Dhaka ০১:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৌদিতে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ালো ইসি সংস্কার না করে কোনো নির্বাচনেই ভালো ফল পাওয়া যাবে না : কমিশন প্রধান ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বাভাস, বাড়বে গরমের অনুভূতি জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় টেকসই কর্মসূচি বাড়ানো হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা রাজনৈতিক পর্যায়ে সার্কের অগ্রগতি হয়নি : নেপালের রাষ্ট্রদূত শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ১৯১ রানেই অলআউট টাইগাররা প্রধান উপদেষ্টা কাতার সফরে যাচ্ছেন সোমবার

বহু বিবাহের নায়িকা খুলনার নীলার অজানা কাহিনী

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:১৮:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১
  • ১৩০ Time View
খুলনা প্রতিনিধিঃ
বিয়ের নামে বহু পুরুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ লুট, প্রতারণা, জালিয়াতি ও নিরীহ যুবকদের বিয়ে করে মামলায় ফেলে হয়রানি করছে খুলনার নারী সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টি।
তার ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তির দাবি করছেন তার সাবেক স্বামী মো. আব্দুল বাকী।
সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা মো. আব্দুল বাকী মহানগরীর নাজিরঘাট এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সুলতানুল আলম বাদলের মেয়ে সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে সুলতানা পারভীন বৃষ্টি এ পর্যন্ত ৮ টির অধিক বিয়ে করেছেন। বিয়ে করে কিছুদিন পর সেই স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া এবং তার কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নেওয়াই তার মূল উদ্দেশ্য। নীলার মূল টার্গেট সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী যুবক।
প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে তিনি ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলেন টার্গেটকৃত পুরুষদের। আর যুবকরা তার রূপের ফাঁদে পা দিয়ে বিয়ে করে। পরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতেন নিরীহ মানুষদের। এভাবে হয়রানি করে তাদের কাছ থেকেও হাতিয়েনেন টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৯ সালে বৃষ্টির প্রথম বিয়ে হয় মাদারীপুর জেলার হরিকুমারিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম শিকদারের জাপান প্রবাসী ছেলে শাহাবউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে। তখন বয়স ছিল তখন ১৫ বছরেরও কম। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর ঘর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। তার উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও মালামাল চুরির ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানায় একটি জিডি করেন শাহাবউদ্দিন। যার নম্বর ৭৩৮, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯। যদিও ২০০১ সালে শাহাবউদ্দিনের সঙ্গে বৃষ্টির বিচ্ছেদ হয়।
দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০০৫ সালের ৬ মে। বৃষ্টির দ্বিতীয় স্বামীর নাম এসএম মুনির হোসেন। তিনি খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা রোড এলাকার মো. মকবুল হোসেনের ছেলে। তখন নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে মুনির হোসেনের সঙ্গে এক লাখ টাকার কাবিননামায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও উগ্র আচরণের শিকার হন স্বামী মুনির। একপর্যায়ে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে এ বাড়ি থেকেও বেরিয়ে যান বৃষ্টি। পরে একই বছরের ১০ ডিসেম্বর তাকে তালাক দেন মুনির হোসেন। যদিও পরবর্তীতে তার কাছ থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করতে ২০০৬ সালে মুনির হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক আদালতে মামলা করেন বৃষ্টি।
সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে ২০০৮ সালের এপ্রিলে বিয়ে করেন। এবার খুলনা নগরীর খালিশপুর ওয়ারলেস ক্রস রোডের আব্দুল মান্নানের ছেলে ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে বিয়ে করেন। তবে শর্ত থাকে বিয়ের পর বৃষ্টি নিজের আত্মীয়ের মাধ্যমে বনিকে ইতালি নেবেন। বিদেশে নেয়ার কথা বলে তৃতীয় স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রকাশ পেতে থাকে বৃষ্টির প্রতারণা। একপর্যায়ে তাদের মধ্যেও বিচ্ছেদ ঘটে।
