Dhaka ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হায়রে সম্মান : শ্রী রাজীব দত্ত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:৫৮:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ মে ২০২২
  • ৫২ Time View

হায়রে সম্মান
শ্রী রাজীব দত্ত

সম্মান পেতে কার না ভালো লাগে তার যদি আবার নাম করণ করা হয়, গুণীজন সংবর্ধনা। না এটা কোন গল্প বা কবিতা নয় বাস্তবের চাহিদায় কিছু কথা বলার প্রয়োজন, বলাটা উচিত বিবেচনাটা পাঠকের বা সেই গুণীজনের ব্যক্তিগত, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে লেখা সকলকে পড়ার অনুরোধ জানাই।

বর্তমানে গজিয়ে ওঠা বেশ কিছু সংগঠনের মূল লক্ষ্য হলো নিজের নাম প্রচার করে অন্য মানুষের থেকে আর্থিক মুনাফা আদায় করে নেওয়া। যেন উচ্ছে, আলু, পটল, মুলো, গুণীজন সংবর্ধনাও হাটে বাজারে বিক্রি হয়, হিসাব করে নেবেন কত কিলো? ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে ভালো নামকরণ করে একটা আকর্ষণীয় ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারলেই মানুষ তাতে এগিয়ে আসবে এটাই সেই ব্যবসাদার এর মূল লক্ষ্য এবং পুঁজি। আর ভাবভঙ্গিতে দেখাতে হবে বিরাট বড় সংগঠন অথচ তার কোন রেজিস্ট্রেশন থাকবেনা আক্ষরিক অর্থে বলা যায়, যার কোন পুঙ্খানুপুঙ্খ অস্তিত্ব নেই। যার মাথা থেকে এই সংগঠন বা সংস্থা ওরফে ব্যবসার চিন্তাভাবনা আসবে এবং বাস্তবায়িত হবে, সে হয়ে যাবে সেই সংগঠনের সর্বেসর্বা। তার কথাই হবে শেষ কথা, আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি বিনা খরচে প্রচার করে নিজেদের সংগঠনের মেম্বার হিসেবে যুক্ত করে নেবে। তিনি ঠিক করবেন কে সম্পাদক কে কোষাধক্ষ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত তিনি নেবে। এতো গেল সংগঠন নামক ব্যবসার পরিকাঠামো পরিকল্পনা। এইবার ব্যবসার মুনাফা কোথা থেকে আসবে। তার জন্য বছরের কিছু সেমিনার হবে, আর সেই সেমিনার কে উদ্দেশ্য করে কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হবে, এবং প্রত্যেক লেখক-লেখিকা কে সেই পত্রিকা ও ডেলিগেট ফিসহ কিনে নিতে হবে। তারপর তো থাকছে সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় জিনিস বিশেষ কোনো মানুষের নাম করে আর না হলে গুণীজন সংবর্ধনা বলে একটা সম্মাননার ব্যবস্থা করা, ব্যাস আর চিন্তা কিসের এবার তো শুধু লাভ আর লাভ। যারা গুণীজন সম্মাননা পাবেন তারা নিজের দেশ হলে মাত্র 5000 টাকা দেবে আর যারা বাইরের দেশ থেকে আসবেন তারা মাত্র 10,000 টাকা দেবে। আর এইভাবে যদি মাত্র পনেরো, কুড়ি জন এর থেকে টাকা তোলা যায় তাহলে তো ওই সেমিনার সুন্দর হবেই থাকবে সুন্দর সুন্দর খাওয়া-দাওয়া এবং খুব সুন্দর ভাবে সেই ব্যবসার নামে সংগঠনের মাথার পকেট টাও বেশ গরম হবে।
হয়তো এবার ভাবছেন আদৌ কি এগুলোর সত্যি। আমি বলব হ্যাঁ এগুলোই চলছে এগুলো সত্যি, যারা টাকা দিচ্ছেন তারা মান-সম্মানের খাতিরে বলতে পারছেন না যে আমি টাকা দিয়ে সম্মাননা অর্জন করেছি। তারাও অবশ্যই প্রতিষ্ঠা এবং গুণীজন তবে প্রতারণার শিকার তো বটেই। হয়তো কখনো তাদের ভালো পদের আসা দেখানো হচ্ছে কিংবা সেমিনারের সামান্য অনুদান বলে অর্থ নেওয়া হয়ে থাকছে। তবে স্টেজে উঠে যারা সম্মাননা পাচ্ছেন গুণীজন হিসেবে এবং যারা নিচে বসে সেই সম্মাননার জন্য আক্ষেপ করছেন বা কোথাও না কোথাও কষ্ট পাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলার সেই ব্যাবসায়িক সংগঠনের আভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তারপর সেই সংগঠন থেকে সম্মাননা পাওয়া বা উক্ত সেমিনারে উপস্থিত থাকা টাই বাঞ্ছনীয়।
তবে সত্তিকারের যারা সংগঠক এবং আন্তরিকভাবে সংগঠন এগিয়ে নিয়ে যায়, তারা কখনও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে কোনো ব্যক্তিকে গুণীজন সংবর্ধনা বা যে কোনো সন্মান প্রদান করেন না। তারা সঠিক মানুষকে নির্বাচিত করে তার হাতে সম্মাননা তুলে দেয় হয়তো তাতে বেশি চাকচিক্য বা সুন্দর খাওয়া-দাওয়া থাকে না কিন্তু থেকে যায় হৃদয়ের ভালোবাসা, সত্তিকারের সন্মান।
তাই সকল সৃজনশীল এবং নব সৃষ্টির কান্ডারী দের একান্ত ভাবে অনুরোধ কোন আর্থিক লেনদেনের বিনিময় নিজের সামান্য সময়ের জন্য পরিচিতি লাভ করার আশায় ব্যবসায়ীক আদর্শে গড়ে ওঠা সংগঠনের পাতা ফাঁদে নিজেই জর্জরিত হবেন না।আগে জানুন সংগঠন সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য আদৌ সেটি কোন রেজিস্টার কিনা, তার কোন অস্তিত্ব আছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ রাখতে হবে।

