নিজস্ব প্রতিবেদক:
দু’বছর পর দেশে মুক্তমনে কোরবানীর ঈদ উদযাপিত।
মুসলমানদের অন্যতম বড় এই ধর্মীয় উৎসব বিগত দুই বছর করোনা অতিমারীর বিধিনিষেধে পালিত হয়েছে, যা এবার ছিল না। তাই রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহে হয়েছে প্রধান জামাত। ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে যথারীতি কয়েকটি ঈদের জামাত হয়। গত দু’বছর করোনার আগ্রাসন থেকে মুক্তি ছিল স্রষ্টার কাছে বড় প্রার্থনা, এবার বৈশ্বিক সংকট থেকে মুক্তি এবং দেশ-জাতির উন্নয়ন ও মঙ্গল কামনা প্রাধান্য পায়।
ঈদের সকালে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়া অনেকের কাছে এমন সৌখিন আকাংখা যে রাজধানীর বাইরের এলাকা থেকেও চলে আসেন এখানে। এবারের কোরবানীর ঈদে জাতীয় ঈদগাহে ৩৫ হাজার মুসল্লীর নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়, যদিও কড়া রোদের উত্তাপে অংশগ্রহণ ছিল তারও অনেক কম।
জামাত শুরু হয় সকাল ৮টায়। অবশ্য অনেক আগে থেকে জাতীয় ঈদগাহে মুসলীরা সমবেত হতে থাকেন। এখানে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গসহ সাধারণ মানুষও এক আয়োজনে ঈদের নামাজ পড়েন। তাই কড়া নিরাপত্তা থাকে। রাষ্ট্রপতি এবার জাতীয় ঈদগাহের জামাতে যোগ না দিলেও এসেছেন প্রধান বিচারপতি, ঢাকার মহানগরীর দুই মেয়রসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। নিরাপদ ও সচেতন ঈদ উদযাপন ছিল মেয়রদের ভাবনায়।
জাতীয় ঈদগাহের জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মওলানা রুহুল আমিন। এখানের খুতবা এবং মোনাজাতে যে কোন সংকট থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার প্রার্থনা প্রাধান্য পায়।
জাতীয় ঈদগাহের অদূরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে সকালজুড়ে ঈদের পাঁচটি জামাত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লীরা অংশ নেন। জাতীয় সংসদ ভবনেও হয় ঈদের জামাত। এছাড়াও মহানগরীর মসজিদ-ময়দানে অগণিত ঈদ জামাতে লাখো লাখো মুসল্লী নামাজ পড়েন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে। আত্মীয় স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশির সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।’
এক ভিডিও বার্তায় ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদুল আজহা মানে ত্যাগের উৎসব। আসুন, ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঈদুল আজহার আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেই।’
মুসলমান সম্প্রদায় হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান আত্মত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে কোরবানি দেওয়া হলেও ঈদের পর দুই দিন, অর্থাৎ জিলহজ মাসের ১১ ও ১২ তারিখেও পশু কোরবানির ধর্মীয় বিধান রয়েছে।