মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ আর শান্তি—দুয়ের মাঝামাঝি দোল খাচ্ছে পরিস্থিতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেটিকে বলছেন “১২ দিনের যুদ্ধ”, সেটি আপাতত শেষ হয়েছে একটি নাজুক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে। তবে ইসরায়েল, ইরান ও ট্রাম্প—তিন পক্ষই দাবি করছে, বিরতি তাদের শর্তেই এসেছে। খবর আল জাজিরার।
কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত?
শনিবার গভীর রাতে ইসরায়েলের অনুরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো—ফোর্ডো, নাতানজ ও ইসফাহানে—বিমান হামলা চালায়। ট্রাম্পের ভাষায়, এসব স্থাপনা “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” করা হয়েছে।
এর পাল্টা জবাবে সোমবার ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি ‘আল উদেইদ’-এ হামলা চালায়।
সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছিল আরও বড় সংঘর্ষের। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও ইরান একটি “সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে” সম্মত হয়েছে।
তিনি একে অভিহিত করেন “১২ দিনের যুদ্ধ যা বহু বছর ধরে চলতে পারত এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস করে দিত”।
যুদ্ধবিরতির মাঝেই ফের হামলা
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মাত্র চার ঘণ্টা পর ইসরায়েল দাবি করে, ইরান থেকে ছোড়া দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তাদের আকাশসীমায় ঢোকে। যদিও উভয়টি প্রতিহত করা হয়, কিন্তু ইসরায়েল পাল্টা জবাবে তেহরানের কাছাকাছি একটি রাডার স্টেশন ধ্বংস করে।
এ ঘটনায় ট্রাম্প ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। পরে তিনি বলেন, “দুই দেশ এতদিন ধরে যুদ্ধ করে আসছে, সে কারণে তারা এখন নিজেরাও জানে না কী করছে!”
ইরান অবশ্য তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার অভিযোগ অস্বীকার করে এবং কিছু সময়ের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর হয়।
ইসরায়েল কী অর্জন করল?
ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে। তারা নাতানজ ও ইসফাহান স্থাপনায় হামলা চালিয়ে প্রমাণ করেছে—পূর্বে সিরিয়া ও ইরাকের মতো, এবার ইরানের গহীন অংশেও হামলা সম্ভব।
নেতানিয়াহু বলেন, “বিশ্বনেতারা আমাদের এই পদক্ষেপ ও সেনাবাহিনীর সক্ষমতায় মুগ্ধ।”
তাছাড়া, এটি প্রথমবারের মতো ঘটল যে যুক্তরাষ্ট্র একটি ইসরায়েল-প্রসূত আগ্রাসনে সরাসরি অংশ নিল। পূর্বে শুধু উপকরণ সহায়তা দিলেও এবার হামলায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে।
ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি রক্ষা করতে পারল?
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে তারা ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে। তবে স্বাধীন উৎস থেকে এর সত্যতা যাচাই এখনও হয়নি।
আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “ফোর্ডোর মত স্পর্শকাতর স্থানে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।” তবে ইরান দাবি করছে, তারা পূর্ব থেকেই বিকল্প প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।
এছাড়া, এখনও পর্যন্ত ৪০০ কেজি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের অবস্থানও অস্পষ্ট।
আবার হামলার সম্ভাবনা?
যুদ্ধবিরতি হয়েছে, শান্তিচুক্তি নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি নতুন কোনো পারমাণবিক চুক্তিতে যেতে চায়, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমাত্র কূটনৈতিক আশ্রয় হতে পারে ইরানের জন্য। তবে ইসরায়েল অতীতেও এমন চুক্তি বানচাল করেছে, ভবিষ্যতেও করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরান আপাতত দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। সোমবার দেশটির সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি একটি বিল অনুমোদন করেছে, যাতে আইএইএর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে ট্রাম্প পুনরায় বলেছেন, তিনি ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি চালু করতে দেবেন না।
এই মৌলিক দ্বন্দ্ব অটুট থাকলে, আরও এক দফা যুদ্ধ হবে এবং যেখানে যুক্তরাষ্ট্র আবার জড়াবে। এটি কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র।