করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অফিস, হাটবাজার, দোকানপাট, গণপরিবহন, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ ১১টি ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। এতে কারা কারা মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করবে, সেটিও বলে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আগের নির্দেশনা অনুযায়ী বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সব সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে ছয় মাসের করাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। গত ৩০ মে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ নির্দেশনা জারি করেন।
যে ১১ ক্ষেত্রে মাস্ক পরতেই হবে: মঙ্গলবার জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে
১. সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অফিসে আগত সেবাগ্রহীতারা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
২. সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আগত সেবাগ্রহীতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৪. শপিংমল, বিপণিবিতান ও দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কেট ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৫. হাটবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। মাস্ক পরিধান ব্যতীত ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবেন না। স্থানীয় প্রশাসন ও হাটবাজার কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৬. গণপরিবহনের (সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথ) চালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে আরোহণের আগে যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মালিক সমিতি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৭. গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সব শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মালিকগণ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৮. হকার, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ সব পথচারীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করবে।
৯. হোটেল ও রেস্টুরেন্টে কর্মরত ব্যক্তি এবং জনসমাবেশ চলাকালীন আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধান করবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতি নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে আগত ব্যক্তিদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিশ্চিত করবে।
১১. বাড়িতে করোনা উপসর্গসহ কোনো রোগী থাকলে পরিবারের সুস্থ সদস্যরা মাস্ক ব্যবহার করবেন।
এ পরিপত্র বাংলাদেশে বসবাসরত সবার জন্য প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাস্ক না পরলে জেল-জরিমানা
গত ৩০ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সব সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নং আইন)-এর ধারা ২৪(১), ২ ও ধারা ২৫(১), (ক, খ) এবং ধারা ২৫(২) অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরো বলা হয়েছে, চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালীন জনসাধারণ এবং সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি ব্যতীত কোনোভাবেই বাইরে যাওয়া যাবে না। তবে সর্বাবস্থায় বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এদিকে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর ধারা ২৪(১)-এ বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটিতে সহায়তা করেন বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার কাছে গোপন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ।
২৪ (২) বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
একই আইনের ২৫(১)(ক, খ) এ বলা আছে, মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার ওপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
২৫(২) তে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ার পরেও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭০৯ জন। আর মোট শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ১০ হাজার ৫১০ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার কার্যকর উপায় হিসেবে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক পরিধান করার পরামর্শ দিয়েছেন।