এ ঘটনায় নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ায় বৃষ্টির বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বামী শেখ মঈনুল আরেফিন বনি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে যথারীতি টাকা আদায় করতে বনির বিরুদ্ধেও খুলনার বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা করেন প্রতারক বৃষ্টি।
বনির সঙ্গে মামলা চললেও ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টি। সেখানেও দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়নি। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ইফতেখার। এরপর ২০১২ সালে বিয়ে করেন বাগেরহাটের বাসিন্দা কামাল হোসেনকে। ২০১৭ সালে ইতালি প্রবাসী মাদারীপুরের মোহাম্মদ আজিমকে, ২০১৮ সালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ রহমানকে এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে খুলনা মহানগরীর নাজির ঘাট এলাকার মো. আব্দুল বাকীকে বিয়ে করেন।
আট নম্বর স্বামী মো. আব্দুল বাকীর সঙ্গে প্রতারণা করায় বৃষ্টির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে চেক ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জে থাকার সময় ঢাকার একটি ফ্ল্যাট নিজের নামে লিখে না দেয়ায় আরও এক স্বামীকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানো হয়। এছাড়া তাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। ওই ঘটনায় প্রতারক বৃষ্টির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ মে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় জিডি করা হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে নিজের পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে আফরীন আহমেদ নামে এক আত্মীয়ের বাসায় কিছুদিন থাকেন সুলতানা বৃষ্টি। সেই সুযোগে আত্মীয়ের বাসা থেকে একটি চেকের পাতা চুরি করে অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে।
প্রতারণার শিকার হয়ে সুলতানা পারভীন নীলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন এসএম মহিবুর রহমান নামে এক স্বামী। তদন্ত শেষে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি এসপি বরাবর প্রতিবেদনে দাখিল করেন সিরাজগঞ্জের এডিশনাল এসপি মো. স্নিগ্ধ আকতার।
সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুলতানা পারভীন নীলা নিজেকে কুমারী, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত দাবি করে কখনো সুলতানা পারভীন নীলা, কখনো সুলতানা পারভীন বৃষ্টি আবার কখনো সুলতানা পারভীন নাম ব্যবহার করে আরও পাঁচটি বিয়ে করেছিলেন। এভাবে একাধিক লোকের সঙ্গে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। বৃষ্টির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুই স্বামী মারাও গেছেন।
খুলনা জেলা রেজিস্টারের কার্যালয়ের অনুমোদিত তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুলতানা পারভীনের নিকাহ রেজিস্ট্রিকারী মাওলানা এএসএম নুরুল হক। যিনি বৈধ নিবন্ধিত নিকাহ রেজিস্টার নয়। অবৈধ নিকাহ রেজিস্টার দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে পড়াতেন। বিয়ের পর সংসার চালানোর নামে সুকৌশলে নিজের খরচ বাবদ টাকা, দেনমোহর ও স্বামীর থাকা ফ্ল্যাট নিজের নামে করতে বিভিন্নভাবে অত্যাচার চালাতেন। এমনকি বিয়ের কাবিননামায় টাকার অংক পরিবর্তন করে মোটা অংকের টাকা বসিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী আব্দুল বাকী বলেন, বৃষ্টির বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতারণার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা না নিলে একের পর এক পুরুষকে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নেবে।
এ বিষয়ে সুলতানা পারভীন নীলা বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে বাকী আমাকে বিয়ে করেছে। নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করেন। এরপর বিভিন্ন সময় আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আমার মামলা চলছে। বাকী যেসব অভিযোগ করেছেন সব মিথ্যা। আমার ভাগ্য খারাপ বলে চারটি বিয়ে হয়েছে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

মা-শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

বহু বিবাহের নায়িকা খুলনার নীলার অজানা কাহিনী

Update Time : ১১:১৮:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১
খুলনা প্রতিনিধিঃ
বিয়ের নামে বহু পুরুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ লুট, প্রতারণা, জালিয়াতি ও নিরীহ যুবকদের বিয়ে করে মামলায় ফেলে হয়রানি করছে খুলনার নারী সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টি।
তার ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে গ্রেপ্তার এবং কঠোর শাস্তির দাবি করছেন তার সাবেক স্বামী মো. আব্দুল বাকী।
সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা মো. আব্দুল বাকী মহানগরীর নাজিরঘাট এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার সুলতানুল আলম বাদলের মেয়ে সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে সুলতানা পারভীন বৃষ্টি এ পর্যন্ত ৮ টির অধিক বিয়ে করেছেন। বিয়ে করে কিছুদিন পর সেই স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া এবং তার কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নেওয়াই তার মূল উদ্দেশ্য। নীলার মূল টার্গেট সম্পদশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী যুবক।
প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে তিনি ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলেন টার্গেটকৃত পুরুষদের। আর যুবকরা তার রূপের ফাঁদে পা দিয়ে বিয়ে করে। পরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতেন নিরীহ মানুষদের। এভাবে হয়রানি করে তাদের কাছ থেকেও হাতিয়েনেন টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৯ সালে বৃষ্টির প্রথম বিয়ে হয় মাদারীপুর জেলার হরিকুমারিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম শিকদারের জাপান প্রবাসী ছেলে শাহাবউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে। তখন বয়স ছিল তখন ১৫ বছরেরও কম। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর ঘর থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। তার উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও মালামাল চুরির ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানায় একটি জিডি করেন শাহাবউদ্দিন। যার নম্বর ৭৩৮, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৯। যদিও ২০০১ সালে শাহাবউদ্দিনের সঙ্গে বৃষ্টির বিচ্ছেদ হয়।
দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০০৫ সালের ৬ মে। বৃষ্টির দ্বিতীয় স্বামীর নাম এসএম মুনির হোসেন। তিনি খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা রোড এলাকার মো. মকবুল হোসেনের ছেলে। তখন নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে মুনির হোসেনের সঙ্গে এক লাখ টাকার কাবিননামায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও উগ্র আচরণের শিকার হন স্বামী মুনির। একপর্যায়ে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে এ বাড়ি থেকেও বেরিয়ে যান বৃষ্টি। পরে একই বছরের ১০ ডিসেম্বর তাকে তালাক দেন মুনির হোসেন। যদিও পরবর্তীতে তার কাছ থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করতে ২০০৬ সালে মুনির হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক আদালতে মামলা করেন বৃষ্টি।
সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে ২০০৮ সালের এপ্রিলে বিয়ে করেন। এবার খুলনা নগরীর খালিশপুর ওয়ারলেস ক্রস রোডের আব্দুল মান্নানের ছেলে ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে বিয়ে করেন। তবে শর্ত থাকে বিয়ের পর বৃষ্টি নিজের আত্মীয়ের মাধ্যমে বনিকে ইতালি নেবেন। বিদেশে নেয়ার কথা বলে তৃতীয় স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রকাশ পেতে থাকে বৃষ্টির প্রতারণা। একপর্যায়ে তাদের মধ্যেও বিচ্ছেদ ঘটে।
এ ঘটনায় নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ায় বৃষ্টির বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বামী শেখ মঈনুল আরেফিন বনি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে যথারীতি টাকা আদায় করতে বনির বিরুদ্ধেও খুলনার বিভিন্ন আদালতে একাধিক মামলা করেন প্রতারক বৃষ্টি।
বনির সঙ্গে মামলা চললেও ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টি। সেখানেও দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়নি। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ইফতেখার। এরপর ২০১২ সালে বিয়ে করেন বাগেরহাটের বাসিন্দা কামাল হোসেনকে। ২০১৭ সালে ইতালি প্রবাসী মাদারীপুরের মোহাম্মদ আজিমকে, ২০১৮ সালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মোহাম্মদ রহমানকে এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে খুলনা মহানগরীর নাজির ঘাট এলাকার মো. আব্দুল বাকীকে বিয়ে করেন।
আট নম্বর স্বামী মো. আব্দুল বাকীর সঙ্গে প্রতারণা করায় বৃষ্টির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে চেক ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জে থাকার সময় ঢাকার একটি ফ্ল্যাট নিজের নামে লিখে না দেয়ায় আরও এক স্বামীকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানো হয়। এছাড়া তাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। ওই ঘটনায় প্রতারক বৃষ্টির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ মে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় জিডি করা হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে নিজের পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে আফরীন আহমেদ নামে এক আত্মীয়ের বাসায় কিছুদিন থাকেন সুলতানা বৃষ্টি। সেই সুযোগে আত্মীয়ের বাসা থেকে একটি চেকের পাতা চুরি করে অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেন। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও চুরির অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে।
প্রতারণার শিকার হয়ে সুলতানা পারভীন নীলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন এসএম মহিবুর রহমান নামে এক স্বামী। তদন্ত শেষে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি এসপি বরাবর প্রতিবেদনে দাখিল করেন সিরাজগঞ্জের এডিশনাল এসপি মো. স্নিগ্ধ আকতার।
সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুলতানা পারভীন নীলা নিজেকে কুমারী, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত দাবি করে কখনো সুলতানা পারভীন নীলা, কখনো সুলতানা পারভীন বৃষ্টি আবার কখনো সুলতানা পারভীন নাম ব্যবহার করে আরও পাঁচটি বিয়ে করেছিলেন। এভাবে একাধিক লোকের সঙ্গে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। বৃষ্টির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুই স্বামী মারাও গেছেন।
খুলনা জেলা রেজিস্টারের কার্যালয়ের অনুমোদিত তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সুলতানা পারভীনের নিকাহ রেজিস্ট্রিকারী মাওলানা এএসএম নুরুল হক। যিনি বৈধ নিবন্ধিত নিকাহ রেজিস্টার নয়। অবৈধ নিকাহ রেজিস্টার দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে পড়াতেন। বিয়ের পর সংসার চালানোর নামে সুকৌশলে নিজের খরচ বাবদ টাকা, দেনমোহর ও স্বামীর থাকা ফ্ল্যাট নিজের নামে করতে বিভিন্নভাবে অত্যাচার চালাতেন। এমনকি বিয়ের কাবিননামায় টাকার অংক পরিবর্তন করে মোটা অংকের টাকা বসিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী আব্দুল বাকী বলেন, বৃষ্টির বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতারণার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা না নিলে একের পর এক পুরুষকে ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নেবে।
এ বিষয়ে সুলতানা পারভীন নীলা বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে বাকী আমাকে বিয়ে করেছে। নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করেন। এরপর বিভিন্ন সময় আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আমার মামলা চলছে। বাকী যেসব অভিযোগ করেছেন সব মিথ্যা। আমার ভাগ্য খারাপ বলে চারটি বিয়ে হয়েছে।