কারণ, সম্বর্ধনা কখনো হাটে-বাজারে কিলো দরে কিনতে পাওয়া যায় না। সেটি নিজের সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।

আর আমার এই লেখায় হয়তো অনেকেই সহমত হবেন। হয় তারা নিজেরা ঠকেছেন না হলে চোখের সামনে অনেক মানুষকে ঠকতে দেখেছেন। লিখাটি কোন একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে নয় নানান জায়গায় এরকম প্রচুর সংগঠন গজিয়ে ওঠে কিছু আর্থিক মুনাফা লাভের জন্য তাই তাদের থেকে সাবধান থাকুন নিজের সৃষ্টিশীলতার উপর ভরসা রাখুন, কারণ একদিন না একদিন আপনার সৃষ্টি আপনাকে সঠিক সম্মান প্রদান করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

হায়রে সম্মান : শ্রী রাজীব দত্ত

Update Time : ০২:৫৮:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ মে ২০২২

হায়রে সম্মান
শ্রী রাজীব দত্ত

সম্মান পেতে কার না ভালো লাগে তার যদি আবার নাম করণ করা হয়, গুণীজন সংবর্ধনা। না এটা কোন গল্প বা কবিতা নয় বাস্তবের চাহিদায় কিছু কথা বলার প্রয়োজন, বলাটা উচিত বিবেচনাটা পাঠকের বা সেই গুণীজনের ব্যক্তিগত, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে লেখা সকলকে পড়ার অনুরোধ জানাই।

বর্তমানে গজিয়ে ওঠা বেশ কিছু সংগঠনের মূল লক্ষ্য হলো নিজের নাম প্রচার করে অন্য মানুষের থেকে আর্থিক মুনাফা আদায় করে নেওয়া। যেন উচ্ছে, আলু, পটল, মুলো, গুণীজন সংবর্ধনাও হাটে বাজারে বিক্রি হয়, হিসাব করে নেবেন কত কিলো? ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে ভালো নামকরণ করে একটা আকর্ষণীয় ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারলেই মানুষ তাতে এগিয়ে আসবে এটাই সেই ব্যবসাদার এর মূল লক্ষ্য এবং পুঁজি। আর ভাবভঙ্গিতে দেখাতে হবে বিরাট বড় সংগঠন অথচ তার কোন রেজিস্ট্রেশন থাকবেনা আক্ষরিক অর্থে বলা যায়, যার কোন পুঙ্খানুপুঙ্খ অস্তিত্ব নেই। যার মাথা থেকে এই সংগঠন বা সংস্থা ওরফে ব্যবসার চিন্তাভাবনা আসবে এবং বাস্তবায়িত হবে, সে হয়ে যাবে সেই সংগঠনের সর্বেসর্বা। তার কথাই হবে শেষ কথা, আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি বিনা খরচে প্রচার করে নিজেদের সংগঠনের মেম্বার হিসেবে যুক্ত করে নেবে। তিনি ঠিক করবেন কে সম্পাদক কে কোষাধক্ষ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত তিনি নেবে। এতো গেল সংগঠন নামক ব্যবসার পরিকাঠামো পরিকল্পনা। এইবার ব্যবসার মুনাফা কোথা থেকে আসবে। তার জন্য বছরের কিছু সেমিনার হবে, আর সেই সেমিনার কে উদ্দেশ্য করে কিছু পত্রিকা প্রকাশিত হবে, এবং প্রত্যেক লেখক-লেখিকা কে সেই পত্রিকা ও ডেলিগেট ফিসহ কিনে নিতে হবে। তারপর তো থাকছে সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় জিনিস বিশেষ কোনো মানুষের নাম করে আর না হলে গুণীজন সংবর্ধনা বলে একটা সম্মাননার ব্যবস্থা করা, ব্যাস আর চিন্তা কিসের এবার তো শুধু লাভ আর লাভ। যারা গুণীজন সম্মাননা পাবেন তারা নিজের দেশ হলে মাত্র 5000 টাকা দেবে আর যারা বাইরের দেশ থেকে আসবেন তারা মাত্র 10,000 টাকা দেবে। আর এইভাবে যদি মাত্র পনেরো, কুড়ি জন এর থেকে টাকা তোলা যায় তাহলে তো ওই সেমিনার সুন্দর হবেই থাকবে সুন্দর সুন্দর খাওয়া-দাওয়া এবং খুব সুন্দর ভাবে সেই ব্যবসার নামে সংগঠনের মাথার পকেট টাও বেশ গরম হবে।
হয়তো এবার ভাবছেন আদৌ কি এগুলোর সত্যি। আমি বলব হ্যাঁ এগুলোই চলছে এগুলো সত্যি, যারা টাকা দিচ্ছেন তারা মান-সম্মানের খাতিরে বলতে পারছেন না যে আমি টাকা দিয়ে সম্মাননা অর্জন করেছি। তারাও অবশ্যই প্রতিষ্ঠা এবং গুণীজন তবে প্রতারণার শিকার তো বটেই। হয়তো কখনো তাদের ভালো পদের আসা দেখানো হচ্ছে কিংবা সেমিনারের সামান্য অনুদান বলে অর্থ নেওয়া হয়ে থাকছে। তবে স্টেজে উঠে যারা সম্মাননা পাচ্ছেন গুণীজন হিসেবে এবং যারা নিচে বসে সেই সম্মাননার জন্য আক্ষেপ করছেন বা কোথাও না কোথাও কষ্ট পাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলার সেই ব্যাবসায়িক সংগঠনের আভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তারপর সেই সংগঠন থেকে সম্মাননা পাওয়া বা উক্ত সেমিনারে উপস্থিত থাকা টাই বাঞ্ছনীয়।
তবে সত্তিকারের যারা সংগঠক এবং আন্তরিকভাবে সংগঠন এগিয়ে নিয়ে যায়, তারা কখনও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে কোনো ব্যক্তিকে গুণীজন সংবর্ধনা বা যে কোনো সন্মান প্রদান করেন না। তারা সঠিক মানুষকে নির্বাচিত করে তার হাতে সম্মাননা তুলে দেয় হয়তো তাতে বেশি চাকচিক্য বা সুন্দর খাওয়া-দাওয়া থাকে না কিন্তু থেকে যায় হৃদয়ের ভালোবাসা, সত্তিকারের সন্মান।
তাই সকল সৃজনশীল এবং নব সৃষ্টির কান্ডারী দের একান্ত ভাবে অনুরোধ কোন আর্থিক লেনদেনের বিনিময় নিজের সামান্য সময়ের জন্য পরিচিতি লাভ করার আশায় ব্যবসায়ীক আদর্শে গড়ে ওঠা সংগঠনের পাতা ফাঁদে নিজেই জর্জরিত হবেন না।আগে জানুন সংগঠন সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য আদৌ সেটি কোন রেজিস্টার কিনা, তার কোন অস্তিত্ব আছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ রাখতে হবে।

কারণ, সম্বর্ধনা কখনো হাটে-বাজারে কিলো দরে কিনতে পাওয়া যায় না। সেটি নিজের সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।

আর আমার এই লেখায় হয়তো অনেকেই সহমত হবেন। হয় তারা নিজেরা ঠকেছেন না হলে চোখের সামনে অনেক মানুষকে ঠকতে দেখেছেন। লিখাটি কোন একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে নয় নানান জায়গায় এরকম প্রচুর সংগঠন গজিয়ে ওঠে কিছু আর্থিক মুনাফা লাভের জন্য তাই তাদের থেকে সাবধান থাকুন নিজের সৃষ্টিশীলতার উপর ভরসা রাখুন, কারণ একদিন না একদিন আপনার সৃষ্টি আপনাকে সঠিক সম্মান প্রদান করবে।