বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আজ ছিল জন্মদিন। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতির জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে কিশোরগঞ্জে এবার ব্যতিক্রম এক উদ্যোগ নেয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠের কাছে মুক্তমঞ্চে মহাধুমধামে ৭৮ পাউন্ডের কেক কেটে পালন করা হয় বিশেষ দিনটি।
৭৮ পাউন্ডের কেক দেখতে জেলার দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। দিনটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। বিকেলে নরসুন্দা নদীর ওপর নৌকার আদলে নির্মিত মঞ্চে অতিথিদের নিয়ে কেকটি কাটা হয়।
এ সময় রাষ্ট্রপতির ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা সাইমন সাদিক উপস্থিত ছিলেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জন্মদিন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শিক্ষা জীবন শুরু হয় জেলার কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার বাবা হাজি মো. তায়েবউদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুন। এরপর ভৈরব কেবি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। এসএসসি পাস করেন নিকলী উপজেলার গোড়াচাঁদ হাইস্কুল থেকে। কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস করার পর ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে কিশোরগঞ্জ বারে আইন পেশায় যোগ দেন আবদুল হামিদ।
১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। উদয়াস্ত পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে অল্পদিনেই কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের একচ্ছত্র নেতায় পরিণত হন তিনি। একসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সস্নেহ সান্নিধ্য লাভ করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত পছন্দে মাত্র ২৬ বছর বয়সে বিস্তীর্ণ হাওরের দুর্গম এলাকা থেকে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তদানীন্তন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে (ময়মনসিংহ-১৮) সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ভারতের মেঘালয়ে রিক্রুটিং ক্যাম্পে এবং সে সময়ে সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (মুজিব বাহিনী) সাব-সেক্টর কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ।
১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি তার নির্বাচনী এলাকা থেকে একাদিক্রমে ৭ বার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয়ী হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর চরম বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশেও আবদুল হামিদ তার বিশ্বাস এবং আদর্শের জায়গা থেকে তিলমাত্র বিচ্যুত হননি। এ কারণে ১৯৭৬ সালে তাকে কারাবরণ করতে হয়। তবে কোনো নিপীড়নই তাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরাতে পারেনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। পরে তিনি একই সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পান। জাতীয় সংসদে সকল দলের কাছেই তিনি হয়ে ওঠেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদে আবারও তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদ শপথ নেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তিনি স্বাধীনতা পদক লাভ করেছেন।