Dhaka ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সূর্যের আগুন ঝরানো ব্যাটিং-এ ব্যাঙ্গালুরুকে হারিয়ে প্লে-অফে মুম্বাই

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৫৪:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
  • ১৫৫ Time View

মোহাম্মদ সিরাজের করা অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিটি এক্সট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকালেন সূর্যকুমার যাদব, পাঁচ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এ বলটি সীমানা পার হতেই সূর্যের উদযাপন ছিল দেখার মতো, যা নিশ্চিতভাবেই বাড়তি সাহস দেবে আইপিএল ইতিহাসের সফলতম দলটিকে।

দলের জয় নিশ্চিত করা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হেলমেট খুলে ফেলেন সূর্য, নিজের ওপর থাকা আত্মবিশ্বাসের বার্তা ডাগআউটে ছড়িয়ে দিয়ে এমন ভঙ্গিমা করলেন, যাতে বোঝা গেল, ‘ভয় করো না, আমি আছি’; আসলেই ঠিক তাই! রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচটিতে মুম্বাইকে পরম নির্ভরতা দিয়েছে সূর্যর আগুনে ব্যাটিং।

লক্ষ্যটা বড় ছিল না, তবে আবুধাবির মাঠের জন্য আবার খুব ছোটও নয়। এর মধ্যে আবার টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান দিয়েছেন হতাশার পরিচয়।

তবে একদমই বিচলিত হননি তিন নম্বরে নামা সূর্যকুমার যাদব। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদেই ব্যাঙ্গালুরুর দেয়া ১৬৫ রানের লক্ষ্য ৫ উইকেট ও ৫ বল হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলেছে মুম্বাই।

ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা সূর্য খেলেন আইপিএলের নিজের সর্বোচ্চ ৭৯ রানের ইনিংস। মাত্র ৪৩ বলের ইনিংসটিতে ১০ চারের পাশাপাশি ৩টি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন সূর্য। ইনিংসের একপর্যায়ে ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে বচসা হয় সূর্যের। যার জবাবটা আগুনে ব্যাটেই দিয়েছেন তিনি, আর এতে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে কোহলি ও তার দল।

১৬৫ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লে’তে ৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি মুম্বাই। সাজঘরে ফিরে যান ১৯ বলে ১৮ রান করা কুইন্টন ডি কক। ইনিংসের অষ্টম ওভারে আউট হন আরেক ওপেনার ইশান কিশান (১৮ বলে ২৩), দলের রান তখন মাত্র ৫২, জয়ের জন্য ৭৪ বলে করতে হতো ১১৩ রান।

চাপ বাড়িয়ে একাদশ ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ৮ বলে ৫ রান করা সৌরভ তিওয়ারি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ক্রুনাল পান্ডিয়াকে নিয়ে ১৯ বলে ৩৫ রান যোগ করেন সূর্য। যেখানে ক্রুনালের অবদান ১০ বলে মাত্র ১০ রান, বাকি ঝড় তোলেন সূর্য।

দলের জয়ের জন্য সমীকরণতা ৩৭ বলে ৫৮ রান থাকা অবস্থায় আউট হন ক্রুনাল, উইকেটে আসেন তার ছোট ভাই হার্দিক। তিনি উইকেটে থাকেন পাক্কা পাঁচ ওভারে, এই ত্রিশ বলে আসে ৫১ রান, যা প্রায় নিশ্চিত করে দেয় মুম্বাইয়ের জয়। দুই ছক্কার মারে হার্দিক করেন ১৫ বলে ১৭ রান।

হার্দিক-ক্রুনালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দুই জুটিতে সূর্যের অবদান ছিল যথাক্রমে ৯ বলে ২৩ ও ১৫ বলে ৩০ রান। উনিশতম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড, শেষ ওভারের জন্য বাকি থাকে মাত্র ৩ রান। তবে পুরো ওভার নেননি সূর্য, প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিশ্চিত করেন জয়।

এ জয়ের সুবাদে প্লে-অফের টিকিট একপ্রকার নিশ্চিতই বলা চলে মুম্বাইয়ের। সব দলের ১২টি করে ম্যাচ শেষে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে গেছে মুম্বাই। শেষের ম্যাচগুলো অত্যাশ্চর্য কোনো ঘটনা না ঘটলে তাদের বাদ পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ম্যাচ হারলেও, ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে ব্যাঙ্গালুরু।

এদিকে আবু ধাবির শেখ জায়েদ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতেছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। টস জিতে তিনি ব্যাট করার আমন্ত্রন জানান কোহলির দলকে। বিরাাট কোহলিও চেয়েছিলেন, যে কোনো মূল্যে প্রথমে ব্যাট করার।

আমন্ত্রিত হয়ে ব্যাট করতে নেমে জস ফিলিপ এবং দেবদুত পাড্ডিকাল ৭.৫ ওভারেই গড়ে ফেলেন ৭১ রানের জুটি। ২৪ বলে ৩৩ রান করে এ সময় ফিলিপ আউট হয়ে গেলে মড়ক লাগে ব্যাঙ্গালুরুর ইনিংসে।

একপাশে পাড্ডিকাল দারুণ ব্যাটিং করে গেলেও অন্য পাশে আশা যাওয়ার মিছিল অব্যাহত ছিল। ৯ রান করে আউট হয়ে যান বিরাট কোহলি। ১২ বলে ১৫ রান করে আউট হন এবি ডি ভিলিয়ার্স। শিভাম দুবে করেন ২ রান। ক্রিস মরিসের ব্যাট থেকে আসে ৪ রান। গুরকিরাত সিং ১১ বলে অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে। ওয়াশিংটন সুন্দর করেন ১০ রান।

শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর স্কোর ওঠে ১৬৪ রান। মুম্বাইয়ের হয়ে সবচেয়ে ইকনোমি বোলিং করেন জসপ্রিত বুমরাহ। বলতে গেলে একাই তিনি ব্যাঙ্গালুরুর রান আটকে রাখেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। ট্রেন্ট বোল্ট, রাহুল চাহার এবং কাইরন পোলার্ড নেন ১টি করে উইকেট।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

সূর্যের আগুন ঝরানো ব্যাটিং-এ ব্যাঙ্গালুরুকে হারিয়ে প্লে-অফে মুম্বাই

Update Time : ১২:৫৪:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০

মোহাম্মদ সিরাজের করা অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারিটি এক্সট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকালেন সূর্যকুমার যাদব, পাঁচ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এ বলটি সীমানা পার হতেই সূর্যের উদযাপন ছিল দেখার মতো, যা নিশ্চিতভাবেই বাড়তি সাহস দেবে আইপিএল ইতিহাসের সফলতম দলটিকে।

দলের জয় নিশ্চিত করা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হেলমেট খুলে ফেলেন সূর্য, নিজের ওপর থাকা আত্মবিশ্বাসের বার্তা ডাগআউটে ছড়িয়ে দিয়ে এমন ভঙ্গিমা করলেন, যাতে বোঝা গেল, ‘ভয় করো না, আমি আছি’; আসলেই ঠিক তাই! রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচটিতে মুম্বাইকে পরম নির্ভরতা দিয়েছে সূর্যর আগুনে ব্যাটিং।

লক্ষ্যটা বড় ছিল না, তবে আবুধাবির মাঠের জন্য আবার খুব ছোটও নয়। এর মধ্যে আবার টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান দিয়েছেন হতাশার পরিচয়।

তবে একদমই বিচলিত হননি তিন নম্বরে নামা সূর্যকুমার যাদব। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদেই ব্যাঙ্গালুরুর দেয়া ১৬৫ রানের লক্ষ্য ৫ উইকেট ও ৫ বল হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলেছে মুম্বাই।

ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা সূর্য খেলেন আইপিএলের নিজের সর্বোচ্চ ৭৯ রানের ইনিংস। মাত্র ৪৩ বলের ইনিংসটিতে ১০ চারের পাশাপাশি ৩টি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন সূর্য। ইনিংসের একপর্যায়ে ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে বচসা হয় সূর্যের। যার জবাবটা আগুনে ব্যাটেই দিয়েছেন তিনি, আর এতে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে কোহলি ও তার দল।

১৬৫ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লে’তে ৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি মুম্বাই। সাজঘরে ফিরে যান ১৯ বলে ১৮ রান করা কুইন্টন ডি কক। ইনিংসের অষ্টম ওভারে আউট হন আরেক ওপেনার ইশান কিশান (১৮ বলে ২৩), দলের রান তখন মাত্র ৫২, জয়ের জন্য ৭৪ বলে করতে হতো ১১৩ রান।

চাপ বাড়িয়ে একাদশ ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ৮ বলে ৫ রান করা সৌরভ তিওয়ারি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ক্রুনাল পান্ডিয়াকে নিয়ে ১৯ বলে ৩৫ রান যোগ করেন সূর্য। যেখানে ক্রুনালের অবদান ১০ বলে মাত্র ১০ রান, বাকি ঝড় তোলেন সূর্য।

দলের জয়ের জন্য সমীকরণতা ৩৭ বলে ৫৮ রান থাকা অবস্থায় আউট হন ক্রুনাল, উইকেটে আসেন তার ছোট ভাই হার্দিক। তিনি উইকেটে থাকেন পাক্কা পাঁচ ওভারে, এই ত্রিশ বলে আসে ৫১ রান, যা প্রায় নিশ্চিত করে দেয় মুম্বাইয়ের জয়। দুই ছক্কার মারে হার্দিক করেন ১৫ বলে ১৭ রান।

হার্দিক-ক্রুনালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দুই জুটিতে সূর্যের অবদান ছিল যথাক্রমে ৯ বলে ২৩ ও ১৫ বলে ৩০ রান। উনিশতম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড, শেষ ওভারের জন্য বাকি থাকে মাত্র ৩ রান। তবে পুরো ওভার নেননি সূর্য, প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিশ্চিত করেন জয়।

এ জয়ের সুবাদে প্লে-অফের টিকিট একপ্রকার নিশ্চিতই বলা চলে মুম্বাইয়ের। সব দলের ১২টি করে ম্যাচ শেষে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে গেছে মুম্বাই। শেষের ম্যাচগুলো অত্যাশ্চর্য কোনো ঘটনা না ঘটলে তাদের বাদ পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ম্যাচ হারলেও, ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে ব্যাঙ্গালুরু।

এদিকে আবু ধাবির শেখ জায়েদ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতেছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। টস জিতে তিনি ব্যাট করার আমন্ত্রন জানান কোহলির দলকে। বিরাাট কোহলিও চেয়েছিলেন, যে কোনো মূল্যে প্রথমে ব্যাট করার।

আমন্ত্রিত হয়ে ব্যাট করতে নেমে জস ফিলিপ এবং দেবদুত পাড্ডিকাল ৭.৫ ওভারেই গড়ে ফেলেন ৭১ রানের জুটি। ২৪ বলে ৩৩ রান করে এ সময় ফিলিপ আউট হয়ে গেলে মড়ক লাগে ব্যাঙ্গালুরুর ইনিংসে।

একপাশে পাড্ডিকাল দারুণ ব্যাটিং করে গেলেও অন্য পাশে আশা যাওয়ার মিছিল অব্যাহত ছিল। ৯ রান করে আউট হয়ে যান বিরাট কোহলি। ১২ বলে ১৫ রান করে আউট হন এবি ডি ভিলিয়ার্স। শিভাম দুবে করেন ২ রান। ক্রিস মরিসের ব্যাট থেকে আসে ৪ রান। গুরকিরাত সিং ১১ বলে অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে। ওয়াশিংটন সুন্দর করেন ১০ রান।

শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর স্কোর ওঠে ১৬৪ রান। মুম্বাইয়ের হয়ে সবচেয়ে ইকনোমি বোলিং করেন জসপ্রিত বুমরাহ। বলতে গেলে একাই তিনি ব্যাঙ্গালুরুর রান আটকে রাখেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। ট্রেন্ট বোল্ট, রাহুল চাহার এবং কাইরন পোলার্ড নেন ১টি করে উইকেট।