Dhaka ১১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেট বিমানবন্দর থেকে প্রথম কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে রোববার

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:১৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ১১ Time View

ভারত বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা স্থগিত করে দেওয়ার পর প্রথমবারের মতো রোববার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

শনিবার বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া জানান, সিলেট থেকে প্রথম মালবাহী বিমান চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, যা ঢাকার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় কার্গো পরিচালনাকারী বিমানবন্দর হবে।

গ্যালিস্টেয়ার এভিয়েশনের মাধ্যমে পরিচালিত একটি চার্টার্ড এয়ারবাস এ-৩৩০-৩০০ মালবাহী বিমানের রাববার সন্ধ্যায় স্পেনের উদ্দেশে ৬০ টন তৈরি পোশাক পণ্য নিয়ে রওনা দেবে। ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া জানান, প্রথম ফ্লাইটের জন্য কার্গো চেক-ইন এবং নিরাপত্তা মোতায়েনসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কার্গো ফ্লাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান। ফ্লাইট ছাড়ার আগে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে বেবিচক চেয়ারম্যান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান হবে এবং মালবাহী বিমানের সম্মানে জল কামান স্যালুট প্রদান করা হবে।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া জানান, সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজকে নিজস্ব পণ্য রপ্তানির জন্য উৎসাহিত করতে তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও শিগগিরই কার্গো ফ্লাইট চালু হবে, যা তৃতীয় কার্গো সুবিধাপ্রাপ্ত বিমানবন্দর হবে।

বিমান বাংলাদেশের কার্গো পরিচালক শাকিল মিরাজ বলেন, সিলেটের জন্য আমরা ঢাকা থেকে গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছি এবং ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।বেবিচক এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেসামরিক বিমান চলাচল ও গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং চার্জ হ্রাস করে কার্গো সেবা আরও সাশ্রয়ী করতে কাজ করছে।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, কার্গো সংক্রান্ত চার্জ সহজীকরণ এবং কমানোর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।‘আমরা শিগগিরই কম টারিফ ঘোষণা করব।’

তিনি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) কার্গো টার্মিনালে অতিরিক্ত জনবলও মোতায়েন করা হয়েছে। কারণ তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘বিদ্যমান অবকাঠামো শিগগিরই দুই থেকে তিনগুণ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অর্জন করবে। অন্যদিকে সিলেটের আধুনিকায়নকৃত কার্গো টার্মিনাল ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্গো পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে।’

এইচএসআইএ’র বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এটি চালু হলে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং আঞ্চলিক ট্রানজিট হাবে নির্ভরতা কমবে বলে কর্মকর্তারা আশাবাদী।

তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্গো সক্ষমতা বছরে ২ লাখ টন থেকে বেড়ে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টনে উন্নীত হবে, যেখানে ৩৬,০০০ বর্গমিটার জায়গার একটি বিশেষ কার্গো জোন থাকবে।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘নতুন টার্মিনালে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ও বিস্তৃত সংরক্ষণ সুবিধা স্বাধীন এবং দক্ষ কার্গো পরিচালনা নিশ্চিত করবে, যা রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।’

এ মাসের শুরুতে ভারত বাংলাদেশি পণ্যের বিশেষ করে তৈরি পোশাকের ওপর তাদের বিমানবন্দর হয়ে ট্রানজিটের চার বছরের চুক্তি বাতিল করে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় শুরু হওয়া এই চুক্তির মাধ্যমে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করে দ্রুত এবং তুলনামূলক কম খরচে রপ্তানি সম্ভব হতো।

বাংলাদেশ ফ্রেট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাপ্তাহিক প্রায় ৬শ টন বা ১৮ শতাংশ তৈরি পোশাকের রপ্তানি ভারতীয় রুটে পরিচালিত হতো।

বর্তমানে বাংলাদেশ সাপ্তাহিক প্রায় ৩৪০০ টন পোশাক বিমানে রপ্তানি করে, যেখানে এইচএসআইএ’র কার্গো ভিলেজ দৈনিক ৩০০ টন ধারণক্ষমতার হলেও পিক সিজনে ১২শ টন পর্যন্ত পরিচালনা করে।

বিমানের যাত্রীবাহী ফ্লাইট বর্তমানে এইচএসআইএ’র মোট কার্গো ভলিউমের প্রায় ১৬-১৭ শতাংশ পরিচালনা করে এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেশ কয়েকটি প্রধান বিদেশি ক্যারিয়ারের জন্য গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং সেবাও প্রদান করে।

বর্তমানে এমিরেটস, ক্যাথে প্যাসিফিক, কাতার এয়ারওয়েজ, তুর্কিশ এয়ারলাইন্স এবং ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের মতো বড় এয়ারলাইন্সগুলো কেবলমাত্র এইচএসআইএ থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

Popular Post

সিলেট বিমানবন্দর থেকে প্রথম কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে রোববার

