হেলেন কেলারের একটি কথা আছে-‘সুখ আপনিই আসে না, একে তৈরি করে নিতে হয়’।

সাম্প্রতিককালে মনোবিজ্ঞানী আর গবেষকরাও বলছেন অনেকটা সেরকম কথাই। তাদের মতে, দৈনন্দিন জীবনে কিছু আপাত সাধারণ আচরণ বৈশিষ্ট্যই আমাদের সুখী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। আর ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুসারে,আপনি কতটা সুখী তার ওপর নির্ভর করে আপনার ভবিষ্যৎ সুস্বাস্থ্য।

পরিবার, সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী-সবার সাথে আপনার যে সম্পর্ক, তার যথাযথ মূল্যায়ন করুন, সম্পর্কগুলোকে গুরুত্ব দিন। আপনি সুখী হবেন। আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দীর্ঘ গবেষণার পর বলছেন এমন কথা। ৩০ বছর ধরে এক লক্ষ ২০ হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত এ গবেষণাটিতে তাদের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যেমন তাদের আয়, শিক্ষাদীক্ষা, রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সেবামূলক কাজে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয় অধুনালুপ্ত বিশ্বখ্যাত সাময়িকী নিউজউইক-এর একটি রিপোর্টে। রিপোর্টটিতে বলা হয়, সত্যিকার অর্থে তারাই সবচেয়ে বেশি সুখী, যাদের সম্পর্কগুলো তুলনামূলক দীর্ঘস্থায়ী ও পরিতৃপ্তিময়।

দৈনন্দিন রুটিন কাজের বৃত্তে নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। মাঝেমধ্যে অন্যরকম কিছু একটা করুন। নতুন কারো সাথে পরিচিত হোন। রাস্তা দিয়ে চলছেন, অচেনা কোনো পথিকের দিকে সাহায্যের হাতটি কি বাড়িয়ে দেয়া যায়? কিংবা প্রতিদিনের ভারিক্কি গাম্ভীর্য ভুলে হঠাৎ প্রিয় গানের একটি লাইন গেয়ে ওঠার মতো কিছু একটা! নর্থ ক্যারোলিনার ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের পরামর্শটা সেরকমই। তাদের মতে, যারা প্রায়শই চেনা গণ্ডির বাইরে হাঁটতে পারেন, কিছুটা মেলে ধরতে পারেন নিজেদের, তাদের মনের ভাবগতিক ভালো থাকে, তারা আনন্দে সময় পার করেন। আর যারা সবসময় গুটিয়ে রাখেন নিজেদের, তাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ঘটে এর উল্টোটা।

আমেরিকার বিখ্যাত ব্যবসাভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বস-এর উদ্যোগে একবার একটি সমীক্ষা চালানো হয়। এতে একদল স্বেচ্ছাসেবককে বিভিন্ন অংকের কিছু ডলার দেয়া হয়। তাদেরকে দুটি দলে ভাগ করা হয়। একদলকে বলা হয়, তারা নিজেদের প্রয়োজনমতো সেটি খরচ করতে পারে আর অন্যদলকে বলা হয় যে, তারা যেন অর্থটা ব্যয় করে অন্যের জন্যে, অন্যের কল্যাণে। দিন শেষে দেখা গেল, যারা অন্যের কল্যাণে ব্যয় করেছিলেন তারা তুলনামূলক সুখী ও আনন্দিত ছিলেন, সেই ব্যয়ের পরিমাণ যত অল্পই হোক। পরার্থে ব্যয় ওদের দারুণভাবে উজ্জীবিত করে তুলেছিলো।

জীবনে চলার পথে প্রতিদিন কতরকম কিছুই তো ঘটে। এর মধ্যে নিশ্চয়ই থাকে ভালো আর মজার কিছুও। সেগুলো লিখুন। বিস্তারিত লিখুন প্রতিদিন। এভাবে দৈনন্দিন সুখকর ঘটনাগুলো লিখতে লিখতেই আপনি একসময় হয়ে উঠবেন ইতিবাচক আর উদ্যমী। পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পজিটিভ সাইকোলজি সেন্টার পরিচালিত একটি গবেষণায় এর প্রমাণ মিলেছে। তাতে বলা হয়েছে, হতোদ্যম মানুষদের মধ্যে যারা প্রতিদিনকার ভালো বিষয়গুলো নিয়মিত লিখে গেছেন, ছয় মাসের মধ্যেই তাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। তারা হয়ে উঠেছেন ইতিবাচক আর তুলনামূলক সুখী।

সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। আপনি প্রফুল্ল থাকবেন। ২০১২ সালে কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, পানিশূন্যতা এমনকি শরীরে পানির ন্যূনতম অভাবও মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। অবসাদ আর বিষাদগ্রস্ততা ভর করতে পারে আপনার ওপর। আর এটি তুলনামূলক বেশি ঘটে মহিলাদের ক্ষেত্রে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে