যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষমতা বাতিল করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রশাসনের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। খবর বিবিসির।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম এক্সে (পূর্বে টুইটার) এক পোস্টে জানান, “হার্ভার্ড আইনের প্রতি অনুগত না থাকায় তাদের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের সনদ বাতিল করা হয়েছে।” একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এই ঘটনাকে সতর্কবার্তা হিসেবে গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
হার্ভার্ড এই সিদ্ধান্তকে “অবৈধ” আখ্যা দিয়ে জানায়, “আমরা হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের স্বাগত জানানোর বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ, যারা ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরো দেশকে সমৃদ্ধ করেছে। এই প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতির জন্য ক্ষতিকর।”
বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত একাডেমিক বছরে ৬ হাজার ৭০০ এর বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী হার্ভার্ডে অধ্যয়ন করেছেন, যা মোট ছাত্রসংখ্যার ২৭ শতাংশ।
এই খবরে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থী সারাহ ডেভিস বিবিসিকে বলেন, “আমরা যখন গ্র্যাজুয়েশন করতে যাচ্ছি, ঠিক তার পাঁচ দিন আগেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে। এখন আমাদের অনেকের জন্য ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত।”
হাজারো শিক্ষার্থীর মতো সুইডেনের ৩২ বছর বয়সী ছাত্র লিও গার্ডেন বলেন, “বিদেশি শিক্ষার্থীদের যেন ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের সঙ্গে বিবাদে তাসের পাতা হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা ভয়ঙ্কর রকমের অমানবিক।”
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর তদন্ত শুরু করে এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ছাড় আদায় করে। তবে এপ্রিল মাসে হার্ভার্ড সরকারের চাপে পাল্টা অবস্থান নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়। যদিও হোয়াইট হাউস পরে জানায়, তাদের পাঠানো দাবিসংবলিত চিঠি “ভুলবশত” পাঠানো হয়েছে।
সরকার হার্ভার্ডকে তার নিয়োগ, ভর্তি ও পাঠদানের নীতিমালায় পরিবর্তন আনার দাবি জানায়, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কথিত ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলা করা যায়। তারা প্রতিষ্ঠানটির করছাড় সুবিধা ও সরকারি অনুদান বন্ধের হুমকিও দেয়।
সবশেষে, বৃহস্পতিবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি হার্ভার্ডকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গত পাঁচ বছরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ এবং কথিত “অবৈধ বা সহিংস কর্মকাণ্ডের” তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এদিকে, একইদিনে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত বিদেশি শিক্ষার্থীদের আইনি মর্যাদা বাতিলের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করে, যা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে শিক্ষার্থীদের।
সুইডিশ শিক্ষার্থী গার্ডেন বলেন, “আমরা এখানে এসেছি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, একাডেমিক স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার পরিবেশের কারণে। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশাসন এই মূল্যবোধগুলোকেই হুমকির মুখে ফেলছে।”
“বিদেশি শিক্ষার্থী ছাড়া হার্ভার্ড আর হার্ভার্ড থাকে না,” তিনি যোগ করেন।