দেশে চলমান পেঁয়াজ সংকটে আবারও এগিয়ে এসেছে অন্যতম শিল্প গ্রুপ এস আলম। নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, মিসরসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করবে তারা। এক মাসের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব পেঁয়াজ বাজারে ঢুকবে বলে জানিয়েছেন এস আলম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী সালাহউদ্দিন আহম্মদ।

তিনি বলেন, ‘সংকট মোকাবিলায় সরকার ও দেশের চাহিদা মোতাবেক আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে চাই। আগামীকাল রোববার ২০ হাজার টনের এলসি খোলা হবে ব্যাংকে। আমাদের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। প্রয়োজনে কার্গো বিমানে করে দ্রুত পেঁয়াজ এনে দেশের বাজার সামাল দিতেও আগ্রহী আমরা। তবে এক্ষেত্রে বিমানভাড়া জাহাজের চেয়ে অন্তত ছয়গুণ বেশি। তাও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ভারত থেকে সম্প্রতি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশের বাজারে তীব্র সংকট দেখা দেয়। তিনদিনের ব্যবধানেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় দুই থেকে তিনগুণ।

আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রামের বাজার থেকে ওবায়দুল হক পেঁয়াজ কিনেছেন কেজি ৭০ টাকা করে। তিনি বলেন, ‘দাম বেশি হওয়ায় এক কেজির পরিবর্তে আধা কেজি পেঁয়াজ কিনেছি।’

বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে আমদানির অধিকাংশ পেঁয়াজই আসে ভারত থেকে। দেশের হিলি, বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে এসব পেঁয়াজ দেশে আসত। দেশে বর্তমানে প্রতি বছর চাহিদা হল আনুমানিক ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। বাকি পেঁয়াজের সিংহভাগ আমদানি করা হত ভারত থেকে। সামান্য কিছু পেঁয়াজ আসত মিয়ানমার ও চীন থেকে।

কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ নিয়ে আসার বিষয়ে জানা গেছে, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক ও চীন থেকে সমুদ্রপথে জাহাজে করে পেঁয়াজ আনতে মূল সমস্যা হলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রার কন্টেইনার (রিফার) অর্থাৎ কোল্ড স্টোরেজের (যার তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি পর্যন্ত) বুকিং পাওয়া। এ ধরনের বিশেষ কন্টেইনারে সর্বোচ্চ ২৫ টন ধারণক্ষমতা। আর এ ধরনের কন্টেইনার না পেলে পিঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অন্যতম শিপিং প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনার পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী আবীর বলেন, ‘রিফার কন্টেইনারে করে এত বিপুল পরিমাণ পণ্য এক সঙ্গে আনা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। একইসঙ্গে এর ভাড়াও তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এভাবে দ্রুত পেঁয়াজ আনা সম্ভব।’

এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের বাজার স্থিতিশীল করার সকল বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দেশে পেঁয়াজ, তেল, চিনি, গমসহ নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিলেই এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ নিজে উদ্যোগ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজভর্তি পণ্য এনে বাজারজাত শুরু করেন। এতে করে দ্রুত এসব পণ্যের দাম পরে যাওয়ার নজির রয়েছে। এরকম ঝুঁকি নেওয়ার কারণে অনেক সময় লোকসানও গুণতে হয় বলে জানা গেছে।

এর আগে দেশে চিনির বাজার অস্থিরতার সময়েও এস আলম গ্রুপ ন্যায্যমূল্যে চিনি বিক্রি করেছে। ২০১৯ সালে দেশে পেঁয়াজের বাজার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করলে সে সময়ও গ্রুপটি কার্গো বিমান এমনকি যাত্রীবাহী বিমানেও পেঁয়াজ আমদানি করেছিল। পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল।

এছাড়া এর আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে বুকিং মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্প গ্রুপ ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতিপত্র সংগ্রহ করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে ৭৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকদিনের মধ্যে এস আলম গ্রুপের আমদানিতব্য পেঁয়াজের অনুমতি সংগ্রহ ও এলসি খোলা হবে। এক মাসের মধ্যে এস আলম গ্রুপের পেঁয়াজ দেশের বাজারে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন গ্রুপটির কর্মকর্তারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে