আশরাফুল ইসলাম সুমন,সিংড়া:
উপজেলা সেচ কমিটি থেকে লাইসেন্স গ্রহন না করেই সরকারের বিধি অমান্য করে গভীর নলকূপ সীমানার মধ্যে মটার, অগভীর নলকুপ স্থাপনের হিড়িক পড়েছে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নে কুড়িপাকিয়া ধাপকুড়াইল মৌজার জে.এল নং ১০২ ও ৫২১ দাগের জমিতে ২০০৪ সালে সরকারি বিধি মোতাবেক অনুমতিক্রমে কুড়িপাকিয়া গ্রামের কৃষক ফেরদৌস আলী (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ স্থাপন করেন।
এরপর থেকেই কৃষক ফেরদৌস শান্তিপূর্ণ ভাবে পানির সেচ কাজ পরিচালনা করে আসছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি গভীর নলকূপটির চারপাশের ২০০০ ফিটের মধ্যে মটার, অগভীর নলকূপ ও ১২০০ ফিটের মধ্যে গভীর নলকূপ স্থাপনের কোনো নিয়ম নেই। সরকারের বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে ধাপকুড়াই শল্ল্যাপাড়া গ্রামের লুৎফর আলীর ছেলে লিটন একই গ্রামের হযরত আলীর ছেলে ঈমান, খোরশেদ ও হাটমুরশন গ্রামের মৃত আসকান আলীর ছেলে আকরাম, আখের আলী, আক্কাস, হবিবর, ভূঁইয়া মাশিন্দা গ্রামের মফিজের ছেলে ফেরদাউস, আনোয়ার,বাবলু, খোরশেদসহ ভাড়া করা ১৫/২০জন ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে কৃষক ফেরদৌস আলীর গভীর নলকূপ সীমানার মধ্যে অনাধিকার প্রবেশ করে জোরপূর্বক মটার (অগভীর) স্থাপন করার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে কৃষক ফেরদৌস আলীসহ গভীর নলকূপের সদস্যরা মটার বসাতে নিষেধ করতে গেলে প্রতিপক্ষরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে নলকূপ মালিক ও সদস্যদের সাথে মারমূখি আচরণ করাসহ হুমকি প্রদান করে প্রতিপক্ষরা।
অবৈধ মটার স্থাপনকারীরা উশৃঙ্খল প্রকৃতির হওয়ায় এলাকার লোকজনদের কথায় তারা কর্ণপাত করেনা। বিষয়টি নিয়ে গ্রামের লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো মুহুর্তে চাপা ক্ষোভের উত্তেজিত প্রতিফলন ঘটতে পারে।
অন্যদিকে, উপজেলার সুকাশ ইউপি’র ধাপকুড়াই মৌজার শল্ল্যাপাড়া মাঠে ২৫০ বিঘা জমির জন্য সরকারি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের ১টি গভীর নলকূপ স্হাপন করা হয় প্রতিটি স্কিমে ২৫০ বিঘা জমি থাকার কথা থাকলেও সেখানে সেচপ্রকল্পের বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সংযোগ না নিয়া আবাসিক বিদ্যুতের সংযোগ থেকে লাইন নিয়া প্রায় ১০টি মতো লাইসেন্স বিহীন সাবমার্চিবল (মটর) দিয়ে জমিতে পানি সেচ করিতেছে। এতে করে গভীর নলকূপের সীমানায় মটার স্থাপনকে কেন্দ্র করে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলেও এলাকাবাসী এমন মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, উপজেলাজুড়ে
বেআইনী ভাবে লাইসেন্স বিহীন সাবমার্চিবল, মটর ও নলকূপ স্থাপনের একাধিক অভিযোগ হলেও উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোনো তদারকি নেই। ভূক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুফল পায়নি।
উপজেলা সেচ কমিটির নিকট অবৈধ নলকূপ স্থাপনের বিষয়টি মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করে বৈধ নলকূপ লাইসেন্স গ্রহিতারা দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন। বিষয়গুলো জেনেও না জানার পক্রিয়ায় লিপ্ত রয়েছেন সেচ কমিটির কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ তুলেছেন ভূক্তভোগীরা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে নলকূপ স্থাপনের দ্বন্দ্বের ফলে ধান চাষাবাদী জমি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারন কৃষকেরা। অবৈধভাবে স্থাপন করা লাইসেন্স বিহীন মটার, সাবমার্চিবল ও অগভীর নলকূপ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তাই উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগীরা।
এপ্রসঙ্গে বিএমডিএ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, অবৈধভাবে লাইসেন্স বিহীন গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন বা মটার স্থাপন করা যাবেনা। লাইসেন্সকৃত গভীর নলকূপের সীমানার মধ্যে কোনো ধরনের সেচপাম্প স্থাপন করা বেআইনী।
যেসকল ব্যক্তি সরকারের বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে লাইসেন্স বিহীন নলকূপ স্থাপন বা অন্যের লাইসেন্সকৃত নলকূপের সীমানায় মটার, সাবমার্চিবল স্থাপন করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
একই প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম সামিরুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাইসেন্সকৃত গভীর নলকূপের সীমানায় লাইসেন্স বিহীন অগভীর নলকূপ স্থাপন কাজ দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হবে। নিষেধ অমান্য করে কেউ যদি জোরপূর্বক পুনরায় স্থাপনের চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।