Dhaka ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সিগনালগেট’ ইস্যুতে তদন্তের দরজা বন্ধ করল হোয়াইট হাউস

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:০৮:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫
  • ৯ Time View

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বাণিজ্যিক মেসেজিং অ্যাপ সিগনালে ভুলবশত যুদ্ধ পরিকল্পনা শেয়ার হওয়ার সাম্প্রতিক বিতর্ক থেকে তারা এগিয়ে চলেছে এবং ‘মামলাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে’।

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার (৩১ মার্চ) হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আর যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এসব পদক্ষেপের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

লেভিট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘এগিয়ে যাচ্ছে’। তার এই বক্তব্যের ফলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ—যিনি দ্য আটলান্টিকের সম্পাদক জেফ্রি গোল্ডবার্গকে ওই গ্রুপ চ্যাটে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ—যিনি সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ম্যাডেলিন ডিন রিপাবলিকানদের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা ‘চিন্তার দুর্বলতা’ প্রদর্শন করছে এবং ‘সিগনালগেট’ কেলেঙ্কারির ভুলগুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে চাচ্ছে।

এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে ম্যাডেলিন ডিন লিখেছেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সংবেদনশীল সামরিক পরিকল্পনার ভুল ব্যবস্থাপনা ছিল এক বিশাল ব্যর্থতা”। “রিপাবলিকানরা এখন ‘হোয়াট-অ্যাবাউট-ইজম’-এ মেতে আছে। এখনই সময় জবাবদিহির, এখনই সময় সত্য প্রকাশের।”

হোয়াইট হাউস যখন এই বিতর্কিত অধ্যায়টি বন্ধ করার চেষ্টা করছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুথিদের প্রতি তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গাজার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েল ও লোহিত সাগরের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের টার্গেট করেছে এবং ট্রাম্প জানিয়েছেন যে তিনি তাদের ওপর আরও কঠোর হামলা চালাবেন।

হুথি নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, মার্কিন হামলায় তাদের সামরিক সক্ষমতা নষ্ট হয়নি বরং এতে কেবল বেসামরিক নাগরিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন।

“হুথিদের জন্য সিদ্ধান্ত পরিষ্কার: আমাদের জাহাজগুলোর দিকে গুলি ছোড়া বন্ধ করলেই আমরা তাদের দিকে গুলি ছোড়া বন্ধ করব,” ট্রাম্প এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেন। “তা না হলে, এটি কেবল শুরু মাত্র—এবং প্রকৃত কষ্ট এখনও আসেনি, তাদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরানের জন্য।”

ইরানের পাল্টা হুঁশিয়ারি

ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা যদি পরমাণু অস্ত্র চুক্তিতে সম্মত না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর ব্যাপক হামলা চালাবে।

এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, “তারা আমাদের আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে, যা আমরা খুব সম্ভাব্য বলে মনে করি না। তবে তারা যদি কোনো দুঃসাহস দেখায়, তাহলে অবশ্যই তাদের কঠোর পাল্টা আঘাতের মুখে পড়তে হবে।”

সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা সুইজারল্যান্ডের এক কূটনীতিককে তলব করেছে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ওয়াশিংটনের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে।

‘কোনো নির্দিষ্ট অগ্রগতি নেই’

এদিকে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজার পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।

সৌদি আরব সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা আয়োজন করলেও, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কোনো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা নেই। এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি খুবই রাগান্বিত, আমি প্রচণ্ড বিরক্ত।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আমি দেখতে পাই যে রাশিয়া দায়ী, তাহলে রুশ তেলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব।”

রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মস্কো ইউক্রেন সংকট সমাধানের বিষয়ে কাজ করছে, তবে এখনও কোনো ‘নির্দিষ্ট অগ্রগতি’ হয়নি।

পেসকভ আরও জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় এখনও আগ্রহী এবং প্রয়োজন হলে সেই বৈঠক আয়োজন করা যেতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Raj Kalam

‘সিগনালগেট’ ইস্যুতে তদন্তের দরজা বন্ধ করল হোয়াইট হাউস

Update Time : ০৬:০৮:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল ২০২৫

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বাণিজ্যিক মেসেজিং অ্যাপ সিগনালে ভুলবশত যুদ্ধ পরিকল্পনা শেয়ার হওয়ার সাম্প্রতিক বিতর্ক থেকে তারা এগিয়ে চলেছে এবং ‘মামলাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে’।

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার (৩১ মার্চ) হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আর যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এসব পদক্ষেপের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

লেভিট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘এগিয়ে যাচ্ছে’। তার এই বক্তব্যের ফলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ—যিনি দ্য আটলান্টিকের সম্পাদক জেফ্রি গোল্ডবার্গকে ওই গ্রুপ চ্যাটে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ—যিনি সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ম্যাডেলিন ডিন রিপাবলিকানদের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা ‘চিন্তার দুর্বলতা’ প্রদর্শন করছে এবং ‘সিগনালগেট’ কেলেঙ্কারির ভুলগুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে চাচ্ছে।

এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে ম্যাডেলিন ডিন লিখেছেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সংবেদনশীল সামরিক পরিকল্পনার ভুল ব্যবস্থাপনা ছিল এক বিশাল ব্যর্থতা”। “রিপাবলিকানরা এখন ‘হোয়াট-অ্যাবাউট-ইজম’-এ মেতে আছে। এখনই সময় জবাবদিহির, এখনই সময় সত্য প্রকাশের।”

হোয়াইট হাউস যখন এই বিতর্কিত অধ্যায়টি বন্ধ করার চেষ্টা করছে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুথিদের প্রতি তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গাজার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েল ও লোহিত সাগরের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের টার্গেট করেছে এবং ট্রাম্প জানিয়েছেন যে তিনি তাদের ওপর আরও কঠোর হামলা চালাবেন।

হুথি নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, মার্কিন হামলায় তাদের সামরিক সক্ষমতা নষ্ট হয়নি বরং এতে কেবল বেসামরিক নাগরিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন।

“হুথিদের জন্য সিদ্ধান্ত পরিষ্কার: আমাদের জাহাজগুলোর দিকে গুলি ছোড়া বন্ধ করলেই আমরা তাদের দিকে গুলি ছোড়া বন্ধ করব,” ট্রাম্প এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেন। “তা না হলে, এটি কেবল শুরু মাত্র—এবং প্রকৃত কষ্ট এখনও আসেনি, তাদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরানের জন্য।”

ইরানের পাল্টা হুঁশিয়ারি

ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা যদি পরমাণু অস্ত্র চুক্তিতে সম্মত না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর ব্যাপক হামলা চালাবে।

এর জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, “তারা আমাদের আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে, যা আমরা খুব সম্ভাব্য বলে মনে করি না। তবে তারা যদি কোনো দুঃসাহস দেখায়, তাহলে অবশ্যই তাদের কঠোর পাল্টা আঘাতের মুখে পড়তে হবে।”

সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা সুইজারল্যান্ডের এক কূটনীতিককে তলব করেছে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ওয়াশিংটনের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে।

‘কোনো নির্দিষ্ট অগ্রগতি নেই’

এদিকে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজার পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।

সৌদি আরব সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা আয়োজন করলেও, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কোনো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা নেই। এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি খুবই রাগান্বিত, আমি প্রচণ্ড বিরক্ত।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আমি দেখতে পাই যে রাশিয়া দায়ী, তাহলে রুশ তেলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব।”

রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মস্কো ইউক্রেন সংকট সমাধানের বিষয়ে কাজ করছে, তবে এখনও কোনো ‘নির্দিষ্ট অগ্রগতি’ হয়নি।

পেসকভ আরও জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় এখনও আগ্রহী এবং প্রয়োজন হলে সেই বৈঠক আয়োজন করা যেতে পারে।