Update Time : ১১:১৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

ভারত বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা স্থগিত করে দেওয়ার পর প্রথমবারের মতো রোববার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

শনিবার বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া জানান, সিলেট থেকে প্রথম মালবাহী বিমান চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, যা ঢাকার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় কার্গো পরিচালনাকারী বিমানবন্দর হবে।

গ্যালিস্টেয়ার এভিয়েশনের মাধ্যমে পরিচালিত একটি চার্টার্ড এয়ারবাস এ-৩৩০-৩০০ মালবাহী বিমানের রাববার সন্ধ্যায় স্পেনের উদ্দেশে ৬০ টন তৈরি পোশাক পণ্য নিয়ে রওনা দেবে। ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া জানান, প্রথম ফ্লাইটের জন্য কার্গো চেক-ইন এবং নিরাপত্তা মোতায়েনসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কার্গো ফ্লাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মেক্সিকোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন সচিব নাসরীন জাহান। ফ্লাইট ছাড়ার আগে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে বেবিচক চেয়ারম্যান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান হবে এবং মালবাহী বিমানের সম্মানে জল কামান স্যালুট প্রদান করা হবে।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া জানান, সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজকে নিজস্ব পণ্য রপ্তানির জন্য উৎসাহিত করতে তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও শিগগিরই কার্গো ফ্লাইট চালু হবে, যা তৃতীয় কার্গো সুবিধাপ্রাপ্ত বিমানবন্দর হবে।

বিমান বাংলাদেশের কার্গো পরিচালক শাকিল মিরাজ বলেন, সিলেটের জন্য আমরা ঢাকা থেকে গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছি এবং ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।বেবিচক এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেসামরিক বিমান চলাচল ও গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং চার্জ হ্রাস করে কার্গো সেবা আরও সাশ্রয়ী করতে কাজ করছে।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, কার্গো সংক্রান্ত চার্জ সহজীকরণ এবং কমানোর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।‘আমরা শিগগিরই কম টারিফ ঘোষণা করব।’

তিনি জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) কার্গো টার্মিনালে অতিরিক্ত জনবলও মোতায়েন করা হয়েছে। কারণ তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘বিদ্যমান অবকাঠামো শিগগিরই দুই থেকে তিনগুণ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অর্জন করবে। অন্যদিকে সিলেটের আধুনিকায়নকৃত কার্গো টার্মিনাল ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্গো পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে।’

এইচএসআইএ’র বহুল প্রত্যাশিত তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এটি চালু হলে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং আঞ্চলিক ট্রানজিট হাবে নির্ভরতা কমবে বলে কর্মকর্তারা আশাবাদী।

তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্গো সক্ষমতা বছরে ২ লাখ টন থেকে বেড়ে ৫ লাখ ৪৬ হাজার টনে উন্নীত হবে, যেখানে ৩৬,০০০ বর্গমিটার জায়গার একটি বিশেষ কার্গো জোন থাকবে।

মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘নতুন টার্মিনালে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ও বিস্তৃত সংরক্ষণ সুবিধা স্বাধীন এবং দক্ষ কার্গো পরিচালনা নিশ্চিত করবে, যা রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।’

এ মাসের শুরুতে ভারত বাংলাদেশি পণ্যের বিশেষ করে তৈরি পোশাকের ওপর তাদের বিমানবন্দর হয়ে ট্রানজিটের চার বছরের চুক্তি বাতিল করে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ওপর ব্যাপক চাপ পড়ে।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় শুরু হওয়া এই চুক্তির মাধ্যমে কলকাতা ও দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহার করে দ্রুত এবং তুলনামূলক কম খরচে রপ্তানি সম্ভব হতো।

বাংলাদেশ ফ্রেট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাপ্তাহিক প্রায় ৬শ টন বা ১৮ শতাংশ তৈরি পোশাকের রপ্তানি ভারতীয় রুটে পরিচালিত হতো।

বর্তমানে বাংলাদেশ সাপ্তাহিক প্রায় ৩৪০০ টন পোশাক বিমানে রপ্তানি করে, যেখানে এইচএসআইএ’র কার্গো ভিলেজ দৈনিক ৩০০ টন ধারণক্ষমতার হলেও পিক সিজনে ১২শ টন পর্যন্ত পরিচালনা করে।

বিমানের যাত্রীবাহী ফ্লাইট বর্তমানে এইচএসআইএ’র মোট কার্গো ভলিউমের প্রায় ১৬-১৭ শতাংশ পরিচালনা করে এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেশ কয়েকটি প্রধান বিদেশি ক্যারিয়ারের জন্য গ্রাউন্ড-হ্যান্ডলিং সেবাও প্রদান করে।

বর্তমানে এমিরেটস, ক্যাথে প্যাসিফিক, কাতার এয়ারওয়েজ, তুর্কিশ এয়ারলাইন্স এবং ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের মতো বড় এয়ারলাইন্সগুলো কেবলমাত্র এইচএসআইএ থেকে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে।