রাজশাহী প্রতিনিধিঃ

রাজশাহী মহানগরীর পুরো এলাকা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আসছে। নগরজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় তিনশত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ২৬ মার্চের আগেই পুরো নগরীতে আরও পাঁচশত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। যার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও থাকবে ২০টি ক্যামেরা। এর মধ্যদিয়ে আমরা রাজশাহী মহানগরবাসীর নিরাপত্তাসহ পুরো নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে চাই। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে মহানগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধী সনাক্ত করা সহজ হবে।’

সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে নগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় নিয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক এই উদ্যোগের কথা বলেন।

মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমি ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। দায়িত্ব নেয়ার পর মিট দ্য প্রেসে সাংবাদিকদের নিকট কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতির আলোকে আমি একটি সাইবার ইউনিট গঠন করেছি। কেউ ডিজিটাল ক্রাইম করলেও সেটি আমাদের এই সাইবার ইউনিটের কাছে ধরা খেয়ে যাচ্ছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় ৭০% মামলা ‘ডিসপোসআপ’ (নিষ্পত্তি) করেছি। তবে ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের কিছু মামলা এখন বর্তমানে চলমান রয়েছে।’

সিসি টিভির সাফল্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে নগর পুলিশের সর্বোচ্চ এই কর্তাব্যক্তি বলেন, ‘কিছুদিন আগে রাজশাহীতে বেশ কিছু অপরাধ সংঘঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গত ২২ জানুয়ারি একটি শিশু হারিয়ে গিয়েছিল। সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ১৭টি স্বর্ণের বার ও ৬০ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছিল। সিসি টিভির ফুটেজের মাধ্যমেই আমরা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।

কিশোর গ্যাংক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, ‘রাজশাহীতে কিশোর গ্যাং (বাইক পার্টি) এর দৌরাত্ম্য ছিল। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর অভিভাবকদের অনুরোধে ৫০০ কিশোর গ্যাংয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরী করেছি। এই ডাটাবেজে প্রত্যেক কিশোরের বিস্তারিত তথ্য আমাদের ভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে। এরা কোন জায়গায় চলাফেলা করে, কোথায় ইভটিজিং করে সমস্ত কিছু আমাদের এই ডাটাবেজের মধ্যে রয়েছে। আমার জানামতে, দেশের অন্য কোথাও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে রাজশাহীর মত সফলতা আসেনি।’

ভবিষ্যতে কিশোরদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘কিশোররাই জাতির ভবিষ্যৎ। তারা দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের এই কিশোররা যদি অকালেই বিলীন হয়ে যায় তাহলে আমরা সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই তাদের রক্ষার্থে নতুনভাবে আমার পরিকল্পনা আছে। কিশোরদের জন্য মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম করার জন্য ঢাকা থেকে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের (অধ্যাপক আবু সাঈদ, আসাদুজ্জান নুরের মত ব্যক্তিদের) রাজশাহীতে আমন্ত্রণ জানাবো। এর মাধ্যমে তারা অন্ধকার থেকে আলোর পথ খুঁজে পাবে।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মাদকের ব্যাপারে জিরোটলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। অধিকাংশ কিশোররা এই মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই মাদক তাদেরকে মাঠে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তারা যাতে মাদক থেকে চিরতরে দূরে সরে যায় সেজন্য ইতোমধ্যেই আমি বেশকিছু টূর্ণামেন্টের উদ্বোধন করেছি।’

আবু কালাম বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী উন্নত বিশ্বের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশিং এবং বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে আমরা পুলিশের সেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। আমি আগামীতে রাজশাহী মহানগরবাসীকে বলবো, প্রতিটি মানুষ দরজা ওপেন করে ঘুমাবে। সিসি টিভির মাধ্যমে পুরো রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকা নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা পড়লে কোনো ছিনতাই, রাহাজানী, চুরি-ডাকাতি থাকবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ এখন মানবতার পুলিশ হিসেবে কাজ করছে। আমাদের আইজিপি মহোদয় দায়িত্ব গ্রহণের পর বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে সেবা জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে দিয়েছে এবং পুলিশ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার, পুলিশ হবে জনতার’ এই মূলমন্ত্রে কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গত ৬ মাসের যদি রাজশাহীর অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবোÑ এখানে কোন অপরাধ নেই। শুধু এখন ডমেস্টিক ভায়োলেন্স হয়, নারী নির্যাতন মামলা হয়। আমি মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষণা করেছি। আমি আমার ঘর থেকেই এই কাজ শুরু করেছি। বর্তমানে রাজশাহীতে কোনো পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে জড়িত নেই। কোনো মাদক ব্যবসা নেই,মাদকের কোনো সিণ্ডিকেট নেই। রাজশাহী নগরবাসী যদি আমাকে সহযোগিতা করে তাহলে মেট্রোপলিটনকে একটি মডেল শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, আমি উত্তরবঙ্গের সন্তান। এই শহরকে নিয়ে আমি আলাদা টান অনুভব করি। রাজশাহী হবে সুন্দর ও শান্তির নগরী। এজন্যই প্রতিটি পুলিশ সদস্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমি সেবা করতেই এসেছি। রাজশাহীতে যতদিন থাকবোÑ মেধা, প্রজ্ঞা সবকিছু দিয়েই আমি রাজশাহীবাসীর সেবা করতে চাই।’

উল্লেখ্য, দেশের চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারি কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। পরে বিভিন্ন সময় তিনি গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা, স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ, ঢাকা রেঞ্জে ক্রাইম ও অপারেশনে দায়িত্ব পালনসহ পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে