সরকার চলমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমকে আরও বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং সম্ভাব্য বিপর্যয়ের সময় ও পরে জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থানা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এ লক্ষ্যে একটি ব্যয় নির্ধারণ করেছে যা ‘অনুসন্ধান, উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা এবং ভূমিকম্প ও অন্যান্য বিপর্যয়ের সময় জরুরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ (তৃতীয় ধাপ)’ শীর্ষক একটি ২ হাজার ২ শ’ ৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার খসড়া প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।

প্রকল্পের ক্ষেত্রটি সমগ্র বাংলাদেশ। তবে অগ্রাধিকার অঞ্চল ঢাকা, চাট্টগ্রাম, সিলেট এবং রংপুর বিভাগ। প্রকল্পটি ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে আশা করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান।

এই কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি আগামীকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে উত্থাপন করার কথা রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন বলেন, এই প্রকল্প খুবই উপযুক্ত যেহেতু বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ এবং এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন ভূমিকম্পের মতো যেকোন বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে জরুরি অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।

মহসিন আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পটি দেশের দুর্যোগপ্রবণ প্রকৃতির কথা বিবেচনা করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে সশস্ত্র বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের জন্য প্রথম দিকে ২২০ কোটি টাকার আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছিল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব বলেন, প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের আওতায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) এবং সিপিপিসহ ১০ টি সরকারি বাহিনী ও এজেন্সিগুলোকে উদ্ধার সরঞ্জামসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এই আধুনিক সরঞ্জামগুলো সংশ্লিষ্ট বাহিনী এবং সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে এবং এভাবে যেকোন বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে দ্রুত সাড়া দিতে সক্ষম হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো উন্নত প্রযুক্তি ভিত্তিক এবং সমন্বিত জরুরি প্রতিক্রিয়া পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের জীবন রক্ষা করা এবং সম্পত্তির ক্ষতি হ্রাস করা।

এছাড়াও, দুর্যোগের সময় ও পরে জরুরি অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পেশাগত দক্ষতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোও এর লক্ষ্য। প্রধান প্রকল্প কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে যেকোন বিপর্যয়ের সময় এবং পরে দ্রুত সাড়া দেয়ার জন্য আধুনিক সরঞ্জাম ক্রয় করা এবং এইভাবে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে তাদের পেশাগত দক্ষতা, নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষনের জন্য কারিগরি ও অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (কিউ এন্ড এম) প্রশিক্ষণ প্রদান করা।

অন্যান্য প্রধান প্রকল্প কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে একটি জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা, যেমন ৪র্থ প্রজন্মের সেলুলার কমিউনিকেশন যা যেকোন বিপর্যয়ের সময় দেশের যেকোন প্রান্তে স্থাপন করা যেতে পারে, জরুরি ত্রাণ বিতরণ এবং উদ্ধার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এবং ব্যক্তিদের আনার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা।

এছাড়া প্রকল্পের অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে জরুরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহারের মাধ্যমে নিজস্ব যোগাযোগ স¤প্রসারণ, লিংক টার্মিনেটিং ইকুইপমেন্ট (এলটিই) ভিত্তিক কোর নেটওয়ার্ক স্থাপন, ইন্টেলিজেন্ট নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ২ লক্ষ ব্যবহারকারীর জন্য এইচএসএস বিলিং সিস্টেম স্থাপন, প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন এবং অন্যান্য কার্যক্রম নিশ্চিত করা।

১১ টি বিভিন্ন জোনের অধীনে ১৩২ ইনোডবি রেডিও সংযোগের পাশাপাশি ক্লাউড সার্ভার এবং অ্যান্টেনা সাবসিস্টেম স্থাপন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা, যেমন ৬২ টি জরুরি রেসপন্স ভেহিকেল (ইআরভি) ইনস্টল করা, ভি-সেটের সঙ্গে সংযুক্ত যোগাযোগ সরঞ্জাম সরবরাহ ও স্থাপন, এলটিই সক্ষম হ্যান্ডসেট, গ্রাহক প্রাইমিসেস সরঞ্জাম (সিপিই) এর মতো যোগাযোগ সরঞ্জাম সরবরাহ ও ইনস্টল করা হচ্ছে ব্যবহারকারীর ডেটা বেস (ইউডিবি) ডংলে, সিম কার্ড।

– বাসস

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে