যে তিনি এগুলোর বেশির ভাগেরই আইনগত স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। সকল শ্রমিক সংগঠনে নারী সেল গঠনের তাঁর যে প্রস্তাবনা, তাও অর্জিত হয়েছে।
খুব সংক্ষেপে বললে— তিনি নারী আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন শ্রমিকের অ্যাজোন্ডায়, আর শ্রমিক আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন নারীর অ্যাজেন্ডায়।