সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ছড়ানো হচ্ছে গুজব। ধর্মের অপব্যবহারে একশ্রেণীর মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব রটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
এমনকি বিদেশ থেকেও গুজব রটানো হচ্ছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় ডিজিটাল মাধমে গুজবের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন আলেম ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
ঘটনাটা সাম্প্রতিক। ইসলাম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে জুয়েল নামে এক ব্যক্তিকে প্রথমে পিটিয়ে হত্যা ও তার মরদেহে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
আর গত ২ নভেম্বর কুমিল্লা মুরাদনগরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানি ছড়িয়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৬টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
দুটি ঘটনায় মামলা হয়েছে, গ্রেফতারও করা হচ্ছে আসামীদের।
সম্প্রতি ফেসবুক, ইউটিউবে সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে নানা ধরনের গুজব রটানো হচ্ছে। দেশের বাইরে থেকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক ভিডিও তৈরি করে ছড়ানো হচ্ছে।
অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি বলছে, গুজব-ধর্মীয় উস্কানী ছড়াচ্ছে এরকম শতাধিক ফেসবুক আইডি আর পেজের ওপর নজরদারী করা হচ্ছে।
সিআইডি সাইবার ইন্টিলিজেন্সের বিশেষ পুলিশ সুপার মো: রেজাউল মাসুদ বলেন, মামলার আসামী কিন্তু তারা বিদেশে অবস্থান করছে। তারা দেখছে যে এখন এটাই আমার একটা হাতিয়ার। আমি যদি একটা কথা লিখি এবং আমার কথাটা প্রচার পাবে, প্রকাশ পাবে। এতে তাকে যেমন হাইলাইট করা হলো এবং সেও মনে করলো যে, আমি সরকার বিরোধী একটা ভূমিকা রাখলাম। এসমস্ত আইডি আমরা সনাক্ত করেছি। এর সংখ্যা হয়তো শতাধিক হতে পারে।
কঠোর অবস্থানে আছে ডিএমপিও।
ডিএমপি ডিসি (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানান, তথ্যের সূত্রতা কোথায় বা এটা আদৌ সঠিক হওয়া সম্ভব কিনা সেগুলো যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন বলে মনে করি। এই ধরনের প্রোপাগান্ডা যারা চালাচ্ছে তাদেরকে আমরা সনাক্ত করার চেষ্টা করছি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অপপ্রচার জাতির জন্য হুমকি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মাহমুদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ধর্মীয় উস্কানিসহ দেশ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধান, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উপর ভুয়া প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন, ভুল তথ্য প্রচার করছেন এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সেনাপ্রধান এবং তার অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও দায়িত্ব পালন করে যাবে।
আলেমরাও বলছেন, গুজব সমাজের ব্যাধি। যারা ধর্মের অপব্যবহার করে এই অপকর্ম করছেন তারা ইসলামের শত্রু বলেও মনে করেন তারা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মিডিয়া সেলের ইনচার্জ মাওলানা ফকরুল আশিকী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ মসজিদ। কোন মসজিদের ইমাম কি এই কথা তার মিম্বর থেকে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছে- অমুক জায়গায় এটা হলেই তুমি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দাও। কখনওই কিন্তু এটা করেনি, ইসলামে এটা এলাউও করে না, ইসলাম এটাকে হারাম ঘোষণা করেছে। কোরআনের দ্বারা প্রমাণিত, হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত এবং আল্লাহর রাসূলের কথা থেকে সেটা বার বার প্রমাণ হয়।
সঠিকভাবে যাচাই না করে যে কোনো তথ্য বিশ্বাস না করার আহবান জানান বিশ্লেষকরা।