ইয়োশিহিদে সুগা। বয়স ৭১। এক অজপাড়াগাঁয়ের এক কৃষকের সন্তান। জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। এ যেন সিনেমা বা রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছেন।
বুধবার জাপানের পার্লামেন্টও সরকার প্রধান হিসেবে এ রাজনীতিককেই বেছে নেয়।
একইদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবে তার মন্ত্রিপরিষদের শেষ বৈঠকও সেরেছেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ৮ বছর ক্ষমতা থাকাকালে যা যা অর্জন করেছেন, তার জন্য তিনি গর্বিত। জাপানে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আবে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ রোগে ভুগছেন।
জাপানের পার্লামেন্ট ডায়েটের নিম্নকক্ষে প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার ভোটে সুগা ৪৬২টি ভোটের মধ্যে ৩১৪ জনের সমর্থন পেয়ে জাপানের ৯৯তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর সুগা বলেন, তিনি শিনজো আবের করা ‘অ্যাবেনোমিক্স’ নীতি ধরে রাখবেন। দেশের অর্থনীতিকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কে হচ্ছেন ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান তা নিয়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। অবশেষে ৫৩৪ ভোটের মধ্যে ৩৭৭ ভোট পেয়ে এলডিপি প্রধান নির্বাচিত হন ইয়োশিহিদে সুগা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্নেহধন্য ছিলেন ইয়োশিহিদে সুগা। সহযোগী হিসেবে শিনজো আবের পাশে থেকেছেন দীর্ঘদিন। এছাড়া আবে প্রশাসনের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন সুগা।
ইয়োশিহিদে সুগার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কৃষক পরিবারে। জাপানের হোনসু প্রদেশের তোহোকু অঞ্চলের আকিতা জেলার প্রত্যন্ত ইউজাওয়া গ্রামে। বাবা ওয়াসাবুরো ছিলেন গ্রামের একজন স্ট্রবেরি চাষী। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকে পাহাড় ঘেঁষে গ্রামের মাঠে কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতেন তিনি। হাইস্কুল শেষ করার পরই পড়াশোনার জন্য গ্রাম ছেড়ে রাজধানী টোকিওতে পাড়ি জমান।
বাবার সীমিত আর্থিক সামর্থ্য স্বীকার করেই ভর্তি হন টোকিও হোসেই নামের এক নৈশ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা চালিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করেন। এমন সব কাজ যা অন্য কেউ করতে চাইত না।
কার্ডবোর্ড ফ্যাক্টরি এমনকি মাছের বাজারেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক করেন ইয়োশিহিদে সুগা।
এরপর ১৯৮৬ সালে এলডিপিতে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে ইয়োকোহামার মিউনিসিপ্যাল অ্যাসেম্বলি মেম্বার নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে কানাজাওয়া প্রদেশ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। যোগাযোগ আর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন সুগার একমাত্র সম্বল ছিল কঠোর পরিশ্রম। এই পরিশ্রমের পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
উন্নত চিন্তা, পরিশীলিত আচরণ ও গুণাবলি আর কঠোর অধ্যবসায়ের ওপর ভর করেই এক অসম্ভব পথে যাত্রা ছিল তার। যিনি আজ কৃষকপুত্র থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী।