বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাথে ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের ক্রস বর্ডার সংযোগসহ উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ স্থাপন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গনভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত ব্রিফ করেন।

তিনি জানান, একনেক সভায় ৬ হাজার ৬২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২ হাজার ৭১ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৫৯৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অনুমোদিত ৬ প্রকল্পের মধ্যে ২টি নতুন প্রকল্প এবং ৪টি সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করবে। প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)-র কাছ থেকে পাওয়া যাবে।

প্রকল্পের আওতায় সিলেট হতে তামাবিল পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪-লেনে উন্নীতকরণ এবং ঢাকা-সিলেট-তামাবিল করিডোরের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করা হবে।

মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তামাবিল স্থলবন্দর, সিলেটের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে যাতায়াত সহজ হবে এবং পর্যটন বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।’

সারাদেশে আন্ত:জেলা সড়কের উন্নয়ন ও সকল মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীকরণে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, সভায় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে গাছ লাগানোর বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একইসাথে তিনি হাওড় এলাকায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মাছ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মংৎস্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে মান্নান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী বা বন্যার মত দূর্যোগসহ নানা কারণে প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প সংশোধনী আনার প্রবনতা হ্রাস করার চেষ্টা করছি।’

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সুনামগঞ্জে প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা ফ্লাইওভার প্রকল্প অত্যন্ত চমৎকার একটি প্রকল্প এবং এই প্রকল্প নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জের মধ্যে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বিকাশে সহায়ক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-মতলব-মেঘনা-ধনাগোদা-বেড়ীবাঁধ সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প, যার বাস্তবয়ন খরচ ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সারাদেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২২ কোটি ৫২ লাখ। আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের অতিরিক্ত খরচ হবে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এছাড়া, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, যার প্রাক্কলিত বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪১ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে