বহুল আলোচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
খবর রয়টার্সের।
খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়ে সংস্থাটির বিশেষ প্রতিনিধি অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, ‘এমবিএসের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে একঘরে করে রাখতে পারলে একই ধরনের অপরাধ করার কথা যারা চিন্তা করে তারা শিক্ষা পাবেন।’
এর আগে শুক্রকার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সৌদি প্রিন্সই খাসোগি হত্যার নির্দেশদাতা উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা প্রকাশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বাইডেন প্রশাসনের প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া খাসোগিকে আটক বা হত্যার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রিন্স। দুই বছর আগের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর এবারই প্রথম সরাসরি সৌদি যুবরাজকে দায়ী করে মার্কিন সরকার।
সৌদি শাসক গোষ্ঠীর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি ২০১৮ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলস্থ সৌদি কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে গিয়ে নৃশংসভাবে নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের দপ্তরের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা বা আটক করতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।’
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, খাসোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি আরবের ৭৬ নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এসব সৌদি নাগরিক আমেরিকার ভিসা পাবেন না। তবে বাইডেন প্রশাসন এখনই সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে না বলে জানিয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থাগুলো।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ক্রাউন প্রিন্সের বাবা বাদশাহ সালমানের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে সার্বজনীন মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের গুরুত্বের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
মোহাম্মাদ বিন সালমান ও তার বাবা সৌদি বাদশাহ সালমানের সমালোচক হিসেবে পরিচিত খাসোগি জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে আমেরিকায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসি’র শহরতলীতে বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানে বসেই ওয়াশিংটন পোস্টে নিবন্ধ লিখে সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন।
এ হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ঘটনায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সৌদি আরবের একটি আদালত। গত বছর ওই সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়।
সৌদি প্রসিকিউটরদের ভাষ্য মতে, ধস্তাধস্তি করে খাশুগজিকে আটকানো হয় এবং ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তাকে অতিরিক্ত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে তার মৃত্যু হয়। এরপর তার মৃতদেহ কেটে টুকরো টুকরো করে কনস্যুলেটের বাইরে স্থানীয় এক ‘দোসরের’ কাছে দেওয়া হয়।